ইতালি প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা, বিপদে দেশে আটকে পড়া প্রবাসীরা

ইতালিতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার কারণে বিপাকে পড়েছেন দেশে আটকে থাকা তিন হাজারেও বেশি প্রবাসী বাংলাদেশি। অনেকে চাকরি হারানোর শঙ্কায় আছেন। কেউ কেউ ব্যবসায়িক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। অন্যদিকে, ইতালিয়ান মালিকরাও শ্রমের অভাবে বিপাকে পড়েছেন।
রবিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আটকে পড়া ইতালি প্রবাসীদের মানববন্ধন। ছবি: স্টার

ইতালিতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার কারণে বিপাকে পড়েছেন দেশে আটকে থাকা তিন হাজারেও বেশি প্রবাসী বাংলাদেশি। অনেকে চাকরি হারানোর শঙ্কায় আছেন। কেউ কেউ ব্যবসায়িক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। অন্যদিকে, ইতালিয়ান মালিকরাও শ্রমের অভাবে বিপাকে পড়েছেন।

এমন পরিস্থিতিতে ইতালিতে ফিরে যাওয়ায় সুযোগ চেয়ে দেশটির সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে আটকে পড়া প্রবাসীরা। পাশাপাশি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ দূতাবাসও এ বিষয়ে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশসহ তিন দেশের নাগরিকদের জন্য আগামী ২১ জুন পর্যন্ত ইতালিতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা বহাল আছে। গত এপ্রিল থেকে এ নিয়ে চার বারের মতো বাংলাদেশ, ভারত ও শ্রীলঙ্কার নাগরিকদের জন্য নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়ানো হয়। সর্বশেষ ৩০ মে নতুন করে এ সময় বাড়ানো হয়।

দূতাবাস ও প্রবাসী সংগঠকদের সূত্রে জানা গেছে, ইতালিতে বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে, আক্রান্ত ও মৃত্যুও কমেছে। তবে, দক্ষিণ এশিয়ায় কোভিড-১৯-এর নতুন ভ্যারিয়েন্ট চিহ্নিত হওয়ার পর দেশটির সরকার নতুন করে করোনা প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে বাংলাদেশসহ তিন দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়।

আজ রবিবার সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেন দেশে আটকে পড়া ইতালি প্রবাসীরা। মানবিক বিবেচনায় নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার জন্য সবাই ইতালি সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে।

সমাবেশে প্রবাসীরা জানান, ফিরতে না পারায় তারা মানসিক ও আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত। সময় মতো কর্মস্থলে ফিরতে না পারলে অনেকের চাকরি নিয়ে সমস্যা হবে। অনেকের পরিবার প্রবাসে একা থাকায় এ নিয়েও দুশ্চিন্তা বাড়ছে। এছাড়া নিয়োগদাতাদের উদ্বেগ-উৎকন্ঠা বাড়ছে।

মানবন্ধনের উদ্যোক্তা মাদারীপুরের শাহাজান মোল্লা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমাদের দুর্ভোগ এবং অনুরোধ ঢাকায় ইতালি দূতাবাসের মাধ্যমে সে দেশের সরকারের কাছে তুলে ধরতে এই মানবন্ধনের আয়োজন করেছি। আমাদের প্রত্যাশা দূতাবাস উদ্যোগ নেবে।’

পর্যটননগরী ভেনিসে ২৩ বছর ধরে প্রবাস জীবনযাপন করা শরীয়তপুরের মাহাবুবুল আলম বাবু বলেন, ‘দীর্ঘ বন্ধের পর গত মে মাসে রেস্তোরাঁগুলো খোলার অনুমতি পেয়েছে। এখন আমাদের অনুপস্থিতিতে ইতালির মালিককে বড় লোকসান দিতে হচ্ছে। ফিরতে আরও দেরি হলে তিনি বিকল্প উপায় খুঁজবেন বলে জানিয়েছেন।’

আরেক বাংলাদেশি কর্মী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘লকডাউনে রেস্তোরাঁ বন্ধ থাকায় পরিবার রেখে একাই দেশে ফিরেছিলাম। আমার অনুপস্থিতিতে তারা একপ্রকার অসহায় এখন। এ নিয়ে চিন্তায় আছি।’

প্রবাসীরা জানান, নতুন করে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারির পর থেকেই আটকে পড়াদের ফেরাতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ইতালির বাংলাদেশ দূতাবাস।

বাংলাদেশ দূতাবাস বলছে, আটকে পড়া প্রবাসী বাংলাদেশিদের উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা আন্তরিকভাবে নিয়ে বৈশ্বিক পরিস্থিতির মধ্যেও সমাধান বের করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে বিশেষ ব্যবস্থার অনুরোধ জানিয়ে ইতালির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে আনুষ্ঠানিকভাবে কূটনৈতিকপত্র দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও ঢাকার ইতালিয়ান দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছে।

সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কূটনৈতিক উপদেষ্টা রাষ্ট্রদূত ডেভিডা লা কাসিলিয়া কাছে আনুষ্ঠানিক অনু্রোধ জানিয়েছে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. শামীম আহসান।

এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমরা ইতালি সরকারের দেশে আটকে পড়া প্রবাসী বাংলাদেশিদের দুর্দশা ও নিয়োগকারী ইতালিয়ান ব্যবসায়ীদের ক্ষতিসহ মানবিক বিষয়গুলো তুলে ধরেছি এবং প্রবাসীদের ফেরাতে বিশেষ ব্যবস্থাপনার জন্য অনুরোধ জানিয়েছি।’

‘আমরা জানিয়েছি, প্রবাসীরা আটকে পড়ায় শুধু তাদের স্বার্থই নয়, ইতালিয়ান নিয়োগকর্তারাও ক্ষতির মুখে পড়েছে। রেস্তোরাঁ, পর্যটনসহ নানা খাতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অনুপস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তারাও অপেক্ষায় আছেন, কখন বাংলাদেশিসহ তাদের প্রবাসী কর্মীরা দেশ থেকে ফিরবেন,’ রাষ্ট্রদূত যোগ করেন।

তিনি আরও বলেন, ‘তাদের আমরা আশ্বস্ত করেছি, চিন্তিত হওয়ার যৌক্তিক কোনো কারণ নেই। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে যে ব্যবস্থা নিয়েছে, তার কারণে বাংলাদেশে সামগ্রিক কোভিড-১৯ পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।’

বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জানান, কূটনীতিক উপদেষ্টা সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষের কাছে বাংলাদেশিদের বিষয়টি স্পষ্টভাবে তুলে ধরার আন্তরিক আশ্বাস দিয়েছেন।

এজাজ মাহমুদ, ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক

আরও পড়ুন:

Comments

The Daily Star  | English

DMCH doctors threaten strike after assault on colleague

A doctor at Dhaka Medical College Hospital (DMCH) was allegedly assaulted yesterday after the death of a private university student there, with some of his peers accusing the physicians of neglecting their duty in his treatment

5h ago