রাবিতে ‘অবৈধ’ নিয়োগপ্রাপ্তদের আন্দোলনে সিন্ডিকেট সভা স্থগিত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সিন্ডিকেট সভা ঠেকাতে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে ‘অবৈধ’ নিয়োগপ্রাপ্তদের অবস্থান। ছবি: স্টার

চাকরিতে পদায়নের দাবিতে আন্দোলন স্থগিত করার একদিনের মাথায় উপাচার্য ভবন ঘেরাও করে আবারো আন্দোলনে নেমেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সাবেক উপাচার্য এম আবদুস সোবহানের শেষ দিনে ‘অবৈধ’ নিয়োগপ্রাপ্তরা।

জানা যায়, আজ রাত সাড়ে ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহার সভাপতিত্বে একটি সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তবে, আন্দোলনের মুখে রাত সাড়ে ৮টায় অনুষ্ঠিতব্য সিন্ডিকেট সভা স্থগিত ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

সভা শুরু আগে সন্ধ্যা ৬টা থেকেই ‘অবৈধ’ নিয়োগে চাকরিপ্রাপ্ত ছাত্রলীগ ও যুবলীগের প্রায় অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন বলে দ্য ডেইলি স্টারকে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর লিয়াকত আলী।

আন্দোলনকারী মাহাফুজ আল আমিন বলেন, ‘প্রশাসন আমাদের চাকরিতে পদায়নের বিষয়টি সমাধান করবে বলে আশ্বাস পেয়ে গতকাল আমরা আন্দোলন স্থগিত করেছিলাম। কিন্তু, আজকে তারা সিন্ডিকেট সভা করতে চাইছেন। আমরা ধারণা করছি- আজকের সিন্ডিকেট সভায় আমাদের নিয়োগ বিষয়ে প্রস্তাব তুলে বাতিল করতে পারে। আমরা চাকরিতে যোগদান করতে চাই। আমরা এখানে অবস্থান নিয়েছি, যোগদানের ঘোষণা না দিলে অবস্থান ছাড়ব না। আর আমরা কোনো সিন্ডিকেট সভা করতে দেব না।’

ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা সাংবাদিকদের বলেন, ‘গত সোমবার তাদের সঙ্গে আলোচনার প্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, আমরা ফাইন্যান্স কমিটির সভা এবং সিন্ডিকেট সভা করতে পারব, তারা কোনো বাঁধা দেবেন না। সে প্রেক্ষিতে আজকের সভা ডাকা হয়েছিল। এ ছাড়া, আজকের সভায় তাদের নিয়োগ সংক্রান্ত কোনো এজেন্ডাও ছিল না। তবে, আজ তারা সভা শুরুর আগে থেকেই অবস্থান নিয়েছেন, তাই সভা শুরু করতে পারিনি। এমন উদ্ভূত পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে আজ সভাটি স্থগিত ঘোষণা করেছি।’

গত কয়েকদিন ধরে নিয়োগপ্রাপ্তরা তাদের পদে যোগদানের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন। গত শনিবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি প্রশাসনিক ভবন, সিনেট ভবন এবং উপাচার্য ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন আন্দোলনকারীরা। এদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থবছরের শেষ ফাইন্যান্স কমিটির সভা হওয়ার কথা থাকলেও উদ্ভূত পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে তা স্থগিত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এর পরদিন রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষকে চার ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে প্রশাসনিক ভবনে অবরুদ্ধ করে রাখেন আন্দোলনকারীরা। পরবর্তীতে রাত ১০টার দিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের পরামর্শে তারা সব ভবনের তালা খুলে দেন।

পরবর্তীতে গতকাল সোমবার প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় বসেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। আলোচনা শেষে, দাবি পূরণের ব্যাপারে আশ্বাস পেয়ে চলমান আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করেন আন্দোলনকারীরা।

উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আবদুস সোবহান তার মেয়াদের শেষ কর্মদিবস ৬ মে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ১৩৭ জনকে নিয়োগ দিয়ে যান। মন্ত্রণালয় সেদিনই এই নিয়োগ ‘অবৈধ’ ঘোষণা করে তদন্ত কমিটি গঠন করে।

সে প্রেক্ষিতে ৮ মে সরকারের কোনো সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত এই ১৩৭ জনের চাকরিতে যোগদান প্রক্রিয়া স্থগিত ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

পরে তদন্ত কমিটি গত ২৩ মে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। তদন্ত কমিটি বিদায়ী উপাচার্যসহ বেশ কয়েকজনের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেয়েছে। প্রতিবেদনে আবদুস সোবহানের দেশ ত্যাগেও নিষেধাজ্ঞার সুপারিশ করা হয়েছে। তবে, এ প্রেক্ষিতে এখনো শিক্ষা মন্ত্রণালয় দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এর মধ্যেই ‘অবৈধ’ নিয়োগপ্রাপ্তরা যোগদানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন করছেন।

আরও পড়ুন:

আ. লীগ নেতাদের আশ্বাসে রাবির ‘অবৈধ’ নিয়োগপ্রাপ্তদের আন্দোলন স্থগিত

রাবি প্রশাসন ও উপাচার্য ভবনে তালা দিয়েছে নিয়োগপ্রাপ্ত ছাত্রলীগ নেতারা

রাবির ‘অবৈধ’ নিয়োগের ‘বৈধতা’ চায় নিয়োগপ্রাপ্তরা

মানবিক কারণে ছাত্রলীগ নেতাদের নিয়োগ দিয়েছি: সাবেক ভিসি অধ্যাপক আব্দুস সোবহান

রাবিতে এডহক নিয়োগের যোগদান স্থগিত

রাবি উপাচার্যের নিয়োগ দুর্নীতি: ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি রাবিতে

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ অবৈধ: শিক্ষা মন্ত্রণালয়

রাবি উপাচার্যের জামাতার বিরুদ্ধে ‘গোপন নথি’ চুরির অভিযোগ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মহানগর ও রাবি ছাত্রলীগের সংঘর্ষ

‘দুর্নীতিবিরোধী’ শিক্ষকদের বাধার মুখে রাবি সিন্ডিকেট সভা স্থগিত

রাবি উপাচার্য ভবনে আবারও তালা!

Comments

The Daily Star  | English

What are the five charges against Hasina at ICT?

Former home minister Kamal and ex-IGP Mamun have also been accused

17m ago