সাংবাদিককে কুপিয়ে জখম, মা-ছেলেকে পেটানোর অভিযোগ কাদের মির্জার অনুসারীদের বিরুদ্ধে

আহত সাংবাদিক প্রশান্ত সুভাষ চন্দ্র। ছবি: স্টার

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে বাড়িতে ঢুকে এক সাংবাদিককে কুপিয়ে গুরুতর জখম এবং তার মা ও ছেলেকে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠেছে বসুরহাট পোরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জার অনুসারীদের বিরুদ্ধে।

আহত প্রশান্ত সুভাষ চন্দ্র (৪৭) দৈনিক বাংলাদেশ সমাচারের কোম্পানীগঞ্জ প্রতিনিধি ও আঞ্চলিক অনলাইন পোর্টাল চলমান সময়’র চিফ রিপোর্টার।

সুভাষ চন্দ্র বর্তমানে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার মাথায় গুরুতর আঘাতের চিহ্ন ও হাত-পায় জখম আছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। তার মা বেবী রাণী (৭০) ও ছেলে প্রমিতও (২০) হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে উপজেলার সিরাজপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের শাহাজাদপুর গ্রামের কবিরাজ বাড়িতে এ হামলার ঘটনা ঘটে। পরিবারের অভিযোগ, মেয়র আবদুল কাদের মির্জার অনুসারীরা এ হামলা চালিয়েছে।

আহত সাংবাদিক সুভাষ চন্দ্রের ছোট ভাই প্রজিত চন্দ্র দাস দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘কেচ্চা রাসেল, পিচ্চি মাসুদ, টুটুল মজুমদার ও ইমনের নেতৃত্বে এ হামলা হয়েছে। তারা কাদের মির্জার অনুসারী। এ ঘটনায় আমরা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

‘গত পাঁচ মাস ধরে কোম্পানীগঞ্জে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের চলমান দ্বন্দ্ব নিয়ে সুভাষ চন্দ্র ফেসবুকে পোস্ট ও পত্রিকায় রিপোর্ট করেছেন। এ কারণে বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আব্দুল কাদের মির্জা তার ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। কিছুদিন আগে এক সমাবেশে বক্তব্য দেওয়ার সময় কাদের মির্জা প্রকাশ্যে সুভাষের হাঁটুর নিচ থেকে ভেঙে দেওয়ার জন্য অনুসারীদের নির্দেশ দেন’, বলেন তিনি।

সুভাষ চন্দ্রের মা বেবী রাণী বলেন, ‘আজ দুপুর পৌনে ১টার দিকে সুভাষ বাড়ির সামনের ঘরে একা শুয়ে ছিল। হঠাৎ সেখানে মির্জা কাদেরের অনুসারী কেচ্চা রাসেল, পিচ্চি মাসুদ, টুটুল মজুমদার, ইমনের নেতৃত্বে ৪০-৪৫ জন অস্ত্রধারী হামলা চালায়। তারা সুভাষকে লোহার রড দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে বাম হাতের দুটি অংশে ভেঙে দেয় এবং মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে।’

তারা আরও জানান, কেচ্চা রাসেল একপর্যায়ে সুভাষকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে। এসময় সুভাষের মা ও ছেলে তাকে বাঁচাতে এলে তাদেরকেও বেধড়ক পেটানো হয়। সেসময় তাদের চিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে হামলাকারীরা চলে যায়।

হামলায় আহত সাংবাদিক সুভাষ চন্দ্রকে প্রথমে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য নোয়াখালী সদরে নিতে বলেন।

নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার সৈয়দ মহিউদ্দিন আবদুল আজিম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘দুপুর আড়াইটার দিকে সুভাষ চন্দ্র নামের একজনকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হয়েছে। তার মাথায় গুরুতর আঘাতের চিহ্ন এবং হাত-পায়েও জখম আছে। তিনি বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।’

কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফ উদ্দিন আনোয়ার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘আহত সুভাষ চন্দ্রকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর পুলিশ তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেবে।’

হামলার অভিযোগ বিষয়ে জানতে বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আব্দুল কাদের মির্জার ফোনে যোগাযোগ করা হলে তার ব্যক্তিগত সহকারী শাহাদাত সাহেদ ফোন ধরেন।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘মেয়র এখন বিশ্রাম করছেন। সুভাষ চন্দ্র ফেসবুকে লেখালেখি করেন। তিনি মিজানুর রহমান বাদলের অনুসারী ও তার চাটুকার। তার ওপর হামলার কথা শুনেছি। কে বা কারা হামলা করেছে, তা মেয়র জানেন না।’

এ হামলার সঙ্গে মেয়র ও তার অনুসারীদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলেও দাবি করেন তিনি।

এদিকে, হামলার পরই নোয়াখালী জেলা ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরা হামলাকারী ও হামলার নির্দেশদাতাকে দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।

Comments

The Daily Star  | English

Doubts growing about interim govt’s capability to govern: Tarique

"If we observe recent developments, doubts are gradually growing among various sections of people and professionals for various reasons about the interim government's ability to carry out its duties."

2h ago