পাপুলের শূন্য আসনে আ. লীগ-জাপা মুখোমুখি
কুয়েতের আদালতে সাজা পেয়ে সংসদ সদস্যপদ হারানো শহীদ ইসলাম পাপুলের লক্ষ্মীপুর-২ শূন্য আসনের উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন কেবল আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির দুই জন প্রার্থী। নৌকার প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী শেখ মো. ফায়িজ উল্ল্যাহ শিপন।
নির্বাচনী প্রচারণার বিষয়ে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. ফায়িজ উল্ল্যাহর অভিযোগ, নৌকার প্রার্থী ও অনুসারীরা গত ১০-১২ দিন ধরে বিভিন্ন এলাকায় লাঙ্গল প্রতীকের ব্যানার, পোষ্টার, ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলছে। লাঙ্গলের প্রচার মাইক ভাঙচুর করেছে এবং দুই সেট প্রচার মাইক ছিনিয়ে নিয়ে গেছে।
লাঙ্গল প্রতীকের কর্মী-সমর্থকদের কেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য হুমকিও দেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, এ সব অনিয়মের বিরুদ্ধে তিনি জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
নৌকার প্রার্থী অ্যাডভোকেট নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, 'নৌকার পক্ষে গন জোয়ার দেখে জাতীয় পার্টির মাথা খারাপ হয়ে গেছে। তাই, তিনি আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছেন।'
তিনি বলেন, '২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনি এ আসনে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। পরে, জোটের সিদ্ধান্তের জাতীয় পার্টির নেতা মো. নোমানকে জোটের প্রার্থী করা হয়।'
'নোমান তার মনোনয়ন মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে পাপুলের কাছে বিক্রি করে দেন,' বলেন তিনি।
জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. ফায়িজ উল্ল্যাহর অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. নাজিম উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, জাতীয় পাটির প্রার্থীর এমন অভিযোগ তিনি পাননি।
অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
বিএনপির প্রার্থী না থাকায় আগামী ২১ জুনের এ উপনির্বাচন উত্তাপহীন হতে যাচ্ছে বলে মনে করছেন এলাকাবাসী।
স্থানীয় ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জাতীয় পার্টির প্রার্থীর এলাকায় পরিচিতি না থাকায় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বিজয়ের পথে এগিয়ে আছেন।
রায়পুর পৌর এলাকার বাসিন্দা পরিবহন শ্রমিক আলতাফ হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জাতীয় পার্টির প্রার্থী শেখ মো. ফায়িজ উল্ল্যাহ শিপন এলাকায় পরিচিত মুখ না। তিনি থাকেন ঢাকায়। নির্বাচন উপলক্ষে এলাকায় কিছু দিন ধরে অবস্থান করছেন।'
অনেকে ভোটার মনে করছেন, জাতীয় পার্টির প্রার্থীর ২০টি কেন্দ্রেও এজেন্ট দেওয়ার মতো অবস্থান নেই। অনেক ভোটার আবার জাতীয় পার্টির প্রার্থীর নামও শোনেননি বলে জানিয়েছেন।
লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. আনোয়ার হোসেন আকন্দ জানান, সোমবারে ভোট গ্রহণের জন্য সব ধরণের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। পর্যাপ্ত পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও আনসার মোতায়েন থাকবে। পাশাপাশি ২২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ২২টি মোবাইল টিম কাজ করবে।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লক্ষ্মীপুর-২ আসন থেকে ব্যবসায়ী শহীদ ইসলাম পাপুল সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। স্থানীয়দের অভিযোগ, রাজনীতির বাইরে থাকা পাপুল লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের ওপর ভর করে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
২০২০ সালে কুয়েতে পাপুলের বিরুদ্ধে মানব পাচার ও অর্থ পাচারের অভিযোগ ওঠে। পরে মামলা হলে তিনি কুয়েতেই গ্রেপ্তার হন। চলতি বছর ২৮ জানুয়ারি কুয়েতের আদালত পাপুলকে চার বছরের কারাদণ্ড দেন। এ ঘটনায় বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ সচিবালয় ২২ ফেব্রুয়ারি লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্যপদ শূন্য ঘোষণা করে।
গত ১১ এপ্রিল এ আসনে ভোট হওয়ার কথা থাকলেও, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করা হয়। আগামী সোমবার স্থগিত এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন:
পাপুলের সংসদ সদস্য পদ শূন্য ঘোষণা
পাপুলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে: সিনিয়র সচিব জাফর আহমেদ
Comments