চিলমারী থেকে ব্রহ্মপুত্রে ভাসমান তেলের ডিপো সরানোর ‘ষড়যন্ত্র’

ভাসমান তেলের ডিপো। ছবি: স্টার

কুড়িগ্রামের চিলমারীতে ব্রহ্মপুত্র নদে ভাসমান তেলের ডিপোটি সরিয়ে নিতে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় তেল ব্যবসায়ী ও কৃষকদের। এ ছাড়া, এই ভাসমান ডিপোতে ডিজেল তেলের সরবরাহও কমেছে অনেক। ব্যবসায়ীদের চাহিদার তিন শতাংশও পূরণ করতে পারছে না ভাসমান এই ডিপোটি। চাহিদা মেটাতে ব্যবসায়ীরা বাধ্য হয়েই অতিরিক্ত পরিবহন ভাড়া খরচ করে বাঘাবাড়ি ঘাট ও পার্বতীপুর থেকে ডিজেল সরবরাহ নিচ্ছেন।

রেল-নৌ যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণকমিটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সাবেক সভাপতি কলামিস্ট নাহিদ হাসান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘চিলমারী বন্দর থেকে ভাসমান ডিপো সরিয়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্রকে কোনোভাবে সফল হতে দেওয়া হবে না। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী চিলমারী বন্দরটি পূর্ণাঙ্গ বন্দর হিসেবে চালু হলে এখানে বিপুল পরিমাণ নৌযান চলাচল শুরু করবে। এতে এখন যে পরিমাণ ডিজেলের চাহিদা রয়েছে, তার চেয়ে কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। ডিজেলের চাহিদা পূরণ করতে ভাসমান ডিপোকে স্থায়ী ডিপোতে পরিণত করার দাবি জানাই।’

বর্তমানে চিলমারী বন্দরে ব্রহ্মপুত্র নদে মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের একটি বার্জ রয়েছে। যাতে ডিজেলের ধারণক্ষমতা চার লাখ লিটার হলেও প্রতি ৩-৪ মাস অন্তর সরবরাহ পাচ্ছে মাত্র দুই লাখ ৬০ হাজার লিটার। বছরে তিনবার তেলের সরবরাহ পাচ্ছে চিলমারী বন্দরের ভাসমান এই ডিপো। এখানে যমুনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের দুটি বার্জ রয়েছে। দুটি বার্জের ধারণক্ষমতা আট লাখ লিটার হলেও গেল দুই বছর ধরে এখানে ডিজেলের কোনো সরবরাহ করছে না যমুনা পেট্রোলিয়াম। অলস অবস্থায় পড়ে রয়েছে যমুনা পেট্রোলিয়ামের বার্জ দুটি।

১৯৮৯ সালে চিলমারী বন্দরে ব্রহ্মপুত্র নদে ভাসমান তেলের ডিপো স্থাপন করা হয়। স্থাপনের প্রথম দিকে মেঘনা ও যমুনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের প্রত্যেকের দুটি করে বার্জ ছিল, আর তেলের সরবরাহও ছিল পর্যাপ্ত। স্থাপনের পর থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত চিলমারী বন্দরের ভাসমান ডিপো থেকে ডিলারদের মাধ্যমে বৃহত্তর রংপুরের বিভিন্ন স্থানে ডিজেল সরবরাহ করা হয়েছিল। ১৯৯৮ সালে মেরামতের কথা বলে মেঘনা পেট্রোলিয়াম দুটি বার্জের একটি নিয়ে গেলেও আজও ফিরে আনা হয়নি। একবছর পরে অপর বার্জটিও অপসারণের চেষ্টা করলে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও কৃষকদের আন্দোলনে তা করতে পারেনি।

স্থানীয় তেল ব্যবসায়ীরা বলছেন, রহস্যজনক কারণে যমুনা পেট্রোলিয়ামের দুটি বার্জই অলস করে রাখা হয়েছে। মেঘনা পেট্রোলিয়ামের একটি বার্জ থেকে অনিয়মিত তেল সরবরাহ পাচ্ছেন তারা। এই বার্জটিও চিলমারী বন্দর থেকে অপসারণ করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। যেকোনো মুহূর্তে এই বার্জটি সেখান থেকে সরিয়ে নিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন চিলমারী বন্দরে ভাসমান ডিপোর তালিকাভুক্ত ২২ জন ডিলার।

তেলের ডিলার আনোয়ার হোসেন বাদল ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘একসময় চিলমারী বন্দর দেশের পাঁচটি বন্দরের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি বন্দর ছিল। নদের নাব্যতা সংকটের কারণে বন্দরটি তার ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলে। চিলমারী বন্দরে ব্রহ্মপুত্র নদের তীর রক্ষার কাজ শেষ হয়েছে এবং নদের নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। চিলমারী বন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর হিসেবে চালুর ঘোষণা এসেছে সরকারের পক্ষ থেকে।’ 

‘চিলমারী বন্দরে সুদিন আসছে। এই মুহূর্তে ভাসমান ডিপো সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমাদের দাবি, চিলমারী বন্দরে স্থায়ী ডিপো স্থাপন করা হোক। মেঘনা, যমুনার ডিপোগুলোকে আরও প্রসারিত করা হোক এবং পদ্মা পেট্রোলিয়াম এখানে ডিপো স্থাপন করুক। তবেই চিলমারী বন্দর ঐতিহ্য ফিরে পাবে’, বলেন তিনি।

তেলের ডিলার জয়নাল মিয়া ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘বাঘাবাড়ি ঘাট ও পার্বতীপুর থেকে ট্যাংকে ডিজেল সরবরাহ নিতে প্রতি এক হাজার লিটারে আমাদেরকে দেড় হাজার থেকে এক হাজার সাত শ টাকা পরিবহন খরচ করতে হয়। সেজন্যই আমাদেরকে তেল বিক্রিও করতে হয় বেশি দামে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকরা। চিলমারী বন্দরে ভাসমান ডিপো থেকে চাহিদা অনুযায়ী ডিজেল সরবরাহ হলে আমরা কৃষকদের কাছে ন্যায্যমূল্যে তা বিক্রি করতে পারব।’

অপর ডিলার হযরত আলী ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘গড়ে প্রতিদিন চিলমারী বন্দরে এক লাখ ২০ হাজার লিটার ডিজেল তেলের চাহিদা রয়েছে। চিলমারী বন্দরটি পূর্ণাঙ্গ বন্দর হিসেবে চালু হলে এই চাহিদার পরিমাণ কয়েক লাখ হবে। চিলমারী বন্দর থেকে কুড়িগ্রাম ও আশপাশের জেলাগুলোর বিভিন্ন উপজেলায় ডিজেল সরবরাহের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। চিলমারী বন্দরের ঐতিহ্যকে রক্ষা করতে এখানে স্থায়ী তেলের ডিপো স্থাপন করতে হবে।’

মেঘনা পেট্রোলিয়ামের চিলমারী ভাসমান ডিপোর সুপারিন্টেনডেন্ট (ডিএস) আইয়ুব আলী ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এখান থেকে বার্জ সরানোর কোনো পরিকল্পনাই কর্তৃপক্ষের নেই। পুরনো বার্জটিতে কারিগরি কিছু ত্রুটি দেখা দেওয়ায় এটি মেরামত করার প্রয়োজন পড়েছে। তবে, নতুন একটি বার্জ এখানে আসলে তবেই পুরনোটি এখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হবে।’

‘বর্তমানে বছরে তিনবার তেলবাহী জাহাজ তেল নিয়ে এখানে আসছে। শুষ্ক মৌসুমে নদে নাব্যতা সংকট আর বর্ষাকালে প্রবল জোয়ারের কারণে তেলবাহী জাহাজ এই ভাসমান ডিপোতে আসতে পারে না। সে কারণে চিলমারী ভাসমান ডিপো থেকে পর্যাপ্ত তেল সরবরা করা যাচ্ছে না। যদি নদের নাব্যতা ফিরে আসে, তবে, তেলবাহী জাহাজ সহজে চলাচল করতে পারবে এবং চিলমারী ডিপোতে চাহিদা অনুযায়ী তেল সরবরাহ করা সম্ভব হবে’, বলেন এই কর্মকর্তা।

Comments

The Daily Star  | English

JnU students vow to stay on streets until demands met

Jagannath University (JnU) students tonight declared that they would not leave the streets until their three-point demand is fulfilled

1h ago