করোনায় বিপর্যস্ত খুলনা, দেশজুড়ে বেড়েছে মৃত্যু

খুলনা বিভাগে দিনকে দিন করোনা পরিস্থিতির আরও অবনতি হচ্ছে। এদিকে গতকাল রোববার সারাদেশে ৮২ জন করোনা রোগীর মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত সাত সপ্তাহে এটিই করোনা আক্রান্ত হয়ে সর্বোচ্চ মৃত্যু।
শ্বাসকষ্ট নিয়ে খুমেকের করোনা ইউনিটে ভর্তি হন সিরাজুল ইসলাম (৬০)। অবস্থার অবনতি হলে ভর্তির কিছুক্ষণ পরেই তিনি মারা যান। ছবি: দীপংকর রায়

খুলনা বিভাগে দিনকে দিন করোনা পরিস্থিতির আরও অবনতি হচ্ছে। এদিকে গতকাল রোববার সারাদেশে ৮২ জন করোনা রোগীর মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত সাত সপ্তাহে এটিই করোনা আক্রান্ত হয়ে সর্বোচ্চ মৃত্যু।

এ অবস্থায় সরকারকে আবারও কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এপিডেমিওলজি অ্যান্ড পাবলিক হেলথ কমিটি।

কমিটির সদস্য ডা. আবু জামিল ফয়সাল গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমরা আমাদের আগের সুপারিশ আবারও তুলে ধরেছি। এর মধ্যে ভাইরাস সংক্রমণ বেশি থাকা সবগুলো এলাকায় কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টি নিশ্চিত করা এবং কোভিড পরীক্ষা বাড়ানোর বিষয়টি রয়েছে।’

গত শনিবার রাতে কমিটির একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। করোনা পরিস্থিতি এবং কমিটির সুপারিশ কতটা বাস্তবায়িত হয়েছে, তা নিয়ে আলোচনা হয় সভায়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গতকালের হিসাবে মৃত ৮২ জনের মধ্যে ৩২ জনই খুলনা বিভাগের।

তবে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য যা বলছে, বাস্তবে খুলনার পরিস্থিতি তারচেয়ে আরও বেশি ভয়াবহ। খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালসহ সেখানকার অন্তত তিনটি হাসপাতালে ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি রোগী আছে বর্তমানে।

আমাদের খুলনা সংবাদদাতা জানিয়েছেন, আশপাশের জেলাগুলো থেকে আসা রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়ে যাওয়ায় খুমেকের স্বাস্থ্যসেবা বিশৃঙ্খল হয়ে পড়েছে। সাতক্ষীরা থেকে অনেক রোগী যাচ্ছেন সেখানে। পাশাপাশি বাগেরহাট, যশোর ও অন্যান্য জেলা থেকে যাওয়া রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। ফলে হাসপাতালটির ধারণক্ষমতা ১১০ জন হলেও গতকাল সেখানে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন ১৩৬ জন রোগী। তাদের দেখাশোনার জন্য আছেন মাত্র ১৪ জন  ডাক্তার ও ৬৭ জন নার্স।

নাম গোপন রাখার শর্তে খুমেকের বেশ কয়েকজন কর্মী আমাদের খুলনা সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন,  হাসপাতালটি হাই-ফ্লো অক্সিজেন ব্যবস্থার সংকটেও ভুগছে।

গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় খুলনায় করোনা শনাক্তের হার ছিল ২৭ দশমিক ৯৪ শতাংশ। অন্যদিকে সারাদেশে শনাক্তের হার ছিল ১৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ।

যোগাযোগ করা হলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগের পরিচালক  রাশেদা সুলতানা বলেন, ‘সামগ্রিক পরিস্থিতি এখন পর্যন্ত আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। গতকাল সদর হাসপাতালে ৭০টি শয্যা যোগ করা হয়েছে। সেখানকার রোগীদের জন্য আমরা অন্যান্য স্থান থেকে ডাক্তারদের নিয়ে এসেছি।’

খুলনায় করোনা সংক্রান্ত মৃত্যুর যে দৈনিক হিসাব পাওয়া যাচ্ছে, প্রকৃতপক্ষে তা আরও বেশি।

খুলনা সিভিল সার্জনের অফিস থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে,  চলতি মাসের প্রথম ২০দিনে করোনার উপসর্গ নিয়ে জেলায় অন্তত ৫২ জনের মৃত্যু হলেও সরকারি হিসাবে এ সংখ্যা ৩৪। এর আগের মাসে করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হয়েছে ৩১ জনের। কিন্তু, সরকারি হিসাবে, ওই মাসে মৃতের সংখ্যা ২৭।

রাজশাহী বিভাগেও করোনা পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল বিভাগটিতে করোনা আক্রান্ত ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল রাজশাহী জেলায় করোনা শনাক্তের হার ছিল ২৫ দশমিক ১১ শতাংশ। বিভাগীয় হিসাবে শনাক্তের হার ছিল ২২ দশমিক ৩১ শতাংশ।

ঢাকা বিভাগে গতকাল মারা গেছেন ২১ জন করোনা রোগী। এ ছাড়া, গত কয়েকদিন ধরে রাজধানীর করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ বাড়ছে। গত ১ জুন ঢাকা শহরের ১৫টি করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের জেনারেল ওয়ার্ডে ৭৫৭ জন এবং নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ১৭৭ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। আর গতকাল জেনারেল ওয়ার্ডে রোগীর সংখ্যা ছিল এক হাজার ৮৯ জন। আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন ১৮২ জন।

চট্টগ্রামের করোনা পরিস্থিতিও বেশ আশঙ্কাজনক। গতকাল সেখানে নয় জনের মৃত্যু হয়েছে। ১ জুন চট্টগ্রামের চারটি করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের জেনারেল বেডে ১৭২ জন রোগী ভর্তি থাকলেও গতকাল ভর্তি ছিলেন ২০৮ জন।

আমাদের টাঙ্গাইল সংবাদদাতা জানিয়েছেন, করোনা সংক্রমণ রোধে টাঙ্গাইল ও এলেঙ্গা পৌর এলাকায় জনসাধারণ ও যানবাহন চলাচলের ওপর সপ্তাহব্যাপী বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে স্থানীয় প্রশাসন। আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে এ বিধি-নিষেধ কার্যকর হবে।

বিধি-নিষেধ চলাকালে এসব এলাকায় শুধুমাত্র কাঁচাবাজার, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান ও ওষুধের দোকান খোলা থাকবে। সব বাজার, শপিং মল, হোটেল ও রেস্তোরাঁ বন্ধ থাকবে। এ ছাড়া, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যবাহী ট্রাক ছাড়া অন্য কোনো যানবাহন চলাচলের অনুমতি পাবে না।

ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন জারীন তাসনিম

Comments

The Daily Star  | English

Teesta floods bury arable land in sand, leaving farmers devastated

40 unions across 13 upazilas in Lalmonirhat, Kurigram, Rangpur, Gaibandha, and Nilphamari are part of the Teesta shoal region

1h ago