সাহেদ চক্রের জালিয়াতির শিকার ৬ হাজার রোগী

সাহেদ
মো. সাহেদ। ফাইল ছবি সংগৃহীত

রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদের নির্দেশনায় সংঘবদ্ধ অপরাধীদের একটি দল ভুয়া কোভিড-১৯ সনদ প্রদানের মাধ্যমে দেশে করোনাভাইরাস বিস্তারের ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে বলে র‌্যাবের তদন্তে উঠে এসেছে।

পরীক্ষা ছাড়াই ভুয়া সনদ তৈরি ও নমুনা সংগ্রহের জন্য সাহেদ দুটি দল তৈরি করেছিলেন।

জালিয়াতির মামলায় গত ২৯ মার্চ ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে জমা দেওয়া অভিযোগপত্রে এ কথা বলা হয়েছে। র‌্যাব-১’র জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এই প্রতিবেদন জমা দেন।

অভিযোগপত্রে সাহেদকে প্রধান অভিযুক্ত হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। অভিযোগপত্রে নাম আসা অন্য ১৩ ব্যক্তি হচ্ছেন— মাসুদ পারভেজ, তরিকুল ইসলাম শিবলী, আহসান হাবিব মজুমদার, হাতেম আলী, রাকিবুল ইসলাম সুমন, আব্দুস সালাম, আব্দুর রশীদ খান জুয়েল, অমিত বণিক কাজল, মিজানুর রহমান, শিমুল পারভেজ, দ্বীপায়ন বসু, শায়খুল ইসলাম সৈকত ও পলাশ আলী। তারা সবাই রিজেন্ট হাসপাতালের কর্মী।

অভিযোগপত্রে নাম ওঠা ১৪ জনের মধ্যে ১০ জন এখন কারাগারে আছেন।

এ ছাড়া, আহসান হাবিব হাসান ও মাহবুব হোসেন মোল্লা নামে দুই ব্যক্তির নাম অভিযোগপত্রে যুক্ত করা হয়নি। কারণ, তদন্ত কর্মকর্তা তাদের প্রকৃত নাম-ঠিকানার বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেনি। তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের প্রমাণও পাওয়া যায়নি।

সম্প্রতি অভিযোগপত্রের একটি কপি দ্য ডেইলি স্টারের হাতে এসেছে।

গত বছরের ২১ মার্চ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে রিজেন্ট হাসপাতালের একটি সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার পরপরই হাসপাতাল কর্মীদের দুটি দল ভুয়া সনদ তৈরি ও সম্ভাব্য কোডিভ রোগীদের কাছে তা সরবরাহ করতে শুরু করে। তদন্ত কর্মকর্তা প্রতিবেদনে বলেছেন, সাহেদের নির্দেশেই তারা এটা করেছিল।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, সুমন, পলাশ, তরিকুল শিবলী ও অমিত বণিক নামে চার অভিযুক্ত ব্যক্তি দিনে দুই শর মতো নমুনা সংগ্রহ করতেন। এর মধ্যে ৫০টি নমুনা পরীক্ষার জন্য জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে (নিপসম) পাঠানো হতো। বাকি নমুনাগুলোর ক্ষেত্রে পরীক্ষা ছাড়াই ভুয়া সনদ তৈরি করতেন তারা।

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, ভুয়া সনদ তৈরি এবং নিপসমের প্যাথলজি ও ল্যাব টেকনিশিয়ানের সই স্ক্যান করার কাজে যুক্ত ছিলেন মাহবুব, শিমুল পারভেজ ও সৈকত।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জানান, যাদের উচ্চ তাপমাত্রা, ঠান্ডা, কাশি ও গলায় ব্যাথার মতো উপসর্গ থাকত, তাদের পজিটিভ রিপোর্ট দেওয়া হতো। যাদের এ ধরনের উপসর্গ থাকত না, তাদের দেওয়া হতো নেগেটিভ রিপোর্ট।

আবার সমঝোতা স্মারকে বিনামূল্যে করোনা পরীক্ষার বিষয়ে জোর দেওয়া হলেও সাহেদ ব্যক্তিভেদে এজন্য সাড়ে তিন হাজার থেকে চার হাজার টাকা পর্যন্ত নিতেন। অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, এভাবে হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদ ও তার সহকারীরা ছয় হাজারের মতো রোগীর কাছ থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে তিন থেকে চার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

গত বছরের ৪ ফেব্রিুয়ারি সাহেদ রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা শাখায় মিজানুর রহমান নামে এক ব্যক্তিকে নিয়োগ দেন। সেখানে মিজানুর ও অন্য অভিযুক্তরা সাহেদের নির্দেশে এসব অবৈধ কর্মকাণ্ড চালাতে থাকেন। যা জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়ায়।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, ওই বছরের ১ জুন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে জমা দেওয়া এক আবেদনপত্রে সাহেদ দেখান যে, বিনামূল্যের করোনা পরীক্ষায় তার এক কোটি ৯৬ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এমনকি তিনি করোনা পরীক্ষার বিভিন্ন সরঞ্জামও সরকারকে ফেরত দেননি।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তার অভিমত, সাহেদ খুবই ধূর্ত, লোভী ও নিষ্ঠুর একজন মানুষ। পয়সা হাতানোর জন্য তিনি রোগীদের জীবন-মৃত্যুকে পরোয়া করেননি।

অভিযোগপত্রে মামলার সাক্ষী হিসেবে ৪০ ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

গত বছরের ৭ জুলাই সাহেদসহ আরও ১৫ জনের বিরুদ্ধে ভুয়া কোভিড সনদ প্রদানের পাশাপাশি করোনাভাইরাসের চিকিৎসা ও পরীক্ষার জন্য অতিরিক্ত ফি আদায়ের অভিযোগে মামলাটি করা হয়।

১৫ জুলাই একটি নৌকায় করে দেশ থেকে পালানোর সময় সাহেদকে সাতক্ষীরা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

২৮ সেপ্টেম্বর একটি অস্ত্র মামলার রায়ে সাহেদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়।

এর আগে ২০১০ সালের ১৮ আগস্ট চেক জালিয়াতির এক মামলার রায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ডের পাশাপাশি সাহেদকে ৫৩ লাখ টাকা জরিমানা করেন আদালত।

ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন মামুনুর রশীদ

আরও পড়ুন:

হাইকোর্টে সাহেদের জামিন আবেদন খারিজ

ঢাকা থেকে ধরে সাতক্ষীরায় আনা হয়েছে: আদালতে সাহেদ

অস্ত্র মামলায় সাহেদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

সাহেদসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

সাহেদের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরা আদালতে ২টি অভিযোগপত্র দাখিল

অস্ত্র মামলায় সাহেদের বিচার শুরু

সাহেদের বিরুদ্ধে অস্ত্র মামলা ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে স্থানান্তর

ফারমার্স ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎ: সাহেদের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়েছে দুদক

রিজেন্টের সাহেদকে নিয়ে সাতক্ষীরা সীমান্তে র‌্যাব

অপরাধের সাম্রাজ্য গড়তে মিডিয়াকে ব্যবহার করেছেন সাহেদ

অস্ত্র মামলায় সাহেদের বিরুদ্ধে চার্জশিট

সাহেদ গ্রেপ্তার: মানুষ কেন সন্দেহ করে?

বহুরূপী সাহেদ

সাহেদ ও রিজেন্ট হাসপাতালের দুই কর্মকর্তা রিমান্ডে

শুনানিতে করোনায় আক্রান্ত দাবি করে কাঁদলেন সাহেদ

রিজেন্টের চেয়ারম্যান সাহেদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

সাহেদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

সাহেদকে র‌্যাবের কাছে হস্তান্তর

সাহেদকে নিয়ে অভিযান, গাড়ি-পিস্তল উদ্ধার

Comments

The Daily Star  | English

No price too high for mass deportations

US President-elect Donald Trump has doubled down on his campaign promise of the mass deportation of illegal immigrants, saying the cost of doing so will not be a deterrent.

5h ago