প্রবাসে

বাংলাদেশসহ ৫ দেশের অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ‘নিরাপদ দেশ’ তুরস্ক

তুর্কি কোস্টগার্ড কমান্ড এজিয়ান সাগরে গ্রিস থেকে পুশব্যাক করা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের উদ্ধার করছে। ফাইল ছবি

বাংলাদেশসহ পাঁচ দেশের অভিবাসনপ্রত্যাশী জন্য প্রতিবেশী তুরস্ককে ‘সুরক্ষিত দেশ’ হিসেবে মনোনীত করেছে গ্রিস। বাকি দেশগুলো হচ্ছে— সিরিয়া, আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও সোমালিয়া।

গ্রিস জানিয়েছে, তুরস্ক এখন থেকে এই দেশগুলোর আশ্রয়প্রার্থী ও অভিবাসনপ্রত্যাশীদের জন্যে ‘নিরাপদ তৃতীয় দেশ’ হিসেবে বিবেচিত হবে।

তুরস্ক থেকে এজিয়ান সাগর পাড়ি দিয়ে গ্রিসের লেসবস দ্বীপপুঞ্জে আসা অভিবাসনপ্রত্যাশী। ছবি: রয়টার্স

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, নতুন এই সিদ্ধান্তের ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্য গ্রিসে অভিবাসন প্রবণতা কমাতে পারে। কারণ, তারা আশ্রয়প্রার্থীদের তুরস্কে ফিরিয়ে দেওয়ার সুযোগ পাবে। গ্রিসে বর্তমানে বিপুল সংখ্যক অভিবাসনপ্রত্যাশী ও শরণার্থী রয়েছেন।

পর্যবেক্ষকদের মতে, পাঁচটি দেশ থেকে নতুন আগতদের ‘আশ্রয় আবেদন’ কোনো যাচাই-বাছাই ছাড়াই অগ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হবে এবং তাদেরকে গ্রিস থেকে আবার ‘নিরাপদ তৃতীয় দেশ’ হিসেবে তুরস্কে ফেরত পাঠানো হবে।

এর আগে, তুরস্ককে ‘নিরাপদ তৃতীয় দেশ’ হিসেবে বিবেচনা করা একমাত্র ইউরোপীয় দেশ ছিল হাঙ্গেরি।

গত সোমবার গ্রিসের অভিবাসন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সংবাদ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দেশটির পররাষ্ট্র ও অভিবাসন মন্ত্রণালয়ের যৌথ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলাদেশসহ এই পাঁচটি দেশ তুরস্ককে আশ্রয়প্রার্থীদের ‘তৃতীয় নিরাপদ দেশ’ হিসেবে মনোনীত করেছে।

এতে আরও বলা হয়েছে, আশ্রয় সেবার সাম্প্রতিক সুপারিশ ও তুরস্কের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে হাল নাগাদ তথ্য আমলে নিয়ে যৌথ মন্ত্রণালয় নিশ্চিত হয়েছে যে, তুরস্ক এসব দেশের নাগরিকদের আশ্রয়ের আবেদন পরীক্ষা করার জন্য সব মানদণ্ড পূরণ করে এবং জাতি, ধর্ম, নাগরিকত্ব, বা রাজনৈতিক বিশ্বাস বা কোনো নির্দিষ্ট সামাজিক গ্রুপের সদস্য হওয়ার কারণে তারা তুরস্কে কোনো বিপদে পড়বেন না।

গ্রিসের অভিবাসনমন্ত্রী নটিস মিতারাকিস এই সিদ্ধান্তকে ‘অবৈধ অভিবাসন প্রবাহ মোকাবিলা ও মানবপাচার নেটওয়ার্কের অপরাধমূলক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যা তুরস্ককে অবৈধভাবে গ্রিসে প্রবেশের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে বাধ্য করবে।

তিনি বলেছেন, ‘এই ঘোষণা ইইউ-তুরস্কের যৌথ ঘোষণাপত্রের সম্পূর্ণ ও নির্ভুলভাবে বাস্তবায়নে আরও একটি বড় উদ্যোগ। আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ এই উদ্যোগ দেশগুলোর নাগরিকদের (আশ্রয়) অনুরোধের বিরুদ্ধে গ্রিসের “আইনি অস্ত্র”কে শক্তিশালী করেছে। তাদের তুরস্ককে “নিরাপদ দেশ” বিবেচনা না করার কোনো কারণ নেই।’

আন্তর্জাতিক-সম্পর্ক বিষয়ক ফরাসি থিংক ট্যাংক ইফ্রির অভিবাসন ও নাগরিকত্ববিষয়ক গবেষক মাথিয়েউ তার্দি ইনফো মাইগ্রেন্টসকে বলেছেন, ‘২০১৬ সালের ইইউ-তুরস্ক চুক্তিতে তুরস্ককে আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য একটি ‘নিরাপদ তৃতীয় দেশ’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যবস্থা রেখেছিল গ্রিস। তবে সেসময় গ্রিসের বিচার বিভাগ একে স্বীকৃতি না দেওয়ায় পরবর্তীতে তুরস্ক হয়ে আসা অনেক অভিবাসনপ্রত্যাশী গ্রিসে আশ্রয় আবেদন করেছিলেন। এখন তুরস্ককে “নিরাপদ তৃতীয় দেশে”র স্বীকৃতির বিষয়টি গ্রিক সরকার আইনে নিয়ে আসায় আদালত বা বিচার বিভাগের হাতে আর কোনো সুযোগ থাকছে না।’

তার্দি জানিয়েছেন— জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী, শরণার্থীদের স্বীকৃতি দেওয়ার পুরোপুরি নিশ্চয়তা না থাকলেও অভিবাসন ও আশ্রয়বিষয়ক তুরস্কের জাতীয় আইনটি ইউরোপীয় মানদণ্ডের সঙ্গে অনেকটা সামঞ্জস্যপূর্ণ।

তুরস্কে অবস্থানরত সিরীয় নাগরিকদের অস্থায়ী সুরক্ষা বা শরণার্থী মর্যাদা রয়েছে।

তিনি মনে করেন, ‘তবে গ্রিসের এই উদ্যোগ এত সহজে তুরস্কের মেনে না নেওয়ার সম্ভাবনা আছে। তুরস্ক এত সহজে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ফেরত নাও নিতে পারে।’

তুরস্কের ক্ষমতাসীন জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (একে পার্টি) এই অভিবাসনবিরোধী উদ্যোগের নিন্দা জানিয়েছে। দলের মুখপাত্র ইমরেলিক অভিবাসনপ্রত্যাশীদের আগমন রোধে নতুন উদ্যোগ নেওয়ার জন্য ইউরোপীয় দেশগুলো সমালোচনা করে বলেছেন, ‘ভূমধ্যসাগরে ইউরোপীয় গণতন্ত্র ডুবে যাচ্ছে। গ্রিস কেন এটি করছে? যাতে কোনও অভিবাসনপ্রত্যাশী তাদের সীমান্তে না আসে। তারা এর বৈধতা দেওয়ার জন্য ইউরোপের সীমান্ত রক্ষার কথা বলেছেন।’

গত সোমবার দলের কার্যনির্বাহী বোর্ডের বৈঠকের পর সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘তারপরও আপনি ইউরোপীয় মূল্যবোধ কথা বলছেন?... যেখানে আমাদের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নৌকাগুলো ডুবিয়ে দেওয়ার বিষয়ে গ্রিক কোস্টগার্ডের কর্মকাণ্ড সম্পর্কিত তথ্য, নথি ও ভিডিও দিচ্ছেন। অথচ এখনও তাদের দাবি, তারা এ সম্পর্কে কিছু জানেন না।’

অভিবাসনপ্রত্যাশী ও শরণার্থীদের সঙ্গে সীমান্তে দুর্ব্যবহারের বিষয়ে ইইউকে দেওয়া প্রমাণের কথাও উল্লেখ করেন তিনি।

গ্রিস ও তুরস্ক ঐতিহাসিকভাবে আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী। দেশ দুটির সমুদ্রসীমায় সামরিক উত্তেজনা গত বছর বিপজ্জনকভাবে বেড়ে গিয়েছিল। সামরিক উত্তেজনার আগে গ্রিসের দিকে হাজার হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী ও শরণার্থীর স্রোত ঠেকাতে তুর্কি সরকারের ব্যর্থতাকে উল্লেখ করে গ্রিস অভিবাসনপ্রত্যাশীদের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার জন্য তুরস্ককে অভিযুক্ত করেছিল।

তাদের অভিযোগ, ২০১৬ সালের তুর্কি-ইইউ চুক্তি ও গ্রিসের চাপ সত্ত্বেও তুরস্ক তার অঞ্চল থেকে গ্রিসে আসা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য খুব কম আগ্রহ দেখিয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, ২৭-জাতি ইউরোপীয় ইউনিয়নে অবৈধ প্রবেশে বাধা দেওয়ার দায়িত্ব তুরস্কের।

অন্যদিকে, গ্রিসের বিরুদ্ধে ‘আশ্রয় পদ্ধতিতে অ্যাক্সেস ছাড়াই’ বড় আকারের পুশব্যাক ও সংক্ষিপ্ত নির্বাসনের অভিযোগ তুলেছে তুরস্ক। একে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন হিসেবে উল্লেখ করে তারা ইইউয়ের বিরুদ্ধে ‘মানবাধিকারের চরম অপব্যবহারের প্রতি অন্ধ দৃষ্টি’ দেওয়ার অভিযোগও করেছে।

তুরস্কের মতো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোও গ্রিসের আশ্রয়প্রার্থী অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ফিরিয়ে দেওয়ার প্রথাটির বারবার নিন্দা জানিয়েছে এবং বলেছে যে এটি নারী ও শিশুসহ দুর্বল অভিবাসনপ্রত্যাশীদের জীবনকে বিপন্ন করে তোলার পাশাপাশি মানবিক মূল্যবোধ ও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে।

গ্রিসের কোস্টগার্ড আশ্রয়প্রার্থীদের কোনো সহায়তা না দিয়ে বরং তাদের এজিয়ান সাগরে আটকে রেখেছে বা বাধা দিয়েছে— এমন অনেক ঘটনা প্রকাশিত হয়েছে সংবাদ ও গবেষণা প্রতিবেদনে।

ইইউ’র সীমান্ত সংস্থা ফ্রন্টটেক্সের সহযোগিতায় স্থল সীমান্তে গ্রিক বাহিনী ছিনতাই, নির্যাতন বা উপকূলীয় সীমান্তে নৌকায় অভিবাসনপ্রত্যাশীদের জোর করে চাপানোর শত শত মামলার দলিলও সংগ্রহ করেছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো।

গত মার্চে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) জানিয়েছে যে, তাদের ২০২০ সালের প্রতিবেদনে অনেকগুলো ঘটনার উল্লেখ করা আছে, যেখানে গ্রিক কোস্টগার্ডের সদস্যরা- কখনও কখনও সশস্ত্র মুখোশধারীদের সঙ্গে, অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বহনকারী নৌকাগুলোকে বাধা, আক্রমণ ও পুশ ব্যাক করেছে।

গত ৩ মার্চ, জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর বলেছে, অনিয়মিত অভিবাসনপ্রত্যাশীদের তুরস্কে ফিরিয়ে দিতে গ্রিসের প্রচেষ্টা ১৯৫১ সালের শরণার্থী কনভেনশন, মানবাধিকার ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন সম্পর্কিত ইউরোপীয় কনভেনশনের পরিপন্থি।

২০১৫ সালে তুরস্কের মধ্য দিয়ে রেকর্ড সংখ্যক ১০ লাখ মানুষ গ্রিসে ঢুকেছিলেন এবং পরে তাদের অধিকাংশই ধনী ইইউ দেশগুলিতে পালিয়ে গেছেন।

এরপরে শরণার্থীদের স্রোত অনেকটাই কমে যায়। চলতি বছর এ পর্যন্ত তুরস্ক থেকে গ্রিস পৌঁছেছেন প্রায় তিন হাজারেরও বেশি মানুষ। তাদের বেশিরভাগ গিয়েছেন সমুদ্রপথে।

মার্কিন শরণার্থী সংস্থার তথ্য অনুসারে, শরণার্থীদের মধ্যে ৪৭ শতাংশ আফগান, ১৫ শতাংশ সিরীয় ও নয় শতাংশ সোমালি ছিলেন।

ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে, তুরস্কের কাছে এজিয়ান সাগর উপকূলে উত্তর এজিয়ান দ্বীপে প্রায় ৯,৪০০ শরণার্থী রয়েছেন। বেসরকারি সংস্থাগুলোর ধারণা, সেখানে প্রায় ১৪ হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী ও শরণার্থী রয়েছেন।

তুরস্কের কোস্ট গার্ডের তথ্য অনুসারে, গত জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত গ্রিস থেকে পুশব্যাক করা তিন হাজার ৭৩৬ শরণার্থীকে উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে জানুয়ারিতে ১৬৯ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৫২৪ জন, মার্চে ৮২৫ জন, এপ্রিলে ১,৬২০ জন এবং মে মাসে ৬২৫ জনকে উদ্ধার রয়েছে।

চলতি জুন মাসে এখন পর্যন্ত ২২৩ জনকে সাগর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।

অভিবাসনপ্রত্যাশীদের উদ্ধার করার পর স্থানীয় অভিবাসন কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের স্থানান্তর করা হয়েছিল।

গত বছর তুর্কি কোস্ট গার্ড ১১ হাজার ৪৯৩ শরণার্থীকে উদ্ধার করেছিল।

তুরস্কের সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, গত বছরের মার্চে তুরস্ক থেকে গ্রিসের সীমান্তে অভিবাসনপ্রত্যাশী ও শরণার্থীদের পৌঁছতে বাধা দিতে তাদের ওপর হামলা চালিয়েছিল গ্রিসের সীমান্তরক্ষী বাহিনী। সেই হামলায় কয়েক হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী ও শরণার্থী আহত এবং বেশ কয়েকজন নিহত হন।

অভিবাসনপ্রত্যাশীদের প্রতি গ্রিসের কঠোর ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে সাউন্ড বোমা, রাবার বুলেট, গুলি ও কাঁদানে গ্যাস।

করোনা মহামারির মাসগুলোতে ইউরোপে অবৈধপ্রবেশ বন্ধ করতে তুরস্কের সঙ্গে ২০০ কিলোমিটার গ্রিক সীমান্তে নতুন ডিজিটাল প্রতিবন্ধকতা ব্যবস্থা স্থাপন ও তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে।  নদী ও স্থল টহলে সার্চলাইট এবং দূরপাল্লার ধ্বনিতাত্বিক বা অ্যাকোস্টিক ডিভাইস ব্যবহার করে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের দ্রুত শনাক্ত করা হচ্ছে। তাদের গ্রিসে ঢোকা থেকে বিরত রাখতে গ্রিক-তুর্কি সীমান্তে নির্মিত হচ্ছে স্বয়ংক্রিয় নজরদারি নেটওয়ার্ক।

যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে সাম্প্রতিক নির্মাণের মতো একটি নতুন ইস্পাত প্রাচীর, তুরস্ক-গ্রিসকে আলাদা করা এভ্রোস (মেরি) নদীর তীরে সাধারণভাবে ব্যবহৃত ক্রসিং পয়েন্টগুলো অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। কাছাকাছি পর্যবেক্ষণ টাওয়ারগুলোতে দীর্ঘ পরিসরের ক্যামেরা, নাইট ভিশন ও একাধিক সেন্সর লাগানো হচ্ছে বলে সংবাদ প্রতিবেদনগুলোতে বলা হয়েছে।

একে পার্টি মুখপাত্র ইমরেলিক গত সোমবার সাংবাদিকদের আরও জানিয়েছিলেন, ‘আশ্রয়প্রার্থীদের বাধা দিতে গ্রিক সীমান্তরক্ষী বাহিনী অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাউন্ড বোমা ব্যবহার করছে। এর আওয়াজ মাথার ওপর দিয়ে উড়ে যাওয়া কোনো উড়োজাহাজের চেয়ে প্রকট। চিকিৎসা প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে, এর সংস্পর্শে আসা মানুষ আহত ও অসুস্থ হয়েছেন।

মানবাধিকার সংস্থাগুলো এসব ডিভাইসকে বিপজ্জনক বলে নিন্দা করেছে। সুইজারল্যান্ড-ভিত্তিক ইউরো-ভূমধ্যসাগরীয় মানবাধিকার মনিটরের ওয়েবসাইটে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘তাদের শক্তিশালী শব্দ তরঙ্গ মানবদেহে ক্ষতিকর ব্যথা ও কাঁপুনি সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা ও মারাত্মক ব্যথা থেকে বধির হয়ে যাওয়ার ঝুঁকির আশঙ্কা রয়েছে।’

ইউরোপীয় কমিশনও তুরস্কের নদী পারাপার রোধে গ্রিসের এভ্রোস সীমান্ত চৌকিতে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ওপর উচ্চ-ডেসিবল শব্দ তরঙ্গ বিস্ফোরণে দুটি ট্রাক-মাউন্টেড লং রেঞ্জ অ্যাকোস্টিক ডিভাইস স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়ে অসন্তুষ্ট। এই পরিকল্পনা ঘোষণার পর ব্রাসেলস এই মাসের শুরুর দিকে ডিভাইসগুলোর বিষয়ে আরও তথ্য জানার জন্যে গ্রিক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল।

গ্রিসের অভিবাসনমন্ত্রী নটিস মিতারাকিস এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন যে, ‘গ্রিক সরকার অভিবাসনপ্রত্যাশীদের অবৈধ পুশব্যাকের সঙ্গে জড়িত ছিল না।’ তার দেশের ক্ষতিকারক শব্দ কামানের ব্যবহারের পক্ষ নিয়ে তিনি বলেছেন, ‘পুলিশকে তাদের নিজস্ব উপায়ে তা করতে হবে।’

গত বুধবার ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের স্বরাষ্ট্রবিষয়ক কমিশনার ইলভা জোহানসনের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি হলো গ্রিক সীমান্ত রক্ষার জন্য প্রযুক্তি এমন কোনও উপায়ে ব্যবহার করা যা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন নয়।’

জোহানসন ‘শব্দ কামানে’র ব্যবহারটিকে ‘উদ্ভট’ বলে মনে করেন। তার এমন উদ্বেগের প্রতিবাদ জানিয়ে মিতারাকিসকে বলেন, ‘এটি আপনার সীমান্ত সুরক্ষিত করার একটি উপায়। এটি এমন কিছুই নয় যা ইউরোপীয় কমিশনের অর্থায়নে করা হয়েছিল। আমি আশা করবো যে, এটি মৌলিক অধিকারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে।’

২০১৫-১৬ সালে শরণার্থী সংকটের পর ইউরোপীয় ইউনিয়ন সুরক্ষা প্রযুক্তি গবেষণায় তিন বিলিয়ন ইউরো (৩ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার) দিয়েছিল। তখন সিরিয়া, ইরাক ও আফগানিস্তানের যুদ্ধ থেকে পালিয়ে আসা কয়েক লাখ মানুষ গ্রিসে প্রবেশ করেছিলেন এবং পরে তাদের বেশিরভাগই ধনী ইইউ দেশগুলিতে পালিয়ে গিয়েছেন। ২০১৫ সালে তুরস্কের মধ্য দিয়ে রেকর্ড সংখ্যক ১০ লাখ মানুষ গ্রিসে ঢুকেছিলেন।

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) তথ্য মতে, গত বছর অন্তত চার হাজার ৫১০ বাংলাদেশি অভিবাসনপ্রত্যাশী স্থল ও সমুদ্রপথে ইতালি, মাল্টা, স্পেন বা গ্রিস হয়ে পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোতে গেছেন।

এছাড়াও, একই বছরে পশ্চিম বলকান অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্য দিয়ে প্রবেশের সময় আট হাজার ৮৪৪ বাংলাদেশিকে ট্র্যাক করা হয়েছিল। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো’র (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে মাত্র ২১ জন নিবন্ধিত অভিবাসনপ্রত্যাশী যুক্তরাজ্যে গিয়েছেন।

জাতিসংঘের ডিপার্টমেন্ট অব ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল অ্যাফেয়ার্স (ইউএনডিইএসএ) প্রকাশিত ইন্টারন্যাশনাল মাইগ্র্যান্টস স্টক-২০২০ অনুযায়ী, ২০২০ সালে মোট চার লাখ ৫৬ হাজার ৫১৬ বাংলাদেশি ইউরোপের কয়েকটি দেশে বসবাস করেছেন। অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ৬০ শতাংশই পুরুষ।

এজাজ মাহমুদ: ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক

তথ্যসূত্র: এপি, আনাদুলু এজেন্সি, আইএমও, তুর্কি কোস্ট গার্ড ও ইনফোমাইগ্রেন্টস

Comments

The Daily Star  | English

No price too high for mass deportations

US President-elect Donald Trump has doubled down on his campaign promise of the mass deportation of illegal immigrants, saying the cost of doing so will not be a deterrent.

5h ago