লালমনিরহাট-মোগলহাট রুট

একদা এখানে রেললাইন ছিল, ট্রেনও চলতো

লালমনিরহাট-মোগলহাট রেলরুটের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে নয় কিলোমিটারের রেললাইন ও পাথর চুরি হয়ে গেছে। ছবি: এস দিলীপ রায়/ স্টার

লালমনিরহাট সদর উপজেলার সীমান্তবর্তী লালমনিরহাট-মোগলহাট রেলরুটটি ঐতিহ্যবাহী। প্রায় ১০ কিলোমিটার এই রেলরুট দিয়ে একসময় ভারতের সঙ্গে ট্রেন যোগাযোগ ছিল।

এই রুট দিয়ে ভারতের আসাম থেকে ট্রেনে কয়লা আনা হতো বাংলাদেশে। স্বাধীনতার আগে এই রুট দিয়ে ভারতে যাত্রী ও মালবাহী ট্রেন চলাচল করতো। স্বাধীনতার পর শুধু মালবাহী ট্রেন চলাচল করেছে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত।

লালমনিরহাট-মোগলহাট রেলরুটের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে কর্ণপুর গ্রামে এক কিলোমিটার রেললাইন রয়েছে। বাকি নয় কিলোমিটারের রেললাইন ও পাথর চুরি হয়ে গেছে। ছবি: এস দিলীপ রায়/ স্টার

পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালের এপ্রিল পর্যন্ত শুধু লালমনিরহাট-মোগলহাট যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করেছিল। সে বছর মে মাসে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এই রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেয়।

ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার কয়েক বছর পর এই রুটে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে নয় কিলোমিটারের রেললাইন ও পাথর চুরি হয়ে গেছে। তবে এখনো কর্ণপুর গ্রামে এক কিলোমিটার রেললাইন রয়েছে।

স্থানীয়রা এই লাইন এখনো আগলে রেখেছেন। তাদের আশা, আবারো কোনো একদিন এই রুটে আগের মতোই ট্রেন চলাচল শুরু করবে।

কর্ণপুর গ্রামের মোবারক হোসেন (৬৭) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘লালমনিরহাট-মোগলহাট রুটের সব এলাকার রেললাইন ও পাথর চুরি করেছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। কিন্তু, আমাদের এলাকায় পারেনি। তারা চেষ্টা করেছিল। কিন্তু, আমরা পাহারা দিয়েছিলাম। কয়েকবার চোরদের ধাওয়া করেছিলাম।’

মোগলহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘মোগলহাটে একসময় কাস্টমস চেকপোস্ট ছিল আর ট্রেন চলাচলও ছিল স্বাভাবিক। এটি একটি ব্যবসা-বান্ধব এলাকা। কাস্টমস চেকপোস্টস ও ট্রেন চলাচল বন্ধ হওয়ায় অর্থনৈতিকভাবে নিমজ্জিত হয়েছে মোগলহাট এলাকা।’

তিনি মনে করেন, ‘এই রুটে আবার ট্রেন চলাচল শুরু হলে মোগলহাট তার হারানো ঐতিহ্য ফিরে পাবে। স্থানীয় লোকজন ট্রেনে চলাচল করার সুযোগ পাবেন। এখানকার ব্যবসা-বাণিজ্য বেড়ে যাবে। রেলওয়ে আয় করতে পারবে আশানুরূপ।’

‘ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় রেললাইন ও পাথর চুরি হয়েছে। ভূমিহীনরা রেলওয়ে জায়গার ওপর ঘর তৈরি করেছেন। আমাদের সবার দাবি, এই রুটে আবার ট্রেন চলাচল শুরু হোক,’ যোগ করেন তিনি।

লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা (ডিটিএস) আনিসুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘লালমনিরহাট-মোগলহাট রেলরুটটি আবার চালু করতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’

এ ব্যাপারে সরকারের সদিচ্ছা রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

‘এই রুটের রেললাইন ও পাথর চুরি করার ঘটনায় সংঘবদ্ধ চোরদের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হয়েছে,’ উল্লেখ করে লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগীয় প্রকৌশলী (ডিইএন) আনোয়ার হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘রুটটি চালু হলে লালমনিরহাট রেলওয়ে তার ঐতিহ্য ফিরে পাবে।’

লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগীয় ম্যানেজার (ডিআরএম) শাহ সুফি নূর মোহাম্মদ ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘লালমনিরহাট-মোগলহাট রেল রুটটি এখনও পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়নি। এ রুট দিয়ে আবার ট্রেন চলাচল শুরু করতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। খুব শিগগির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ স্থান পরিদর্শন করে তাদের উদ্যোগের কথা জানাবেন।’

এই রুট দিয়ে আবার ট্রেন চলাচল শুরু করবে— এমন সম্ভাবনাই বেশি বলে জানিয়েছেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

CA appoints 3 new special assistants with state ministerial rank

Hours after induction three more advisers to the interim government, Chief Adviser Prof Muhammad Yunus appointed three special assistants equivalent to state minister portfolio

4h ago