সেই ডেনমার্কই নকআউট পর্বে
সেরা তারকা ক্রিস্টিয়ান এরিকসনকে দল হারায় প্রথম ম্যাচেই। পরের দুই ম্যাচে টানা হার। ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের পরবর্তীতে রাউন্ডে খেলতে হলে তাই শেষ ম্যাচে জিততে হবে কমপক্ষের দুই গোলের ব্যবধানে। পাশাপাশি প্রার্থনা করতে হবে ফিনল্যান্ডের হারের। ভাগ্যদেবী যেন সব সমীকরণই মিলিয়ে দেন ডেনমার্ককে। রাশিয়াকে রীতিমতো উড়িয়ে দিয়েছে তারা। সঙ্গে বেলজিয়ামের কাছে ফিনল্যান্ডের হারে নকআউট পর্বে জায়গা করে নিয়েছে ১৯৯২ সালের চ্যাম্পিয়নরাই।
ডেনমার্কের পার্কান স্টেডিয়ামে এদিন রাশিয়াকে ৪-১ গোলের বড় ব্যবধানে হারিয়ে নকআউট পর্বে জায়গা করে নেয় ডেনিশরা। অপর ম্যাচে রাশিয়ার সেইন্ট পিটার্সবার্গ স্টেডিয়ামে ফিনল্যান্ডকে ২-০ গোলের ব্যবধানে হারিয়ে 'ব' গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বেলজিয়াম।
আগেই শেষ ষোলো নিশ্চিত করে রাখা বেলজিয়াম এদিনের জয়ে তিন ম্যাচে পূর্ণ ৯ পয়েন্ট পেয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়। তিন ম্যাচের মাত্র ১টি জয় নিয়েই দিত রাউন্ডে নাম লেখায় ডেনমার্ক। তিন ম্যাচে ফিনল্যান্ডের পয়েন্ট ৩। তবে গোল ব্যবধানে পিছিয়ে অপেক্ষায় রইল দলটি। তৃতীয় হওয়া সেরা চারের তালিকায় থাকলে হয়তো ভাগ্যের শিকে খুলতে পারে তাদের। অন্যদিকে তাদের সমান ৩ পয়েন্ট থাকলেও গোল ব্যবধানে পিছিয়ে থাকায় আসর থেকে ছিটকে গেল রাশিয়া।
আগের দুটি ম্যাচে হেরে যাওয়ার পর শেষ ম্যাচে জিতে নকআউট পর্বে উঠবেন এমনটা ভাবেননি হয়তো ডেনিশরাও। তাই ম্যাচের আগেই তারা জানিয়েছিলেন এরিকসনের জন্য জিততে চান তারা। ম্যাচ জিতলেনও দুর্দান্তভাবে। ভাগ্য সঙ্গে থাকায় এক জয়েই শেষ ষোলোতে। ৩৮তম মিনিটে প্রথম গোল পায় তারা। পিয়েরে-এমিলি হজবার্গের কাছ থেকে বল পেয়ে দূরপাল্লার বুলেট গতির এক শটে লক্ষ্যভেদ করেন মিকেল ড্যামসগার্ড।
৫৯তম মিনিটে অবশ্য ডেনিশদের একটি গোল উপহার দেয় রাশিয়া। বাঁ প্রান্ত থেকে গোলরক্ষক মাতভেই সফনোভকে ব্যাকপাস দিতে গিয়েছিলেন এক রাশিয়ান খেলোয়াড়। তবে গোলরক্ষক বল ধরার আগেই তা ছিনিয়ে নেন ইউসুফ পৌলসেন। ফাঁকা পোস্টে বল জালে জড়াতে কোনো ভুল হয়নি তার।
৭০তম মিনিটে ব্যবধান কমায় রাশিয়া। সফল স্পটকিকে গোল আদায় করেন আরতেম ডিজুবা। ডি-বক্সে জানিক ভেস্টারগার্ডকে ফাউল করলে পেনাল্টির বাঁশি বাজিয়েছিলেন রেফারি। ব্যবধান ফের বাড়াতে রাশিয়ান শিবিরে তুমুল চাপ সৃষ্টি ডেনিশরা। নয় মিনিট পরই সফল হয় দলটি। ডি-বক্সে জটলা থেকে বল পেয়ে আরও একটি বুলেট গতির শটে আরও একটি গোল পায় তারা। প্রায় ২৫ গজ দূর থেকে নিখুঁত এক শটে লক্ষ্যভেদ করেন আন্দ্রেয়াস ক্রিস্টিনসেন।
৮২তম পাল্টা আক্রমণ থেকে রাশিয়ান শিবিরে শেষ পেরেকটি ঠুকে দেন জোয়াকিম মাহলে। হজবার্গের কাছ থেকে বল পেয়ে ডি-বক্সে ঢুকে এক খেলোয়াড়কে কাটিয়ে দারুণ এক শট বল জালে পাঠান তিনি। ফলে বড় জয়েই শেষ ষোলোর টিকেট কাটে দলটি।
অপর ম্যাচে একচ্ছত্র আধিপত্য থাকলেও গোলের দেখা মিলছিল না বেলজিয়ামের। মূলত গোলরক্ষক লুকাস রাডেস্কির দক্ষতাতেই ম্যাচ ছিল ফিনল্যান্ড। একের পর এক সেভে বেলজিয়ানদের হতাশ করছিলেন। কিন্তু তার ভুলেই আবার গোল খেয়ে বসে দলটি। পরে সমতায় ফিরতে অলআউট খেলতে গিয়ে আরও একটি গোল হজম করে তারা।
ম্যাচের ২২তম মিনিটেই এগিয়ে যেতে পারতো বেলজিয়াম। একক দক্ষতায় ডি-বক্সে ঢুকে দারুণ এক শট নিয়েছিলেন কেভিন ডি ব্রুইনা। তার শট এক ফিনল্যান্ড খেলোয়াড় ব্লক করতে গিয়ে জালের দিকেই পাঠিয়ে দিচ্ছিলেন। তবে গোলরক্ষক লুকাস রাডেস্কির মাথায় লেগে ফিরে আসলে কোনো বিপদ হয়নি। ৪২তম মিনিটে ফের ফিনল্যান্ডের ত্রাতা রাডেস্কি। ডি ব্রুইনার বাড়ানো বল ধরে ডান প্রান্ত থেকে অসাধারণ এক কোণাকোণি শট ডকু। কিন্তু তার চেয়েও দারুণ দক্ষতায় সে ঠেকান ফিনল্যান্ড গোলরক্ষক।
৫৬তম মিনিটে নাসের চাডলি ও ৫৮তম মিনিটে এডেন হ্যাজার্ডকেও হতাশ করেন গোলরক্ষক রাডেস্কি। ৬৩তম মিনিটে অবিশ্বাস্য এক সেভ করেন তিনি। ডি-বক্সে ঢুকে দারুণ এক কাটব্যাক করেছিলেন আলেক্স হুইসেল। দারুণ শট নিয়েছিলেন হ্যাজার্ডও। ঝাঁপিয়ে পড়ে অসাধারণ এক সেভে দলকে ফের রক্ষা করেন রাডেস্কি।
৭৪তম মিনিটে সেই রাডেস্কির আত্মঘাতী গোলে পিছিয়ে পরে ফিনল্যান্ড। কর্নার থেকে উড়ে আসা বলে হেড থমাস ভারমালেন। তবে বারপোস্টে লেগে ফিরে আসার সময় গোলরক্ষকের হাতে লেগে জালে জড়ালে এগিয়ে যায় বেলজিয়ানরা।
৭৮তম সমতায় ফেরার দারুণ এক সুযোগ পেয়েছিলেন টিমু পুক্কি। প্রথম দফায় শট না নিয়ে কাটাতে গিয়ে ভুল করে ফেলেন তিনি। পরের মিনিটে রবিন লডের দূরপাল্লার শট অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট না হলে সমতায় ফিরতে পারতো দলটি। ৮২তম মিনিটে সব আশা শেষ হয়ে যায় ফিনল্যান্ডের। ব্যবধান বাড়ায় বেলজিয়াম। ডি ব্রুইনার কাছ থেকে বল পেয়ে নিখুঁত শটে লক্ষ্যভেদ করেন লুকাকু।
Comments