‘আমলানির্ভরতায়’ তোফায়েল আহমেদের ক্ষোভ
রাজনীতিবিদদের ‘গুরুত্ব না দিয়ে’ সরকারের বিভিন্ন কাজে ‘আমলানির্ভরতার’ উদাহরণ টেনে সংসদে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা ব্যক্ত করেছেন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা তোফায়েল আহমেদ।
আর এ প্রসঙ্গে তোফায়েল আহমেদের সুরেই গলা মিলিয়েছেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ।
আজ সোমবার জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘এখন আমাদের জেলায় জেলায় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে। মানুষ মনে করে আমরা করোনার সময় মানুষকে যে সব সাহায্য- সহযোগিতা করেছি, সেগুলো ওই প্রশাসনিক কর্মকর্তারাই দিয়েছেন। অথচ প্রশাসনিক কর্মকর্তারা কিন্তু এলাকায় যাননি। আমার এলাকায় যাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তিনি এখন পর্যন্ত এলাকায় একবারও আসেননি।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের দুর্ভাগ্য, আমরা যারা এই জাতীয় সংসদের সদস্য, এমন একজনও নেই, যিনি এই করোনাকালীন সময়ে নিজস্ব অর্থায়নে বা যেভাবেই হোক গরীব-দুখী মানুষের পাশে দাঁড়াননি। সবাই দাঁড়িয়েছেন। আমি আমার নিজের এলাকায় ৪০ হাজার মানুষকে রিলিফ দিয়েছি। কিন্তু, মানুষ মনে করে প্রশাসনিক কর্মকর্তারাই এসব দিয়েছে।’
আওয়ামী লীগের এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘একটি রাজনৈতিক সরকার এবং রাজনীতিবিদদের যে কর্তৃত্ব, কাজ, সেটি আজ ম্লান হয়ে যায়।’
এসময় সরকারি আমলাদের নিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রীর একটি বক্তব্য প্রসঙ্গে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘পরিকল্পনামন্ত্রী বলেছেন, ফেরাউনের সময়ও আমলা ছিল। এসব কথা-বার্তা মানুষ পছন্দ করে না।’
তিনি বলেন, ‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স অনুযায়ী এমপিরা সেক্রেটারিদের ওপরে। এই জিনিসটা খেয়াল করতে হবে। প্রশাসনের কর্মকর্তারাও থাকবে, কিন্তু রাজনীতিবিদদের বাদ দিয়ে নয়।’
তোফায়েল বলেন, ‘যারা রাজনীতিবিদ, যারা নির্বাচিত প্রতিনিধি, তাদের জন্য নির্ধারিত স্থান যেখানে আছে, সেখানে তাদের থাকা উচিত। কারণ আমাদের জেলায় একজন সচিব যাবেন। আমরা তাকে বরণ করে নেব, ঠিক আছে। কিন্তু, তারা যান না। একদিনের জন্য তারা দায়িত্বপ্রাপ্ত। ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হন। তখন মন্ত্রীরা জেলার দায়িত্ব পালন করতেন। সেখানে গেলে কর্মীরা আসতো। মন্ত্রীরা গ্রামে-গঞ্জে যেতেন। কোথায় যেন সে দিনগুলো হারিয়ে গেছে।’
পরে তোফায়েল আহমেদের বক্তব্যের সঙ্গে একই সুরে কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘আজকে দেশে কোনো রাজনীতি নেই। তোফায়েল আহমেদ যথার্থ বলেছেন। দেশ রাজনীতিশূন্য। কোথাও রাজনীতি নেই। প্রত্যেকটা জেলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সচিবদের। প্রধানমন্ত্রী ডিসিদের সঙ্গে কথা বলেন। আর এমপি সাহেবরা পাশাপাশি বসে থাকেন, দূরে। তারপর বলে ডিসি সাহেব, আমি একটু কথা বলব প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। এই হচ্ছে রাজনীতিবিদদের অবস্থা।’
ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ডিসিদের সঙ্গে যখন কথা বলেন, তখন এমপিদের কোনো দাম থাকে না। এটা তোফায়েল আহমেদ সাহেব যথার্থ বলেছেন।’
জাতীয় পার্টির এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘রাজনীতির মঞ্চগুলো আস্তে আস্তে ব্যবসায়ীরা দখল করছেন। দেশ চালাচ্ছে কারা? দেশ চালাচ্ছেন জগৎশেঠরা। দেশ চালাচ্ছেন আমলারা।’
‘আমরা রাজনীতিবিদরা এখন তৃতীয় লাইনে দাড়িয়ে আছি। এই হচ্ছে আমাদের দুর্ভাগ্য। অথচ এই দেশ স্বাধীন করেছেন রাজনীতিবিদরা’, বলেন তিনি।
ব্যবসায়ীদের মধ্যে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি থাকে না মন্তব্য করে ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘বাতাস যেদিকে, তারা (ব্যবসায়ীরা) সেদিকে ছাতা ধরে। ক্ষমতায় আমরাও ছিলাম, তিক্ত অভিজ্ঞতা আমাদের আছে।’
দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি প্রসঙ্গে ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগের বৃহস্পতি এখন তুঙ্গে। কারণ, দেশে কোনো রাজনীতি নেই। রাজনীতির নামে এখন পালাগানের অনুষ্ঠান হয়। সন্ধ্যার সময় ওবায়দুল কাদের একদিকে পালা গান। বিএনপির মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একটু পরেই টেলিভিশনে আরেকটা পালা গান করেন।’
‘আমরা রাজনীতিবিদরা ঘরে বসে টেলিভিশনে পালাগানের রাজনীতি দেখি। এই পালাগান চলছে দশ বছর’, যোগ করেন তিনি।
Comments