রোহিঙ্গাদের এনআইডি প্রদান: চট্টগ্রামে আরও ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা

রোহিঙ্গাদের জন্মনিবন্ধন সনদ প্রদান ও জালিয়াতির মাধ্যমে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার অভিযোগে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কর্মকর্তা-কর্মচারী, ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক এক চেয়ারম্যান ও সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে দুটি পৃথক মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

রোহিঙ্গাদের জন্মনিবন্ধন সনদ প্রদান ও জালিয়াতির মাধ্যমে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার অভিযোগে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কর্মকর্তা-কর্মচারী, ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক এক চেয়ারম্যান ও সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে দুটি পৃথক মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

মঙ্গলবার দুর্নীতি দমন কমিশনের সমন্বিত কার্যালয় চট্টগ্রাম-১ এর উপ-সহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিন ও দুর্নীতি দমন কমিশনের সদর দপ্তরের উপ-পরিচালক সুভাষ চন্দ্র দত্ত বাদী হয়ে মামলা দুটি দায়ের করেন।

শরীফ উদ্দিনের দায়েরকৃত মামলায় আসামিরা হলেন- ডবলমুরিং থানা নির্বাচন অফিসারের অফিস সহায়ক মো. জয়নাল আবেদীন (৩৪), সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসারের এমএলএসএস মো. নুর আহম্মদ (৪২), হাটহাজারী উপজেলা নির্বাচন অফিসারের ডাটা এন্ট্রি অপারেটর (অস্থায়ী) মো. সাইফুদ্দিন চৌধুরী, কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন অফিসারের কার্যালয়ের টেকনিক্যাল এক্সপার্ট (অস্থায়ী) সত্য সুন্দর দে, হাটহাজারী মির্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. নুরুল আবছার, মির্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মো. নুরুল ইসলাম, মির্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক জন্মসনদ প্রস্তুতকারী মো. বেলাল উদ্দিন। এ ছাড়া, মির্জাপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. আবদুর ছালাম, মো. আজিজুর রহমান, রোহিঙ্গা নারী লাকী ওরফে রমজান বিবি ও তার স্বামী নজির আহম্মেদ।

অন্যদিকে, সুভাষ চন্দ্র দত্তের করা মামলায় আসামিরা হলেন- চসিক ৩৯ নম্বর দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর সরফরাজ কাদের রাসেল, চসিকের জন্মনিবন্ধন সহকারী মো. ফরহাদ হোসাইন, সাবেক পাঁচলাইশ নির্বাচন কার্যালয়ের ডাটা এন্ট্রি অপারেটর ও বর্তমান সন্দ্বীপ উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে কর্মরত মোহাম্মদ শাহজামাল, পাঁচলাইশ নির্বাচন অফিসের কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ শেখ, একই অফিসের প্রুফ রিডার (অস্থায়ী) উৎপল বড়ুয়া ও রন্তু বড়ুয়া। 

শরীফ উদ্দিনের করা মামলার এজাহারে বলা হয়, রোহিঙ্গা লাকী ও তার দুই মেয়ের পাসপোর্ট করতে অসৎ উদ্দেশ্যে জাতীয়তা সনদপত্র ও জন্মনিবন্ধন সনদ প্রদান করেন হাটহাজারীর মির্জাপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য নুরুল ইসলাম, জন্মসনদ প্রস্তুতকারী মোহাম্মদ বেলাল উদ্দিন ও মির্জাপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আবছার। আর এতে সহযোগিতা করেন দালাল মোহাম্মদ আজিজুর রহমান ও তার পিতা মো. আবদুর ছালাম। এ ছাড়া, ভুয়া সনদ দিয়ে তারা বাংলাদেশি পাসপোর্টের আবেদন করেন। লাকীর স্বামী নজির নিজেও বাংলাদেশি এনআইডি প্রাপ্ত ও সৌদিপ্রবাসী। গত ২০১৯ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত ডবলমুরিং থানার নির্বাচন অফিসের অফিস সহায়ক জয়নাল আবেদীন আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য অসৎ উদ্দেশ্যে রোহিঙ্গা নাগরিক লাকী আক্তারকে (তার প্রকৃত নাম রমজান বিবি) ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে সরাসরি জড়িত ছিলেন। রোহিঙ্গা নাগরিক লাকী আক্তারকে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে গত ২০১৯ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ফরম সরবরাহ করেন চট্টগ্রাম জেলার সিনিয়র নির্বাচন অফিসের এমএলএসএস মো. নুর আহম্মদ। নির্বাচন কমিশনের ল্যাপটপ ব্যবহার করে জয়নাল নিজ বাসায় বসে ডাটা এন্ট্রি করেন।

মামলার আর্জিতে বলা হয়, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

উপ-পরিচালক সুভাষ চন্দ্র ২০১৯ সালের আগস্টে কক্সবাজারের টেকনাফে বন্দুকযুদ্ধে নিহত রোহিঙ্গা ডাকাত নুর আলমকে জাতীয় পরিচয়পত্র পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক এক কাউন্সিলরসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। 

মামলায় বলা হয়, রোহিঙ্গা ডাকাত নুর আলম ২০১৭ সালের ২৩ জানুয়ারি বাংলাদেশি ভোটার স্মার্ট কার্ড পান। তাকে এবং তার স্ত্রীকে নাগরিক ও জন্মনিবন্ধন প্রত্যায়ন করেন সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর রাসেল। আর ভুয়া সেই সনদ দিয়ে তৎকালীন পাঁচলাইশ থানার নির্বাচন কর্মকর্তা আবদুল লতিফ শেখ ও বাকিরা মিলে তাকে ভোটার আইডি কার্ড দেন।

চট্টগ্রাম দুদকের উপ-পরিচালক লুৎফর কবির চন্দন বলেন, ‘তাদের বিরুদ্ধে প্রাথমিক প্রমাণ মেলায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।’

আরও পড়ুন:

রোহিঙ্গা তরুণীকে জন্মসনদ: চট্টগ্রামে সাবেক কাউন্সিলরসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা

Comments