করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট মোকাবিলা

ঢাকা শহরে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে ৬৮ শতাংশ রোগীর শরীরে অতিসংক্রামক ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি পাওয়ার যে তথ্য আন্তর্জাতিক উদারাময় গবেষণা কেন্দ্রের (আইসিডিডিআর,বি) গবেষণায় উঠে এসেছে, তা বড় কোনো চমক নয়।
Corona.jpg
ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা শহরে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে ৬৮ শতাংশ রোগীর শরীরে অতিসংক্রামক ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি পাওয়ার যে তথ্য আন্তর্জাতিক উদারাময় গবেষণা কেন্দ্রের (আইসিডিডিআর,বি) গবেষণায় উঠে এসেছে, তা বড় কোনো চমক নয়।

প্রথমে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে এই ধরনটি শনাক্ত হয়। পরে সংক্রমণ দ্রুতগতিতে আশপাশের জেলায় ছড়িয়ে পড়ে। এ অবস্থায় ধরনটি যে দ্রুত শহরগুলোতে ছড়িয়ে পড়বে তা মোটামুটি অনিবার্য ছিল। এ ক্ষেত্রে সংকট আসছে জেনেও আমাদের দূরদৃষ্টি ও পরিকল্পনার অভাব থাকার বিষয়টিই বিস্ময়কর!

কারণ আমরা জানতাম যে, করোনাভাইরাসের এই ধরন ভারতের পর নেপালেও কী পরিমাণ সর্বনাশের কারণ হয়েছিল। হাসপাতালগুলোতে রোগী উপচে পড়ছিল। হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছিল প্রতিদিন। এই পরিস্থিতিতে ভারত কিংবা নেপালের মতো একই ধরনের সংকটের মুখোমুখি আমরা হবো না, এমনটা ভেবে হলেও নির্বোধের মতো এ ধরনের হঠকারী আচরণ আমরা করতাম না— বিশেষ করে গত এপ্রিলে ঢাকাসহ অন্যান্য শহরগুলোতে ভয়াবহ অভিজ্ঞতার পর।

ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ রোধের জন্য যা যা করা হয়নি, ভাঙা রেকর্ডের মতো এখন তা নিয়ে কথা বলতে পারি আমরা। কিন্তু তাতে আমাদের সেই সময়ে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে না, যখন সংক্রমণের হার কমে আসছিল। আর দৃশ্যতই গ্রামাঞ্চলের অনেক জায়গায় কোভিডের কোনো চিহ্ন ছিল না। এখন পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছে। এমনকী গ্রামগুলোতেও কোভিডের উপসর্গ নিয়ে অনেক মৃত্যুর খবর আসছে।

এটা আমাদের আরও বড় সমস্যার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। যার কথা বার বার বিশেষজ্ঞরা বলে আসছিলেন। স্বল্প সংখ্যক নমুনা পরীক্ষা ও অ্যান্টিজেন টেস্টের ভেতর দিয়ে সংক্রমণ কত বিস্তৃতভাবে ও কোন ভ্যারিয়েন্টের মাধ্যমে ছড়িয়েছে তার প্রকৃত চিত্র পাওয়া যাচ্ছে না। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, উচ্চ সংক্রমণের এলাকাগুলোতে কোভিডের উপসর্গ নিয়ে অনেক মৃত্যুর ঘটনা হিসাবের বাইরে থেকে যাচ্ছে। মহামারির একেবারে শুরুর দিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পরীক্ষা, আক্রান্ত ব্যক্তিদের বিচ্ছিন্নকরণ ও কন্ট্যাক্ট ট্রেসিংয়ের ওপর জোর দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছে। যা এই ভাইরাসের প্রতিরোধের ক্ষেত্রে সবচেয়ে প্রাথমিক উদ্যোগ। তাহলে আমরা আমাদের পরীক্ষার সংখ্যা কেন এত কম রাখলাম?

করোনার ডেল্টা ধরনের প্রভাবের মধ্যেই এখন ভাইরাসটির সাউথ আফ্রিকান, নাইজেরিয়ান ও ইউকে ভ্যারিয়েন্টও সক্রিয় হয়ে উঠছে। তবে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার পাশাপাশি অল্প সময়ের মধ্যে মারত্মক শারীরিক জটিলতা তৈরির মাধ্যমে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ভারতকে যেভাবে বিধ্বস্ত করে দিয়েছে, তাতে করোনার এই ধরনটি বড় উদ্বেগের কারণ।

আমরা জানি যে, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়া ঠেকানোর ক্ষেত্রে আমরা বড় সুযোগ হারিয়েছি। তারপরেও এখন আমাদের অবশ্যই আসন্ন বিপদ সতর্কতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে। তার মানে হচ্ছে, তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি আগে যে উদ্যোগগুলো ফলপ্রসু হয়েছিল, সেগুলো একসঙ্গে চালিয়ে যেতে হেবে।

সরকারকে অবশ্যই পরীক্ষার সংখ্যা বাড়াতে হবে (ভাইরাস ও অ্যান্টিজেন টেস্ট দুটোই), নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য বিনামূল্যে পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি দেশব্যাপী স্বাস্থ্যবিধি কার্যকর করার জন্য মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে জনাকীর্ণ এলাকাগুলোতে।

ঢাকার রাস্তায় বের হলে মনে হয় ভাইরাসের কোনো অস্তিত্ব নেই। বাজারের ভিড় কিংবা যানজটে আটকে থাকা অবস্থাতেও অনেকে মাস্ক পরার বিষয়টি গ্রাহ্য করেন না। এটা অবশ্যই দ্রততার সঙ্গে বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি এক জায়গায় অনেক লোক জড়ো হওয়ার ব্যাপারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে।

সরকারকে অবশ্যই দ্রুততার সঙ্গে ভ্যাকসিন ক্রয় এবং সারা দেশের মানুষকে তা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে করে সবাইকে সংক্রমণের সেই গুরুতর অবস্থা থেকে সুরক্ষিত রাখা যায়। তা ছাড়া, সংক্রমণ তাদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে পারে।

এ ছাড়া, হাসপাতালগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) শয্যা, হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা ও অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়াতে হবে। কারণ সংকট খুব দূরে নয়।

Comments

The Daily Star  | English

DMCH doctors threaten strike after assault on colleague

A doctor at Dhaka Medical College Hospital (DMCH) was allegedly assaulted yesterday after the death of a private university student there, with some of his peers accusing the physicians of neglecting their duty in his treatment

5h ago