শুধু নির্যাতনের চিহ্ন নয়, দানবীয় আঘাতের যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে আছি: কিশোর

Kishor1
কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর। ছবি: স্টার

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে থাকার সময় তার ওপর চলা নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছেন কার্টুনিস্ট আহমেদ কবীর কিশোর।

দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি আজ রোববার বলেছেন, ‘আঘাত করে আমার কান ফাটিয়ে দেওয়া হয়। ওই কানে বিশেষ ধরনের একটি যন্ত্র বসানো হয়েছে। পায়ের ব্যথায় এখনো ঠিকমত হাঁটতে পারি না। চোখে একটি অপারেশন হয়েছে। ...শুধু নির্যাতন-আঘাতের চিহ্ন নয়, দানবীয় আঘাতের যন্ত্রণা নিয়েই বেঁচে আছি।’

তবে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তিন চিকিৎসকের মেডিকেল বোর্ড কার্টুনিস্ট কিশোরের ওপর নির্যাতনের ‘কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি’ বলে আদালতে প্রতিবেদন দিয়েছেন।

এই প্রতিবেদনের ব্যাপারে জানতে চাইলে কিশোর টেলিফোনে ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘দেখেন, এখানে আমি কী বলব? আমার কিছু বলার নেই। আমাকে যখন ধরে নিয়ে যায়, তখন আমি সুস্থ ছিলাম। একজন সুস্থ সবল কর্মঠ মানুষ পরিশ্রম করে এ দেশে বেঁচে ছিলাম। এখন আমার যা যা সমস্যা হয়েছে নির্যাতন করার কারণে হয়েছে। কীভাবে নির্যাতন করা হয়েছে, তা আমি জামিনে মুক্ত হওয়ার পর গণমাধ্যমের সামনে বিস্তারিত বলেছি। আমার বলা একটি কথাও অসত্য না। ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছি। সেখানে উন্নতমানের যন্ত্রপাতি দিয়ে আমাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসা করা হয়েছে।’

‘আঘাত করে আমার ফাটিয়ে দেওয়া কানে বিশেষ ধরনের একটি যন্ত্র বসানো হয়েছে। তবুও কান কিন্তু পুরোপুরি ঠিক হয়নি। কোনো সুস্থ মানুষের কানে এমন যন্ত্র বসানো হয়? কোনোদিন শুনেছেন? কানের ভেতরে সেই যন্ত্র তো এখনো আছে। ল্যাবএইডের ডাক্তাররা পরীক্ষা করেছে, আঘাত অনুযায়ী চিকিৎসা দিয়েছে। এখনো চিকিৎসার মধ্যেই আছি। পায়ের ব্যথায় এখনো ঠিকমত হাঁটতে পারি না। পায়ের ব্যথা তো আঘাতের কারণেই। চোখে একটি অপারেশন হয়েছে, সম্ভবত আরও একটি অপারেশন করতে হবে। শুধু নির্যাতন-আঘাতের চিহ্ন নয়, দানবীয় আঘাতের যন্ত্রণা নিয়েই বেঁচে আছি। মেডিকেল বোর্ড কেন এসব দেখতে পেলেন না, কেন আঘাতের চিহ্ন খুঁজে পেলেন না, তারা বলতে পারবেন। এ বিষয়ে আমার প্রতিক্রিয়া দেওয়া হবে’, বলেন তিনি।

আদালত সূত্র বলছে, গত ২০ মার্চ ঢামেক হাসপাতালের নাক-কান-গলা (ইএনটি) বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. শেখ নুরুল ফাত্তাহ রুমি, অর্থোপেডিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহকারী অধ্যাপক ডা. ফখরুল আমিন খান ও মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. হাফিজ সর্দার প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, কার্টুনিস্ট কিশোরের শরীরে ‘নির্যাতনের চিহ্ন’ পাওয়া যায়নি।

গত বছরের মে মাসে কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর ও লেখক মুশতাক আহমেদকে রাজধানীর কাকরাইল ও লালমাটিয়া থেকে আটক করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। কিশোর ও মুশতাকসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রমনা থানায় মামলা হয়।

৩০০ দিন কারাবন্দী থাকার পর গত ৩ মার্চ কিশোরের জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন আদালত। এর আগে, ছয় বার আদালতে তার জামিন আবেদন নাকচ হয়েছিল। গত ৪ মার্চ জামিনে মুক্ত হয়ে তার ওপর চলা ভয়াবহ নির্যাতনের কথা দ্য ডেইলি স্টারকে সবিস্তারে জানিয়েছিলেন কিশোর।

 

আরও পড়ুন:

কার্টুনিস্ট কিশোরের শরীরে ‘নির্যাতনের চিহ্ন’ পায়নি মেডিকেল বোর্ড

সজোরে আঘাত...ইলেকট্রিক শক...

নির্যাতন করা হয়েছে, এখন হাসপাতালে যাচ্ছি: কিশোর

১০ মাস পর মুক্তি পেলেন কার্টুনিস্ট কিশোর

অবশেষে জামিন পেলেন কার্টুনিস্ট কিশোর

মুশতাক আমার ভাই

কিশোরের জামিন আদেশ ৩ মার্চ

কিশোরকে নির্যাতনের অভিযোগ: সেশন কোর্টে আবেদন করার নির্দেশ

কার্টুনিস্ট কিশোরের রিমান্ড নামঞ্জুর

মুশতাকের মৃত্যুর পর কিশোরের জীবন নিয়ে শঙ্কা

কার্টুনিস্ট কিশোরকে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞদের

কারাবন্দি কার্টুনিস্ট কিশোর পেলেন রবার্ট রাসেল কারেজ অ্যাওয়ার্ড

কার্টুনিস্ট কিশোর, লেখক মুশতাক গ্রেপ্তার

কিশোর ও মুশতাকের জামিন শুনানিতে অপরাগতা জানিয়েছেন ভার্চুয়াল আদালত

মুশতাক গতকালও জামিন পাননি, আজ কারাগারে মারা গেলেন

Comments

The Daily Star  | English

Eid meat: Stories of sacrifice, sharing and struggle

While the well-off fulfilled their religious duty by sacrificing cows and goats, crowds of people -- less fortunate and often overlooked -- stood patiently outside gates, waiting for a small share of meat they could take home to their families

12h ago