সৌদিতে নিপীড়ন, সন্তান নিয়ে দেশে ফিরলেন আরও এক গৃহকর্মী

স্টার অনলাইন গ্রাফিকস

নিপীড়নের ঘটনায় সৌদি আরব থেকে ছয় মাসের সন্তান নিয়ে দেশে ফিরেছেন ৩২ বছরের প্রবাসী আরও এক নারী শ্রমিক। মঙ্গলবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছেছেন তিনি।

ওই নারীর অভিযোগ, সৌদি আরবে যে বাড়িতে তিনি কাজ করতেন, সেই গৃহকর্তা তার ছেলের বাবা। তিনি জানান, নিয়োগকর্তার দ্বারা তিনি ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

সন্তানসহ বাড়িতে ফেরা নিয়ে উদ্বিগ্ন ওই নারী এখন আশকোনার ব্র্যাক লার্নিং সেন্টারে আশ্রয় নিয়েছেন।

ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, ওই নারীর গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। ২০১৯ সালের নভেম্বরে তিনি সৌদি আরবে যান।  সেখানে যাওয়ার পর থেকেই প্রতিনিয়ত তিনি নির্যাতনের শিকার হতেন। একপর্যায়ে তিনি অন্তঃসত্ত্বা হলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। সেখানেই জন্ম হয় এই শিশুটির।

ওই নারীর বরাতে ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির এক কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘তার পরিবারের কেউ বিষয়টি জানে না। সন্তানকে নিয়ে তিনি পরিবারের কাছে ফিরতে পারছেন না। এটা সমাজের লোকেরা ভালোভাবে নেবে না।’

গতকাল শাহজালাল বিমানবন্দরে নামার পর কোনো উপায় না পেয়ে ওই নারী বিমানবন্দর আর্মড পুলিশকে তার দুর্দশার কথা জানান। নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ওই নারীকে পরে ব্র্যাক অভিবাসন কর্মসূচির কাছে হস্তান্তর করা হয়।

ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচি প্রধান শরিফুল হাসান দ্য ডেইলি স্টার বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা ভীষণ দুর্ভাগ্যজনক। এটি সৌদিতে আমাদের নারী কর্মীদের উপর চরম নির্যাতনের আরেকটি উদাহরণ।’

এসব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সৌদি আরবের কোন বাড়িতে ওই নারী কাজ করতে গিয়েছিলেন, তার নিয়োগকর্তা কে, এগুলো তদন্ত হওয়া উচিত। প্রয়োজনে ডিএনএ টেস্ট করে সন্তানের পিতৃপরিচয় বের করা উচিত।’

তিনি আরও জানান, এখন তাদের প্রাথমিক চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বাচ্চাটিকে সুস্থ রাখা এবং ওই নারীকে মানসিকভাবে সমর্থন দেওয়া। এরপর আমরা তাকে তার বাড়িতে দিয়ে আসার চেষ্টা করব।

ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচি সূত্রে জানা যায়, এর আগে ২৬ মার্চ সৌদি আরব থেকে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে সন্তান নিয়ে দেশে ফিরেছিলেন নরসিংদীর বেলাবো উপজেলার এক নারী। তিনি সৌদি আরবের মক্কায় কেন্দ্রীয় কারাগারে মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় ছেলে সন্তান জন্ম দেন।

গত ২ এপ্রিল নিজের আট মাসের সন্তানকে বিমানবন্দরে ফেলে চলে যান সৌদি আরব ফেরত আরেক মা। ২৪ ফেব্রুয়ারি চার মাসের মেয়েকে নিয়ে ওমান থেকে দেশে ফিরতে বাধ্য হন আরেক নারী গৃহকর্মী। বিমানবন্দরে পৌঁছার পর তিনি এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ অফিসে গিয়ে জানান, তার সন্তানের বাবা একজন ওমানি নাগরিক। নির্যাতনের একপর্যায়ে তিনি অন্তঃসত্ত্বা হলে তাকে ওমান পুলিশের কাছে তুলে দেওয়া হয়। এরপর ডিপোর্টেশন ক্যাম্পে থাকা অবস্থায় সন্তানের জন্ম হয়।

এর আগে ২০২০ সালের ১৭ ডিসেম্বর ওমান থেকে হবিগঞ্জের এক নারী তিন মাসের সন্তানসহ দেশে ফিরতে বাধ্য হন।

শরিফুল হাসান বলেন, ‘এর আগে আমরা এ ধরনের ১২টি ঘটনা দেখেছি। তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু এ ধরনের অপ্রত্যাশিত ঘটনা যেন না ঘটে সে বিষয়ে আমাদের সোচ্চার ও নীতিনির্ধারকদের দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রয়োজন।’

 

দ্য ডেইলি স্টারের নীতিমালা অনুযায়ী এই প্রতিবেদনে ভুক্তভোগীদের পরিচয় প্রকাশ করা হলো না।

Comments

The Daily Star  | English

New polls timing: BNP upbeat, process irks Jamaat, NCP

The interim government’s revised election timeline with certain conditions has stirred cautious optimism as well as raised questions among  political parties.

8h ago