বাইডেনের সঙ্গে সাক্ষাতের সম্ভাবনা নেই: ইরানের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট রাইসি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে সাক্ষাতের কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়ে দিয়েছেন ইরানের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি।
এপি জানায়, তেহরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি ও আঞ্চলিক মিলিশিয়াদের প্রতি তেহরানের সমর্থন নিয়েও কোনো ধরনের আলোচনায় যাবেন না বলে জানিয়েছেন ইব্রাহিম রাইসি।
গত সপ্তাহের নির্বাচনে বিশাল ব্যবধানে জয়ের পর আজ সোমবার প্রথম সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন নীতিতে কঠোর অবস্থানের কথা জানান তিনি।
ইরানের ওপর থেকে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করলে বাইডেনের সঙ্গে তার বৈঠকের সম্ভাবনা আছে কিনা? সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি সরাসরি ‘না’ বলেন।
ইরানের সঙ্গে স্বাক্ষরিত পরমাণু সমঝোতা লঙ্ঘনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের এবং নিজেদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করার জন্য ইউরোপীয় দেশগুলোর তীব্র সমালোচনা করেন ৬০ বছর বয়সী এই নেতা।
তিনি বলেন, ‘ইরানের বিরুদ্ধে সব নিপীড়নমূলক নিষেধাজ্ঞাগুলো সরিয়ে নিতে যুক্তরাষ্ট্র বাধ্য। ইউরোপীয়দেরকে ওয়াশিংটনের চাপের কাছে নতি স্বীকার না করে ইরানের প্রতি নিজেদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে হবে।’
তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারকে ‘পররাষ্ট্রনীতির কেন্দ্র’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন তিনি।
সৌদি আরব সম্পর্কে রাইসি জানান, তেহরানে সৌদি দূতাবাস পুনরায় চালু করার ক্ষেত্রে ইরানের ‘কোনো সমস্যা নেই’ এবং সৌদির সঙ্গে ‘সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই’।
সম্পর্কের অবনতি হওয়ায় দূতাবাসটি ২০১৬ সাল থেকে বন্ধ রয়েছে।
এ ছাড়া, ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি ও আঞ্চলিক মিলিশিয়াদের প্রতি তেহরানের সমর্থন সম্পর্কে জানতে চাইলে রাইসি এই বিষয়গুলোকে ‘আলোচনার ঊর্ধ্বে’ বলে উল্লেখ করেন।
সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মতো শত্রুদের প্রতিরোধের জন্য ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহী ও লেবাননের সংগঠন হিজবুল্লাহ গ্রুপের মতো মিলিশিয়াদের ইরান সমর্থন দিয়ে থাকে।
ইব্রাহিম রাইসিই ইরানের প্রথম প্রেসিডেন্ট, যিনি প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে থেকেই মার্কিন নিষেধাজ্ঞার অধীনে আছেন। বিচার বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্বে থাকাকালীন আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচিতও হয়েছিলেন তিনি।
রাইসির বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় এখনো পর্যন্ত হোয়াইট হাউস কোনো মন্তব্য করেনি।
সোমবার সংবাদ সম্মেলনে প্রথমবারের মতো ১৯৮৮ সালে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের গণহত্যার বিষয় নিয়েও কথা বলেছেন তিনি।
ইরানের ইতিহাসের সেই অন্ধকার সময় নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে রাইসি বলেন, ‘আমি যেখানেই ছিলাম একজন আইনজীবী হিসেবে মানবাধিকার এবং মানুষের সুরক্ষা ও শান্তির রক্ষক হতে পেরে গর্বিত হয়েছি। আমার অফিসে আমি যে সব ব্যবস্থা নিয়েছি, তা সবসময় মানবাধিকার রক্ষার পক্ষে ছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট পদে দায়িত্ব পেয়ে আজ আমি মানবাধিকার রক্ষার জন্য নিজেকে বাধ্যগত বলে মনে করছি।’
অনেক ইরানি মনে করেন, রাইসিকে জিতিয়ে দেওয়ার জন্যই শুক্রবারের নির্বাচনটির নকশা করা হয়েছে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির অধীনে একটি উপদেষ্টা প্যানেল নির্বাচনে সংস্কারবাদী প্রার্থীদের অযোগ্য ঘোষণা করে।
সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এ বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটারদের অংশগ্রহণ ছিল সবচেয়ে কম, মাত্র ৪৮ দশমিক ৮ শতাংশ। অন্যদিকে, যারা ভোট দিয়েছেন তাদের মধ্যে প্রায় ৩৭ লাখ মানুষ দুর্ঘটনাক্রমে বা ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের ব্যালট পেপার নষ্ট করে ফেলেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, অনেক ভোটারই চার প্রার্থীর মধ্যে কাউকেই ভোট দিতে চাননি।
সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ইব্রাহিম রাইসি মোট ১ কোটি ৭৯ লাখ ভোট পেয়েছেন, যা মোট ২ কোটি ৮৯ লাখ ভোটের প্রায় ৬২ শতাংশ।
Comments