শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে ইমাম-খতিবদের এগিয়ে আসার আহ্বান

শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে মসজিদের ইমাম ও খতিবদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর।
শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত ও অংশীদারিত্বমূলক প্রকল্পের আওতায় ইমামদের সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের আয়োজন করে পরিবেশ অধিদপ্তর। ছবি: সংগৃহীত

শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে মসজিদের ইমাম ও খতিবদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর।

তারা জানায়, সরকার কিংবা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার একার পক্ষে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। এজন্য সবাইকে উদ্যোগী হতে হবে। এ ক্ষেত্রে মসজিদের খতিব-ইমামরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন।

আজ শনিবার শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত ও অংশীদারিত্বমূলক প্রকল্পের আওতায় ইমামদের সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের আয়োজন করে পরিবেশ অধিদপ্তর।

এসময় পরিবেশ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও প্রকল্প পরিচালক মো. হুমায়ুন কবীর (যুগ্ম-সচিব) বলেন, ‘সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে মানুষকে তিনটি বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। যেমন: জগতের সব সৃষ্ট বস্তুই আল্লাহর বলে উপলব্ধি করা, প্রকৃতির সম্পদ সবার ক্ষেত্রে সুষ্ঠু ও ন্যায়ভাবে ভোগ করা এবং সঠিক ও পরিমিত ব্যবহার  করা। এ ক্ষেত্রে শব্দদূষণের স্রষ্টা বা শিকার সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এই দূষণ মোকাবিলা করতে হবে।’

‘শব্দ দূষণের কারণে শাকসবজি, উদ্ভিদের উৎপাদনশীলতা হ্রাস ও বৃদ্ধি বাঁধাগ্রস্ত হয়, পশুপাখির ক্ষতি হয়, নদী ও সামুদ্রিক পরিবেশের ক্ষতির মাধ্যমে জীববৈচিত্র নষ্ট হয়। এজন্য শব্দদূষণের ভয়াবহতা বিবেচনায় নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর ২০২০-২০২২ মেয়াদে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত ও অংশীদারিত্বমূলক প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধি অত্যন্ত জরুরি’, বলেন তিনি।

জুমার নামাজসহ সব নামাজে এবং সব ধরণের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে শব্দদূষণ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা, পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক শব্দদূষণ সংক্রান্ত আইন ও অপরাধ সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে অবহিত করা এবং মসজিদসহ সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশে যেন শব্দদূষণ না হয়, সেজন্য স্থানীয়দের সঙ্গে আলোচনার আয়োজন করা। সর্বোপরি সংস্কৃতিগত পরিবেশ এবং ধর্মীয় মূল্যবোধের চর্চা ও প্রয়োগের মাধ্যমে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ করার ওপর জোর দেন তিনি।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইএনটি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক শেখ নুরুল ফাত্তাহ রুমি বলেন, ‘আমরা সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ হয়ে পরিবেশের ক্ষতি করছি। পরিবেশের বিভিন্ন উপাদান নষ্ট করছি। শব্দদূষণ শারীরিক ও মানসিক উভয় স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে। শ্রবণক্ষমতা হ্রাসের পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ক্লান্তি, অবসাদ, অনিদ্রা, মানসিক চাপ ইত্যাদি রোগেরও অন্যতম কারণ শব্দদূষণ। স্বাভাবিক মানুষের কান ০ থেকে ৬০ ডেসিবলের শব্দ শুনতে পায়, কিন্তু ১২০ থকে ১৪০ ডেসিবলের শব্দ কান ব্যথার উদ্রেক করে। শব্দদূষণে শিশুদের স্বাস্থ্যের ওপরও প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে শিশুর জন্ম নেওয়ার পিছনে উচ্চ শব্দের একটি ভূমিকা রয়েছে।’

ডিএমপি’র মতিঝিল বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) তারেক আহমেদ বলেন, ‘শব্দদূষণ নীরব ঘাতক। সড়ক পরিবহন আইনে শব্দদূষণের কারণে জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। কোনো বিষয়ে সফলতা অর্জন করতে হলে জনগণের অংশগ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। ইতোমধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তর আগারগাঁও এলাকাকে নীরব এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেছে। যা প্রশংসনীয় উদ্যোগ। এই বিধান বাস্তবায়নে পরিবেশ অধিদপ্তরকে সবার সহযোগিতা করতে হবে।’ 

‘ইমামরা যখন ওয়াজ করেন, তখন এই শব্দদূষণের বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজন। ইসলাম কখনো অন্যের ক্ষতিকে সমর্থন করে না। আপনার ওয়াজ যেন অন্যের ক্ষতির কারণ না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখা প্রয়োজন’, বলেন তিনি।

ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মু. আ. হামিদ জমাদ্দার বলেন, ‘ইমামরা হলেন সমাজের লিডার। তাদের দ্বারা সমাজ প্রভাবিত হয় বিধায় শব্দদূষণ রোধে খতিব-ইমামদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই। তিন লাখ মসজিদে শব্দদূষণ বিষয়ে মুসল্লিদের সচেতন করতে হবে। ইমামদের প্রশিক্ষণের যে সিলেবাস, সেখানে শব্দদূষণের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন।’

পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) আহমদ শামীম আল রাজী বলেন, ‘ইমামরা সমাজ পরিবর্তনের বড় হাতিয়ার। শব্দদূষণের মতো ক্ষতিকর বিষয়ে ইমামদের সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা চাই- আগে মানুষকে সচেতন করতে। যেকোনো ক্যাম্পেইন সফল করতে হলে পরিকল্পনা ও অর্থের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সব অংশীদারদের সম্পৃক্ত ও সচেতন করা জরুরি। মানুষকে সচেতন করার জন্য তথ্য প্রদান করা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে ইমামদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

প্রশিক্ষণে উপস্থিত খতিব-ইমামগণ শব্দদূষণ প্রতিরোধে তাদের সব ধরনের সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দেন এবং বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠানে পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক খন্দকার মাহমুদ পাশাসহ বক্তব্য রাখেন মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী, সৈয়দ মনিরুজ্জামান ও আলমগীর হায়দার প্রমুখ।

Comments

The Daily Star  | English
interim government struggles with decision-making

Interim govt struggling on many fronts

The government on around a dozen occasions has backtracked on its decisions during its two months in office, casting doubts about its resolve.

12h ago