সুইস ব্যাংকে গত ২ বছরে বাংলাদেশের আমানত কমেছে

ছবি: রয়টার্স

বিভিন্ন সুইস ব্যাংকে জমা রাখা বাংলাদেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানতের পরিমাণ ২০২০ সালে ছয় দশমিক ছয় শতাংশ কমে ৫৬৩ মিলিয়ন সুইস ফ্রাঙ্কে নেমে এসেছে। টাকার হিসেবে এই পরিমাণ প্রায় পাঁচ হাজার ২১৫ কোটি। পরপর দুই বছর ধরে এই পরিমাণটি কমছে।

এর আগে, ২০১৮ সালে আমানতের পরিমাণ ছিল ৬১৮ মিলিয়ন সুইস ফ্রাঙ্ক, যা ২০১৯ সালে কমে গিয়ে ৬০৩ মিলিয়ন হয়।

গতকাল সুইস জাতীয় ব্যাংকের (এসএনবি) প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যায়, ২০২০ সালের আমানতের মোট ৫৩০ মিলিয়ন সুইস ফ্রাঙ্ক বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংকের।

আর, বাংলাদেশি নাগরিকদের আমানত মোট ৩২ মিলিয়ন সুইস ফ্রাঙ্ক। তবে, ২০১৯ সালে বাংলাদেশি নাগরিকদের সুইস ব্যাংকে আমানত ছিল ২০ মিলিয়ন ফ্রাঙ্ক।

তবে, প্রকাশিত তথ্যে নির্দিষ্ট করে বলা নেই এই অর্থের মালিক কে বা কারা এবং এটাও বলা নেই যে এই আমানত বাংলাদেশ থেকে মানি লন্ডারিং এর মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে কি না।

২০২০ সালে ভারত থেকে সুইস ব্যাংকে আমানতের পরিমাণ দেশটির গত ১৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ছিল। ২০১৯ সালের চেয়ে ৮৯৯ মিলিয়ন ফ্রাঙ্ক বেশি আমানত জমা হয়েছে ২০২০ সালে, যার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দুই দশমিক ছয় বিলিয়ন।

পাকিস্তান থেকেও সুইস ব্যাংকে আমানতের পরিমাণ আগের বছরের তুলনায় ৭৭ দশমিক আট শতাংশ বেড়ে ২০২০ সালে ৬৪০ মিলিয়ন সুইস ফ্রাঙ্ক হয়েছে।

দীর্ঘদিন ধরে সারা বিশ্বের ধনীরা কর ফাঁকি দেওয়ার উদ্দেশ্যে তাদের অর্থ সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে জমা রাখছেন। টাকা জমা রাখার ক্ষেত্রে তাদের পছন্দের গন্তব্য হওয়ার পেছনে দেশটির ব্যাংকিং আইনের মাধ্যমে দেওয়া উঁচু পর্যায়ের গোপনীয়তাই মূল কারণ।

উদাহরণস্বরূপ, ১৯৩৪ সালের সুইস ব্যাংকিং আইন যে কোনো সুইস ব্যাংক এর ক্ষেত্রে আমানতকারীর অনুমতি ছাড়া কোন অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে কোনো ধরণের তথ্য, এমনকি সেটির অস্তিত্ব স্বীকার করাকেও ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করে।

যদি কোন সরকারি সংস্থা দাবি করে যে আমানতকারী কোনো ভয়ংকর অপরাধের সঙ্গে যুক্ত আছে অথবা অন্য কোনো ধরণের আর্থিক ব্যাপার (যেমন দেউলিয়া হওয়া, বিবাহ বিচ্ছেদ অথবা উত্তরাধিকার) নিয়ে বিতর্ক থাকে, কেবলমাত্র সেক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হিসেবে অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করা যেতে পারে।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের নাগরিকদের মতো বাংলাদেশিরাও তাদের অর্থ সুইস ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা রেখে আসছেন।

এই আমানতগুলোকে সরাসরি কালো টাকা হিসেবে ধরে নেওয়া যায় না বলে মনে করেন পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর।

কারণ, বাংলাদেশ সরকার এবং সুনির্দিষ্টভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকও সুইজারল্যান্ডে তহবিল জমা রাখে। সঙ্গে বিদেশে কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশিরাও সুইস ব্যাংকগুলোতে টাকা জমা রাখেন।

তবে, তিনি বলেন, ‘অবশ্যই অর্থ পাচারকারীরা সেখানে তাদের অর্থ লুকিয়ে রাখেন।’

কি পরিমাণ অর্থ তারা সুইজারল্যান্ডে জমা রেখেছে, তা প্রকাশ করতে তিনি সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। যেন ইউরোপের এই দেশটিতে কি পরিমাণ অবৈধ অর্থ জমা আছে, তা জানা যায়।

তবে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সাবেক অর্থনীতিবিদ মনসুর বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশিদের মধ্যে কর অবকাশ কেন্দ্র হিসেবে সুইজারল্যান্ডের আকর্ষণ অনেকটাই কমে এসেছে।

এখন জার্সি, কেইম্যান দ্বীপপুঞ্জ, পানামা, সিঙ্গাপুর ও দুবাইয়ের মতো বেশ কিছু বিকল্পের কথা জানান তিনি।

‘সুইস ব্যাংকগুলো এখন আর আগের মত নিরাপদ নেই। আর সুইজারল্যান্ড সরকার এখন অন্যান্য দেশের সঙ্গে তথ্য ভাগ করার ব্যাপারে আরও খোলা মনে ভাবছে’, বলেন তিনি।

এ কারণেই সম্ভবত বাংলাদেশি নাগরিকদের আমানতের পরিমাণ কমে গিয়েছে।

তিনি বলেন, ‘অথবা এটাও হতে পারে যে যেহেতু সুইজারল্যান্ডে সুদের হার কমে গিয়েছে। তাই বাংলাদেশ ব্যাংক নিজেই কিছু তহবিল উঠিয়ে এনে অন্য কোথাও আমানত রেখেছে।’

তবে, বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেছেন যে যদিও দুই দেশের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থার মধ্যে একটি চুক্তি আছে, তারপরেও সুইস ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য জানা খুব একটা সহজ নয়।

গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার অনুমতি না থাকায় পরিচয় না প্রকাশ করার শর্তে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘তারা কেবল আদালতের আদেশ এবং একটি সুনির্দিষ্ট নাম উল্লেখ করতে পারলেই সহযোগিতা করেন।’

প্রতিবেদনটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান।

Comments

The Daily Star  | English

Abdul Hamid returns home after treatment in Thailand

Two police officials were withdrawn and two others suspended for negligence in duty regarding the former president's departure from the country

1h ago