প্রতিশ্রুতিতে ৫০ বছর পার, পাকা হয়নি রাস্তা

দেখে বোঝার উপায় নেই এটি কোনো রাস্তা। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের শাহাজাদাপুর থেকে শাহবাজপুর যাওয়ার কাঁচা রাস্তাটিতে দুর্ভোগ নিত্যদিনের। ব্যবহারকারীরা বলছেন, একদিনের বৃষ্টিতে তিন দিন চলার অনুপযোগী থাকে এটি। রাস্তার এই দুদর্শায় তিন গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ ভোগান্তিতে পড়েন। দেশ স্বাধীনের ৫০ বছর পার হলেও প্রতিশ্রুতিতেই আটকে আছে কাঁচা সড়কটি পাকা করার দাবি।
Brahmanbaria_Road_12June21.jpg
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলায় শাহাজাদাপুর থেকে শাহবাজপুর যাওয়ার কাঁচা রাস্তাটি ৫০ বছরে পাকা হয়নি। ছবি: স্টার

দেখে বোঝার উপায় নেই এটি কোনো রাস্তা। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের শাহাজাদাপুর থেকে শাহবাজপুর যাওয়ার কাঁচা রাস্তাটিতে দুর্ভোগ নিত্যদিনের। ব্যবহারকারীরা বলছেন, একদিনের বৃষ্টিতে তিন দিন চলার অনুপযোগী থাকে এটি। রাস্তার এই দুদর্শায় তিন গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ ভোগান্তিতে পড়েন। দেশ স্বাধীনের ৫০ বছর পার হলেও প্রতিশ্রুতিতেই আটকে আছে কাঁচা সড়কটি পাকা করার দাবি।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের শাহবাজপুর থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরত্বের শাহাজাদাপুর গ্রামটি শুধুমাত্র যোগাযোগের অভাবে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সব ধরনের নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত।

সেখানে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তাটিতে সিএনজি অটোরিকশা ছাড়া অন্য কোনো যানবাহন চলাচল করে না। বৃষ্টি হওয়ায় স্থানীয় মলাইশ ব্রিজ থেকে শাহাজাদাপুর বাজার পর্যন্ত চার কিলোমিটার অংশে কাদাপানি জমে গেছে। অটোরিকশাচালক ও এর যাত্রীরা গাড়ির পেছন থেকে ধাক্কা দিয়ে রাস্তাটির এই কাঁচা অংশ পার হচ্ছেন।

Brahmanbaria1_Road_12June21.jpg
একদিনের বৃষ্টিতে তিন দিন চলার অনুপযোগী থাকে রাস্তাটি। রাস্তার এই দুদর্শায় তিন গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ ভোগান্তিতে পড়েন। ছবি: স্টার

শাহাজাদাপুর ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, ১১ বছর আগে জাতীয় সংসদে তৎকালীন স্থানীয় সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মৃধার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে রাস্তাটি পাকাকরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তবে প্রায় এক যুগ পার হলেও রাস্তাটিতে কোনো ইট বসেনি।

শাহাজাদাপুর ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, কেবল শাহজাদাপুর গ্রামেই একটি উচ্চ বিদ্যালয়, পাঁচটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তিনটি কিন্ডারগার্টেন, দুটি মাদ্রাসা, একটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, একটি কমিউনিটি ক্লিনিক এবং দুটি বড় বাজার আছে।

স্থানীয়রা বলছেন সড়কের বেহাল দশার কারণে স্বাস্থ্যসহ অনেক সুবিধা থেকেই বঞ্চিত হচ্ছেন তারা।

শাহাজাদাপুর গ্রামের বাসিন্দা মামুন খান বলেন, ‘গত এক যুগ ধরে অল্প কিছু মাটি ভরাট, মাপজোক ও সয়েল টেস্ট ছাড়া রাস্তার কোনো দৃশ্যমান উন্নয়ন দেখতে পাইনি। এই যুগে বাংলাদেশের আর কোথাও এমন রাস্তা দেখা যায় না। আমরা বছরের পর বছর মানববন্ধন করেছি এবং রাস্তা নির্মাণের দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছি, কিন্তু কোনো ফল হয়নি।’

একই গ্রামের বাসিন্দা রাহুল দাস বলেন, ‘বর্ষা মৌসুমে রাস্তাটির এমন দশা হয় যে, আমরা পায়ে হেঁটেও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের শাহবাজপুর বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছাতে পারি না।’

আরেক বাসিন্দা মো. দৌলত খান বলেন, ‘মাত্র চার কিলোমিটার কাঁচা রাস্তার জন্য শাহাজাদাপুর, দেউড়িয়া ও নেয়ামতপুর-এই তিন গ্রাম এখনো পিছিয়ে আছে। আধুনিক যুগে বাস করেও এই তিন গ্রামের মানুষ জরুরিভিত্তিতে কোনো রোগীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যেতে পারে না। কৃষকরাও তাদের উৎপাদিত পণ্য নিয়ে দূরের বাজারে যেতে পারে না।’

এই রাস্তায় চলাচলকারী অটোরিকশাচালক তামিম মিয়া বলেন, ‘গাড়িতে যাত্রী নিয়ে এ রাস্তা দিয়ে চলাচল করাটা ‍খুবই কষ্টের, দুর্ভোগের। কাদা মাড়িয়ে চলতে হয় বলে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে এবং গাড়ির পার্টস নষ্ট হয়ে যায়।’

রাস্তার বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) সরাইল উপজেলা প্রকৌশলী মোছাম্মৎ নিলুফা ইয়াসমিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এই রাস্তা নির্মাণ প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন। এটিকে পিচ ঢালাই সড়কে রূপান্তরিত করতে আমরা গত বছর তালিকা পাঠিয়েছিলাম কিন্তু সেটি অনুমোদন পায়নি। আমরা এই বছরের জুলাইয়ে আবার এস্টিমেট পাঠাবো।’

Comments

The Daily Star  | English
Dengue deaths in Bangladesh

Six die of dengue in a day

At least six dengue patients have died in the past 24 hours till this morning, marking the highest number of single-day dengue deaths recorded this year

36m ago