প্রবাসে

আমিরাতে কবি নজরুলের জন্মজয়ন্তী পালিত

সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাংলাদেশ দূতাবাসে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী পালিত হয়েছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে নজরুল জন্মজয়ন্তীর আলোচনায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. আবু জাফর। ছবি: সংগৃহীত

সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাংলাদেশ দূতাবাসে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী পালিত হয়েছে।

‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম’ শীর্ষক আলোচনায় বক্তারা বলেন, ‘বিদ্রোহী কবিতায় কাজী নজরুল ইসলাম যে বীরের বর্ণনা দিয়েছেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন তার বাস্তব রূপ। নজরুল ছিলেন সাহিত্যের কবি আর বঙ্গবন্ধু হলেন রাজনীতির কবি। ত্রিকালদর্শী নজরুল ভাষার ব্যঞ্জনায় যেমন কালজয়ী কাব্য রচনা করছেন, তেমনি বঙ্গবন্ধু তার রাজনৈতিক প্রতিভা দিয়ে যে কাব্য রচনা করেছেন তার নাম- বাংলাদেশ।’

গত বৃহস্পতিবার রাজধানী আবুধাবিতে দূতাবাসের মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানমালার ধারাবাহিকতায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে স্থানীয় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত বাংলাদেশি অধ্যাপক, বাংলাদেশ স্কুলের শিক্ষক, কমিউনিটি সংগঠক ও পেশাজীবী প্রবাসীরা উপস্থিত ছিলেন।

আমিরাতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. আবু জাফরের সভাপতিত্বে আলোচনায় প্রতিপাদ্যের ওপর শেখ জায়েদ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণ অধ্যাপক কাজী হাবিবুল হক খন্দকার, আল আইন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আবু রেজা, বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি ইফতেখার হোসেন বাবুল, বাংলাদেশ সমিতির সভাপতি প্রকৌশলী মোয়াজ্জেম হোসেন, বাংলাদেশ স্কুলের অধ্যক্ষ মীর আনিসুল হাসান অংশ নেন। 

বক্তারা জাতির পিতার অসাম্প্রদায়িক ও বৈষম্যহীন দেশ গড়ার দর্শনের পিছনে জাতীয় কবির জীবনী ও সাহিত্য কর্মের বিশেষ ভূমিকা তুলে ধরেন।

তারা বলেন, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার সাহিত্য ও কর্মে সাম্য, সম্প্রীতি, নারীর সম-অধিকার, মানবাধিকার, মানবতাবাদ ও বাঙালি জাতীয়তাবাদের জয়গান গেয়েছেন। সাম্রাজ্যবাদ, উপনিবেশবাদ, ধর্মীয় সংকীর্ণতা ইত্যাদি রাজনৈতিক ও সামাজিক অনাচারের বিরুদ্ধে তিনি শব্দশৈলির মাধ্যমে দ্রোহ করছেন, আন্দোলন করেছেন এবং কারাবরণ করেছেন। এসব বিষয়ে তিনি কালজয়ী কাব্য ও সাহিত্য রচনা করেছেন।

তারা আরও বলেন, ঔপনিবেশিকতা ও পরাধীনতার মধ্যে জন্ম ও বেড়ে ওঠা কবি নজরুল সাম্প্রদায়িকতা, শোষণ, বৈষম্য এবং নির্যাতনের প্রত্যক্ষদর্শী   ছিলেন। তাই তার সাহিত্যকর্মে এসব বিষয় গভীরভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। তার জীবনের ব্রত ছিল একটি শোষণহীন ও বৈষম্যহীন ন্যায়ভিত্তিক সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠা।

বক্তারা বলেন, বঙ্গবন্ধু তার শৈশবে, কৈশোরে এবং সক্রিয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণের প্রাক্কালে কাজী নজরুল ইসলামের জীবন ও সাহিত্য কর্মের সংস্পর্শে আসেন। কবির জীবনী, দর্শন ও কর্মের অনেক ‍উপাদানে জাতির পিতা অনুপ্রাণিত হন, যা তার রাজনৈতিক দর্শনেও প্রতিভাত হয়। তিনিও  সকল অসাম্য ও শোষণের বিরুদ্ধে আজীবন সংগ্রাম করেছেন।

রাষ্ট্রদূত মো. আবু জাফর বলেন, জাতীয় কবি কাজী নজরুলের সাম্যবাদ ও অসাম্প্রদায়িকতার দর্শনের প্রতিফলন ঘটেছে জাতির পিতার দেওয়া বাংলাদেশের সংবিধানে, যার অন্যতম মূলনীতি হল ধর্মনিরপেক্ষতা ও নিজস্ব ধারার সমাজতন্ত্র। আজ বাংলাদেশ সারাবিশ্বে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মডেল ও শান্তিকামী জাতি হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। যা বঙ্গবন্ধুকে জুলিও-কুরি শান্তি পদকে ভূষিত করার মাধ্যমে শুরু হয়েছিল।

‘কবি নজরুলের চেতনায় বঙ্গবন্ধু অনুপ্রাণিত ছিলেন বলেই স্বাধীনতার পর কবিকে কলকাতা থেকে থেকে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন এবং রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় ঢাকায় তার উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। পরবর্তীতে কাজী নজরুলকে জাতীয় কবির পদমর্যাদায় অভিষিক্ত করে আমাদের জাতীয় জীবনের গভীর অপূর্ণতাকে পূরণ করেছিলেন,’ রাষ্ট্রদূত যোগ করেন।

এ আদর্শের চর্চার মাধ্যেমে বাংলাদেশকে একটি অসাম্প্রদায়িক জাতি এবং বিশ্বের নির্যাতিত মানুষের পক্ষের একটি মানবতাবাদী রাষ্ট্র হিসেবে তুলে ধরতে প্রবাসীদের আহবান জানান রাষ্ট্রদূত।

তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা ও জাতীয় কবির দেওয়া বাংলাদেশের  অসাম্প্রদায়িক অবস্থানকে আমাদের ধরে রাখতে হবে। সব ধরণের অন্যায়, অসাম্য, শোষণ, সামপ্রদায়িতকা ও ধর্মন্ধতার বিরুদ্ধে আমাদেরকে সোচ্চার থাকতে হবে এবং পরমত সহিষ্ণুতার চর্চা করতে হবে।’

আলোচনা শেষে বঙ্গবন্ধু, জাতীয় কবি ও তাদের পরিবারবর্গের আত্মার মাগফেরাত কামনা এবং প্রধানমন্ত্রীর সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু এবং দেশ জাতির সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনায় বিশেষ দোয়া মোনাজাত করা হয়।

Comments

The Daily Star  | English

DMCH doctors threaten strike after assault on colleague

A doctor at Dhaka Medical College Hospital (DMCH) was allegedly assaulted yesterday after the death of a private university student there, with some of his peers accusing the physicians of neglecting their duty in his treatment

4h ago