ত্বীন ফলের সফল বাণিজ্যিক চাষ

বাণিজ্যিকভাবে ত্বীন ফলের চাষ করে সাফল্য পাওয়া পটুয়াখালী সদর উপজেলার বদরপুর ইউনিয়নের জাহাঙ্গীর হোসাইন মানিক। ছবি: সোহরাব হোসেন

পটুয়াখালীতে বাণিজ্যিকভাবে ত্বীন ফলের চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন সদর উপজেলার বদরপুর ইউনিয়নের টেংরাখালী এলাকার একটি ডিগ্রী মাদ্রাসার কৃষি শিক্ষক জাহাঙ্গীর হোসাইন মানিক। ইতোমধ্যে বাজারে ফল বিক্রিও শুরু করেছেন তিনি।

ত্বীন ফল খুব রসালো এবং একটি ফল ২০ থেকে ৫০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। ছবি: সোহরাব হোসেন

করোনাকালে দীর্ঘ সময় মাদ্রাসা বন্ধ থাকায় অবসর সময়টাকে কাজে লাগাতে তিনি ত্বীন ফলের চাষ শুরু করেন। দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি জানান, ত্বীন ফল খুব রসালো এবং একটি ফল ২০ থেকে ৫০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। এটি সরাসরি কাঁচা ও রোদে শুকিয়ে কাঁচের কন্টেইনারে রেখে সারা বছর খাওয়া যায়।। পাকলে কোনোটি লাল, আবার কোনোটি হলুদ রং ধারণ করে। দেশে সারা বছর পুষ্টি ও ফলের চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব।

৩০ শতক নিচু জমিতে মাটি ফেলে উঁচু করে ২০০টি ত্বীন ফলের চারা এনে গত বছর অক্টোবরে রোপণ করেন মাদ্রাসা শিক্ষক জাহাঙ্গীর হোসাইন মানিক। ছবি: সোহরাব হোসেন

মাদ্রাসার কাছে ৩০ শতক নিচু জমিতে মাটি ফেলে উঁচু করে গাজীপুরের মাওনা এলাকা থেকে প্রতিটি ৭২০ টাকা দরে ২০০টি ত্বীন ফলের চারা এনে গত বছর অক্টোবরে রোপণ করেন। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে কাঙ্ক্ষিত ত্বীন ফল ধরতে শুরু করে।

জাহাঙ্গীর হোসাইন মানিক বলেন, ‘প্রথমে কিছুটা শঙ্কায় ছিলাম ত্বীন ফলের চাষ নিয়ে। পরবর্তীতে কঠোর পরিশ্রম, নিবিড় পরিচর্যা আর কৃষি দপ্তরের লোকজনদের পরামর্শে সফল হয়েছি।’

‘প্রতি কেজি ত্বীন ফল রমজান মাস থেকে এক হাজার টাকা দরে বিক্রি করছি। আগ্রহী স্থানীয় ক্রেতারা বাগান থেকেই কিনে নেন। প্রথম বছরে বাগানের খরচ উঠবে এবং পরের বছর থেকে লাভের মুখ দেখতে পারবো বলে আশা করছি,’ তিনি বলেন।

তিনি জানান, ফল ছাড়াও বিক্রির জন্য শতাধিক কলম (কাটিং) করা হয়েছে। ত্বীন ফল চাষে আগ্রহী হয়ে অনেকে দূর-দূরান্ত থেকে বাগানে আসেন ফলটির চাষ পদ্ধতি রপ্ত করতে।

ত্বীন ফলের চাষাবাদের গুণাগুণ সম্পর্কে ঢাকার খামার বাড়ির কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (হর্টিকালচার উইং) এর অতিরিক্ত উপপরিচালক ড. শামীম আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ফলটিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি ১, ভিটামিন বি ২, ছাড়াও প্রায় সব রকমের জরুরি নিউট্রিশনস যেমন ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, সোডিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, কার্বোহাইড্রেট, সুগার, ফ্যাট,প্রোটিন, থায়ামিন, রিবোফ্লাবিন পটাশিয়াম ইত্যাদির পাশাপাশি এর অনেক ওষধি গুণও আছে।’

‘এটি কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়, ওজন কমানো, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখাসহ নানা উপকার করে থাকে। এটি ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক হিসেবে কাজ করে,’ তিনি বলেন।

তিনি আরও বলেন, ‘মাঠে ও ছাদে টবে লাগিয়ে ফল উৎপাদন সম্ভব। এটির কাটিং চারা লাগানোর চার থেকে পাঁচ মাস পর থেকেই ফল দিতে শুরু করে । প্রতিটি গাছ থেকে প্রথম বছরে এক কেজি, দ্বিতীয় বছরে সাত থেকে ১১ কেজি, তৃতীয় বছরে ২৫ কেজি পর্যন্ত ফল ধরে। এভাবে টানা ৩৪ বছর পর্যন্ত ফল দিতে থাকে। গাছটির আয়ু হলো প্রায় ১০০ বছর। প্রতিটি পাতার গোঁড়ায় গোঁড়ায় ত্বীন ফল জন্মে থাকে। প্রতিটি গাছ ছয় থেকে ৩০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয় এবং একটি গাছে ৭০ থেকে ৮০টি ফল ধরে।’

পটুয়াখালীর বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) এর বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা রেজাউল করিম জানান, ত্বীন ফলটির চাষাবাদের মাধ্যমে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব। এ ছাড়াও, এই ফল চাষ করে বেকারত্ব দূর করা যাবে। দেশে ফলটির চাহিদাও ক্রমশ বাড়ছে।

আরও পড়ুন:

বাংলাদেশে সম্ভাবনাময় ত্বীন ফল

Comments

The Daily Star  | English

No clear roadmap for investment

The budget for FY26 has drawn strong criticism from business leaders who say it lacks a clear roadmap for improving the investment climate, bolstering industrial competitiveness, and implementing overdue reforms in the banking sector.

15h ago