মিশরে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আন্তর্জাতিক সেমিনার
মিশরের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডক্টর ইসাম আবদেল আজিজ সরাফ তার দেশের নতুন প্রজন্মকে বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংগ্রাম, অবদান ও কীর্তি সম্পর্কে জানা এবং অধ্যয়ন করার অনুরোধ জানিয়েছেন।
তিনি এ লক্ষ্যে দুই দেশের মধ্যেকার সাংস্কৃতিক চুক্তির আলোকে বাংলাদেশকে আরও উদ্যোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন, যাতে মিশরের বর্তমান প্রজন্ম অনুপ্রেরণা পেতে পারে।
গত শনিবার রাজধানী কায়রোতে অনুষ্ঠিত ‘বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের’ ওপর আন্তর্জাতিক সেমিনারে ইসাম আবদেল আজিজ সরাফ এসব কথা বলেন।
রাজধানী ঢাকার হোটেল শেরাটনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের অংশ হিসেবে এই সেমিনারের আয়োজন করে মিশরে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস।
মিশরের সাবেক রাষ্ট্রপতি আনোয়ার সাদাতের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর গভীর বন্ধুত্বের কথা উল্লেখ ইসাম সরাফ বলেন, ‘১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে মিশর মনে-প্রাণে সমর্থন করেছিল। ভ্রাতৃপ্রতিম দুই দেশের মধ্যে সেই বন্ধন দিন দিন আরও মজবুত হয়েছে। ব্যবসা, বিনিয়োগ, শিক্ষা ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রে মিশর-বাংলাদেশ পারস্পরিক সহযোগিতা এবং উন্নয়ন অংশীদারিত্ব অনেক বেড়েছে। বাংলাদেশ-মিশর ওআইসি, ন্যাম, ডি-৮ এবং এএমইডিতে একসঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে।’
দূতালয় প্রধান মোহাম্মদ ইসমাঈল হোসেনের সঞ্চালনায় সেমিনারে কায়রোর ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শেখ শামিম হাসনাইন মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
ড. শেখ শামিম হাসনাইন বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের প্রেক্ষাপট, প্রভাব ও স্বাধীনতার ঘোষণা ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘৭ মার্চের ভাষণ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে মুক্তিপাগল জনতা দেশ স্বাধীনের প্রস্তুতি নিয়েছিল এবং দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করেছিল।’
স্বাগত বক্তব্যে মিশরে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মনিরুল ইসলাম ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ বঙ্গবন্ধুর এই নীতি-আদর্শ উল্লেখ করে বলেন, ‘স্বাধীনতার পর বৈশ্বিক অঙ্গনে বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্রনীতি নিরপেক্ষতার খ্যাতি লাভ করেছিল। তার গতিশীল পররাষ্ট্রনীতির খ্যাতি এবং উচ্চ নৈতিক অবস্থানের কারণেই অত্যন্ত স্বল্প সময়ের মধ্যে বিশ্বের প্রায় সব দেশের স্বীকৃতি অর্জন করতে পেরেছিল বাংলাদেশ।’
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। তার সফল নেতৃত্বে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ও সামাজিক সূচকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। যার বীজ রোপণ করেছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।’
আলোচনায় ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লিলা কিটি পুমফেরি বলেন, ‘আজও অবাক হই, যখন ভাবি কীভাবে একজন নেতা (বঙ্গবন্ধু) একা পুরো জাতিকে লড়াইয়ের জন্য অনুপ্রাণিত করেছিলেন, স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন। যার কারণে তিনি সারাবিশ্বের নিপীড়িত ও বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ের একজন অগ্রনায়ক হয়ে উঠেছিলেন।’
বিশ্বখ্যাত আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ওলামা পরিষদের (এলডার্স কাউন্সিল) পরিচালক জেনারেল মাহমুদ সেদকি আল-হাওয়ারি বাঙালি জাতির স্বাধিকার আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবিস্মরণীয় অবদানের কথা তুলে ধরেন।
আলোচনা শেষে অনুষ্ঠিত মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রবাসী বাংলাদেশি ছাড়াও মিসরীয় শিল্পীরা সঙ্গীত পরিবেশন ও কবিতাপাঠ করেন।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিক, মিশরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত বাংলাদেশি অধ্যাপক, শিক্ষার্থী, কর্মজীবী এবং কমিউনিটি ব্যক্তিত্বরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে শিল্পোদ্যোক্তা মো. জাকির হোসেন, রফিকুল ইসলাম ও মো. জসীম উদ্দিন, কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি গবেষক ডা. মোহাম্মদ আরিফুল হক, ডা. আলিমুল হক ও ডা. হাফিজুর রহমান, পেশাজীবী মো. সোহেল এবং মো. মালেক উপস্থিত ছিলেন।
Comments