পাবনার ঘটনা সরকারি কাজে পেশিশক্তি ব্যবহারের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ: টিআইবি

পাবনা গণপূর্ত কার্যালয়ে সরকারদলীয় কর্মীদের অস্ত্র হাতে মহড়ার ঘটনাকে সরকারি নির্মাণ ও ক্রয়কাজে পেশিশক্তি ব্যবহারের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ বলে নিন্দা জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানিয়েছে টিআইবি।

আজ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এই দাবি জানান।

এ ঘটনাকে দেশের সরকারি ক্রয় ও নির্মাণ কাজে বহুদিন ধরে প্রচলিত অবৈধ বলপ্রয়োগ, ভয়-ভীতির মাধ্যমে কাজ বাগিয়ে নেওয়ার আরেকটি উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘সরকারি ক্রয়, নির্মাণকাজ এবং প্রাতিষ্ঠানিক কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতার জন্য প্রতিযোগিতামূলক যে টেন্ডার ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল, সরকারদলীয় নেতাকর্মী ও স্বার্থান্বেষী মহলের অবৈধ বলপ্রয়োগ, হুমকি-ধমকি এবং জবরদখলে দীর্ঘদিন ধরেই তা অকার্যকর হয়ে আছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট নানা কর্তৃপক্ষ ছোটখাটো কিছু ব্যতিক্রম ব্যতীত বরাবরই তা অস্বীকার এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে সুরক্ষা প্রদান করে আসছে।’

তিনি বলেন, ‘পাবনার ঘটনা সরকারি টেন্ডার প্রক্রিয়ায় পেশিশক্তি ব্যবহারের ভয়াবহ সেই রেওয়াজের আরেকটি দৃশ্যমান নজিরমাত্র। অবিলম্বে এই ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান এবং উন্মুক্ত ও প্রতিযোগিতামূলক টেন্ডারব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।’

অস্ত্রগুলো নিবন্ধিত বৈধ অস্ত্র বলে দাবি ওঠা প্রসঙ্গে ড. জামান বলেন, ‘যদি অস্ত্রগুলো বৈধ হয়েও থাকে, তবুও গুরুত্বপূর্ণ সরকারি দপ্তরে জনসমক্ষে এভাবে অস্ত্র প্রদর্শন করে ভীতি সঞ্চার করা আইনসিদ্ধ হতে পারে না। তাই এ ঘটনাকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বলাটা অত্যুক্তি হবে না। এ ধরনের সন্ত্রাসী তৎপরতার সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর ‘অস্ত্র আইনের শর্ত ভঙ্গ হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা হবে’—পুলিশের এমন দায়সারা আশ্বাস আমাদের স্তম্ভিত করেছে।

‘এই আশ্বাসেই পুলিশি ব্যবস্থা গ্রহণ থমকে যাবে কি না সেটিও আমরা নিশ্চিত নই। অথচ ঘটনার পরপরই পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, স্বাভাবিকভাবে এমনটাই প্রত্যাশিত ছিল। তাই আইনি প্রশ্নগুলোর সমাধানের পাশাপাশি এ ধরনের ঘটনা বন্ধে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তড়িৎ ও কার্যকর তৎপরতার দাবি জানাই। সরকারি দল সংশ্লিষ্ট হিসেবে এই অস্ত্র মহড়ার কুশীলবরা ছাড় পেয়ে গেলে এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বিষাক্ত সাপের মতো সারাদেশেই ছড়িয়ে পড়বে।’

গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর টিআইবি প্রকাশিত ‘সরকারি ক্রয়ে সুশাসন: বাংলাদেশে ই-জিপির কার্যকরতা পর্যবেক্ষণ’ শীর্ষক গবেষণার তথ্য উল্লেখ করে ড. জামান বলেন, ‘সরকারি টেন্ডার ও ক্রয় প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি ও পেশিশক্তির ব্যবহার বন্ধ করার লক্ষ্যে সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট ইউনিট ২০১১ সালে ই-জিপি পোর্টাল চালু করে। এর ফলে ক্রয় প্রক্রিয়া সহজতর হলেও কার্যাদেশ পাওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব, যোগসাজশ, সিন্ডিকেট এখনো কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করছে এবং ভয়-ভীতি, যোগসাজশ কিংবা অবৈধ প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে কাজ বাগিয়ে নেওয়ার চর্চা বিদ্যমান আছে—যার প্রমাণ পাবনার এই অস্ত্র মহড়া।’

‘অবিলম্বে এই ঘটনায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হলে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সরকারি প্রতিশ্রুতি শুধু মৌখিক চটক হিসেবেই প্রমাণিত হবে এবং ইতিবাচক সমস্ত উদ্যোগ ক্ষতিগ্রস্ত হবে’- যোগ করেন ড. জামান।

বিভিন্ন সরকারি খাতের ওপর টিআইবি পরিচালিত আরেক গবেষণায় ক্রয়-সংক্রান্ত বিষয়ে দুর্নীতির ফলে ক্রয় বাজেটের ৮ দশমিক ৫ থেকে ২৭ শতাংশ ক্ষতি হওয়ার তথ্য উল্লেখ করে নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের অন্যতম হলো, জাতীয় নীতি ও অগ্রাধিকার অনুসারে টেকসইযোগ্য সরকারি ক্রয়কে উৎসাহিত করতে হবে। আর জাতিসংঘের দুর্নীতিবিরোধী কনভেনশন অনুযায়ী প্রত্যেক সদস্য রাষ্ট্র দুর্নীতি প্রতিরোধ করার জন্য স্বচ্ছতা, প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে নৈর্ব্যক্তিক শর্তবিশিষ্ট সরকারি ক্রয়কাঠামো প্রবর্তন করবে। কিন্তু পাবনার মতো এ ধরনের ঘটনাগুলো এসব লক্ষ্য অর্জন ও শর্তপূরণে বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতির বিপরীত বার্তা দেয়।’

ড. ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, ‘তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অভিযোগের অপেক্ষায় না থেকে এবং অস্বীকারের সংস্কৃতি ত্যাগ করে, গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের সূত্র ধরে, স্বপ্রণোদিত হয়ে অবিলম্বে এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানাই এবং কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে দৃষ্টান্ত স্থাপনের আহ্বান জানাই। যাতে আর কেউ রাজনৈতিক সংগঠনের সুযোগ নিয়ে এরকম সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করার সাহস না দেখায়।’

আরও পড়ুন:

মহড়ার পর আজ সেই অস্ত্র জমা দিলেন ২ আওয়ামী লীগ নেতা

Comments

The Daily Star  | English

Police struggle as key top posts lie vacant

Police are grappling with operational challenges as more than 400 key posts have remained vacant over the past 10 months, impairing the force’s ability to combat crime. 

6h ago