মরে যাওয়াটা কোনো সমাধান নয়: পরীমনি
বাংলা সিনেমার আলোচিত অভিনেত্রী পরীমনি। গতকাল সোমবার রাত ১২টায় তার বনানীর বাসায় দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে কথা বলেছেন গত বুধবার রাতের নির্যাতন, হুমকি, মামলা, শিল্পী সমিতির ভূমিকা ও মিডিয়ার বাইরে সাধারণ নারীদের লড়াইয়ের বিষয়ে।
অভিযুক্তরা এত দ্রুত গ্রেপ্তার হবে, এটা কি ভেবেছিলেন?
গতকাল পর্যন্ত আমি মরা মানুষের মতো ছিলাম। যখন টিভিতে দেখলাম দোষীরা গ্রেপ্তার হয়েছে, তখনই নিজে থেকে দাঁড়ানোর শক্তি পেয়েছি। আজ নিজেকে অনেক সাহসী মনে হচ্ছে। সবার এত সহযোগিতা বিফলে যায়নি। গতকাল আমাকে কাঁদতে দেখেছেন। এখন একটু হাসছি।
এত দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে, এটা কি ভেবেছিলেন?
এত দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তা প্রত্যাশা করিনি। শিল্পী সমিতিতে গিয়েছিলাম। কিন্তু, কোনো সহযোগিতা পাইনি তাদের কাছ থেকে। অভিভাবক হিসেবে কাউকে খুঁজেও পাইনি। গত চারদিনে আমার জীবনে যা ঘটেছে, আগে কখনো ঘটেনি। ঘটনাটির পর যাদের কাছে গিয়েছিলাম, তারা প্রত্যেকেই আমাকে থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। তখনই খুব নিরাপত্তাহীন লেগেছে নিজের কাছে। সেসময় মনে হয়েছে, যদি আমি মরে যাই, তবে দোষীদের নিয়ে মরব। একা কেন মরব? তখনই বিষয়টি সবার সঙ্গে ফেসবুক পোস্টে ভাগাভাগি করেছিলাম। এত জলদি ব্যবস্থা নেওয়া হবে, এটা আমার প্রত্যাশার বাইরে ছিল।
শিল্পী সমিতির নেতারা এখন বলছেন আপনার পাশে আছেন।
মিডিয়ার অন্যরা জানার আগেই আমি প্রথমেই শিল্পী সমিতির মানুষদের বিষয়টা জানিয়েছি। তারা আমাকে প্রথমে আশ্বাস দিয়েছিলেন। এটুকুই, আর কিছুই করেনি আমার জন্যে। তারপর আর আমার খোঁজ নেয়নি। আমি খুবই দুঃখ পেয়েছি। হতাশ হয়েছি। উপায় না পেয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলাম। যাদের আমি আপন ভাবতাম, কিছু হলেই যাদের বাসা পর্যন্ত যেতাম, তাদের কাউকে এই সময়ে পাশে পাইনি।
এত দ্রুত অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা হলো, এর পেছনে অবদান কার বা কাদের?
অবশ্যই প্রথমে থাকবে মিডিয়াকর্মী, সাংবাদিকরা। তাদের বিকল্প নেই। এ ছাড়া, প্রশাসনও দেখিয়েছে আমাদের আইন কতটা শক্তিশালী। তারা চাইলেই সবকিছু পারে।
কিন্তু, আপনার বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে খারাপ আচরণের কথা শোনা যায়।
তারা কখনোই প্রকৃত সাংবাদিক ছিল না। যদি আমি কারো সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে থাকি, কেন করেছি, সেটা জানাও জরুরি। সাংবাদিক ভাইয়েরা শুরু থেকে আমাকে অনেক সাপোর্ট করেছেন।
পারিবারিকভাবে অভিভাবক বলতে আপনার নানাভাই আছেন। তিনি কী বিষয়টি জেনেছেন?
বর্তমানে আমার নানার বয়স ১১৩ বছর। আমার সঙ্গেই এই বাসায় থাকেন। তিনি আমাকে সবচেয়ে বেশি বোঝেন। তাকে এটা জানাতে চাইনি। প্রথমদিন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলা শেষে নানাভাই আমাকে ডেকে জিজ্ঞেস করেছেন কী হয়েছে? আমি সবকিছু খুলে বলতে পারিনি। তখন তিনি শুধু আমাকে একটি কথাই বলেছেন, ‘বি স্ট্রং’। তারপর থেকেই একটু একটু শক্তি পাচ্ছিলাম।
মামলা করার কারণে আগামীতে কোনো ধরনের আশঙ্কা করছেন?
এই ঘটনার রেশ আমার মধ্যে আজীবন থেকে যাবে। যতদিন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হয়, কিছুতেই শান্তি পাব না। আমার সঙ্গে হওয়া অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তির বাস্তবায়ন চাই। যদি সর্বোচ্চ শাস্তি হয়, ভবিষ্যতে অন্যদের সঙ্গে আর এমনটি হবে না।
বিষয়টি এখন পুলিশের তদন্তাধীন। আপনার কাছে যথেষ্ট প্রমাণ আছে বিষয়টার?
আমার কাছে যতটুকু প্রমাণ ছিল, সবকিছু জমা দিয়েছি। ঘটনার দিনের সেখানকার সিসিটিভির ফুটেজগুলো ছাড় দিলে চলবে না। যত দ্রুত সেগুলো সংগ্রহ করা হয়, আমার জন্যে ভালো। আমাকে গালি দিতে দিতে তারা বের হয়ে গেছে, সবকিছুই রেকর্ড আছে সেখানকার সিসিটিভিতে। সেখানকার কয়েকজন ওয়েটার খুব সাহায্য করেছেন। তাদের কাছে সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকব। বারবার লাইট বন্ধ করতে বলা হলেও তারা লাইট বন্ধ না করে সুইচ ধরে দাঁড়িয়েছিলেন। তারা ওইদিন না থাকলে আমাকে মেরে ফেলত সেখানে।
সাধারণ একজন নারী আপনার মতো এমন পরিস্থিতির শিকার হলে লড়াইয়ের সাহস পাবে কীভাবে?
আমি নায়িকা পরীমনি না হলে আমাকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করা হতো। যাদের কাছে জানাতে গিয়েছি, তারা আমাকে সম্মান-ইজ্জত নিয়ে ভাবতে বলেছেন। সাধারণ মেয়েদের উদ্দেশ্যে বলব, অপরিচিত কাউকে বিশ্বাস করা উচিত না। এমন যদি কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে, সত্যটা বলেই মরো। মরে যাওয়াটা কোনো সমাধান নয়। মরে গেলে কোনো সমাধান হয় না কিংবা রহস্যের জট খুলে না।
আরও পড়ুন:
নাসির ইউ মাহমুদ ‘ভালো লোক’: সংসদে জাপা এমপি চুন্নু
নাসির-অমিসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মাদক মামলা
পরীমনিকে ধর্ষণ-হত্যাচেষ্টায় মামলা: প্রধান আসামি নাসিরসহ গ্রেপ্তার ৫
পরীমনিকে নির্যাতন ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ: সাভার থানায় মামলা
Comments