‘পুলিশ সিগন্যাল দিলে গাড়ি তুলে দিয়ে চালিয়ে চলে আসবি’
‘সামনে পুলিশের চেকপোস্ট। পুলিশ সিগন্যাল দিলে গাড়ি তুলে দিয়ে চালিয়ে চলে আসবি। ধরা পড়া চলবে না’। পুলিশি গ্রেপ্তার থেকে বাঁচতে চোলাই মদ বহনকারী মাইক্রোবাসের চালককে এমনই নির্দেশনা দিয়েছিলেন মাইক্রোবাসের মালিক ও চোলাই মদ ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর।
চট্টগ্রামে গত ১১ জুন ভোরে পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) সালাউদ্দিনকে দ্বায়িত্বরত অবস্থায় গাড়িচাপা দিয়ে হত্যার ঘটনায় তিন জনকে গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য জানিয়েছে পুলিশ।
শুক্রবার রাতে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানার মইজ্জ্যারটেক এলাকা থেকে এই তিন জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তাররা হলেন- মাইক্রোবাসের চালক মো. বেলাল ওরফে উত্তম বিশ্বাস (৩৪), মো. রাশেদ ওরফে রাসেল (২৬) ও তার বাবা শামসুল আলম (৬০)। এ ঘটনায় চোলাই মদ ও মাইক্রোবাসের মালিক জাহাঙ্গীর এখনো পলাতক।
গ্রেপ্তারের পর হত্যা মামলায় চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম শফি উদ্দিনের আদালতে দোষ স্বীকার করে বিকালে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন মাইক্রোবাসচালক বেলাল। আর মাদকের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় আদালত তাদের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
চান্দগাঁও থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রাজেশ বড়ুয়া দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘টহল ডিউটিতে থাকার সময় এএসআই সালাউদ্দিন সংকেত দিলেও মাইক্রোবাসটি না থামিয়ে চালক তার ওপর দিয়ে চালিয়ে দেয়। গুরুতর আহত এএসআই সালাউদ্দিনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’
ঘটনার পর এক কিলোমিটার দূরে চান্দগাঁও বোর্ড স্কুল এলাকা থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় মাইক্রোবাসটি আটক করা হয়। মাইক্রোবাস তল্লাশি করে ৭৩০ লিটার চোলাই মদ উদ্ধার করার দাবি করেছে পুলিশ।
রাজেশ বড়ুয়া বলেন, ‘এই মাইক্রোবাসটিতে রাঙ্গামাটি থেকে চট্টগ্রামে চোলাই মদ নিয়ে আসা হচ্ছিল। বিভিন্ন সময়ে তারা পার্বত্য এলাকা থেকে চোলাই মদ এনে চট্টগ্রামের বোয়ালখালী ও পটিয়া উপজেলার বিভিন্ন মাদক বিক্রেতার কাছে বিক্রি করেন।’
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (উত্তর) আবু বক্কর সিদ্দিকী বলেন, ‘পুলিশ সদস্যের মৃত্যু ও গাড়িতে চোলাই মদ উদ্ধারের ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘পালিয়ে যাওয়ায় পুলিশ গাড়ির নম্বর নিয়ে মালিকানা যাচাই শুরু করে। পরে পুলিশ জানতে পারে, সেটি বোয়ালখালীর আহল্লা এলাকার জাহাঙ্গীর নামের একজনের, এরপরেই মামলার জট খুলতে শুরু হয়।’
‘জিজ্ঞাসাবাদে বেলাল জানিয়েছেন, ঘটনার দিন চোলাই মদ নিয়ে রাঙ্গামাটি থেকে আসার পথে তিনি একাই গাড়িতে ছিলেন। তাকে এস্কর্ট দিয়ে মোটরসাইকেলে করে সামনে চলছিলেন জাহাঙ্গীর। মাইক্রোবাসটি চট্টগ্রামে প্রবেশের পর জাহাঙ্গীর টহল পুলিশে থাকা এএসআই সালাউদ্দিনকে মেহরাজ ঘাটা এলাকায় দেখেন। পরে বেলালকে ফোন করে পুলিশের অবস্থান জানিয়ে তিনি বলেন, পুলিশ থামার সংকেত দিলে না থামতে, উল্টো গাড়ি চালিয়ে চলে আসতে’, বলেন এডিসি আবু বক্কর।
চান্দগাঁও থানার পরিদর্শক রাজেশ বড়ুয়া বলেন, ‘সেই নির্দেশনা মতোই গ্রেপ্তার এড়াতে সালাউদ্দিনকে চাপা দেয় বেলাল।’
তিনি আরও জানান, ঘটনার সময় জাহাঙ্গীরের সঙ্গে যারা ছিলেন, তাদের নামও পেয়েছে পুলিশ। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
আরও পড়ুন:
Comments