‘শেষটা পাগলাটে, শেষটা সুন্দর’
এক গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর পেনাল্টি মিস, দ্রুতই আবার দুই গোলে পিছিয়ে যাওয়া। সেই জায়গা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে শেষ সময়ে দুই গোল শোধ। অবশেষে টাইব্রেকার রোমাঞ্চে জয়। সোমবার রাতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের বিপক্ষে এমন নাটকীয়তায় ম্যাচ জেতা অবিশ্বাস্য লাগছে সুইজারল্যান্ডের। প্রথমবার ইউরোর কোয়ার্টার ফাইনালে যাওয়া দলটি এখন বিশ্বাস করছে, যেকোনো কিছুই সম্ভব।
সোমবার বুখারেস্টে মূল ম্যাচ ৩-৩ গোলে সমতায় থাকার পর টাইব্রেকার পেনাল্টি শ্যুটআউটে ৫-৪ গোলে জিতেছে সুইসরা। দুই গোল করে প্রথম অংশের নায়ক নিশ্চিতভাবেই হারিস সেফেরোভিচ। তবে কিলিয়ান এমবাপের পেনাল্টি ঠেকিয়ে সব আলো নিজের দিকে নিয়ে গেছেন সুইস গোলরক্ষক ইয়ান সোমার।
ম্যাচ শেষে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে প্রায় যেন উত্তেজনায় কাঁপছেন তিনি, ‘এটা অবিশ্বাস্য, কী এক ম্যাচ, কী এক ফুটবল রাত! শেষটা পাগলাটে, শেষটা সুন্দর। খেলার মাঝে আমরা পেনাল্টি মিস করলাম, এরপর দুই গোলে পিছিয়ে গেলাম তখন ফেরাটা ছিল কঠিন। আমি আমার দলকে নিয়ে গর্বিত যেভাবে ফিরেছি।’
ম্যাচের ১৫ মিনিটে স্টিভেন জুবেরের ক্রসে লাফিয়ে উঠে হেড করে সুইসদের এগিয়ে নিয়েছিলেন সেফেরোভিচ। ৫২ মিনিটে তারা সেই লিড ২-০ করার সুযোগ হাতছাড়া করে পেনাল্টি মিস করে। রিকার্দো রদ্রিগেজের স্পট-কিক দারুণ দক্ষতায় রুখে দেন ফরাসি গোলরক্ষক হুগো লরিস।
৫৭ ও ৫৯ মিনিটে দুই গোল করে উল্টো ফ্রান্সকে এগিয়ে নেন করিম বেনজামা। ৭৫ মিনিটে চোখ ধাঁধানো শটে পল পগবা গোল করলে বড় জয় নিয়েই শেষ আটে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয় ফ্রান্সের।
কে জানত নাটকের বাকি তখনো কত কিছু! ৮১ মিনিটে আরেকটি দারুণ হেডে ব্যবধান কমান সেফেরোভিচ। একদম শেষ মিনিটে গাভরানোভিচ আনেন সমতা। অতিরিক্ত সময়ে সমাধান না হওয়া এরপর টাইব্রেকার নাটক। তাতে সুইসরা সবগুলো শটে গোল পেলেও এমবাপে আটকে যান সোমারের গ্লাভসে। এই গোলরক্ষক জানান, এদিন অন্যরকম আগুণ নিয়েই নেমেছিলেন তারা। ইতিহাস গড়ার লক্ষ্যে হাল না ছাড়ার মন্ত্র ছিল সবার বুকে, ‘আমরা সব সময় নিজেদের উপর বিশ্বাস রেখেছি। খেলার আগে নিজেরা বলাবলি করেছি যাইহোক, আমরা পিছিয়ে পড়ি বা খারাপ অবস্থায় থাকি শেষ পর্যন্ত লড়ব, হাল ছাড়ব না। এটা আমাদের সুযোগ পরের রাউন্ডে যাওয়ার যা গত তিন-চারবার পারিনি।’
বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে যারা পিছিয়ে থেকে হারাতে পারে তাদের তো বড় স্বপ্নই থাকার কথা। শেষ আটেই সুইস রূপকথার ইতি না টেনে বড় কিছুর আশা সোমারের, ‘এখন যেকোনো কিছুই সম্ভব, ফুটবলে যেকোনো কিছুই সব সময় সম্ভব।’
‘আমরা খুব ছোট্ট দেশ কিন্তু আমাদের স্কোয়াডে অনেক অভিজ্ঞতা আছে।’
সোমারদের এমন উৎসবের মাঝে বিষাদের স্রোত ফ্রান্সে। ম্যাচ হেরে ফরাসি অধিনায়ক লরিস কোন অজুহাত দেওয়ার পক্ষে নন, ‘আমরা অজুহাত খুঁজছি না। যদি অনুতাপ কিছু থাকে সেটা হচ্ছে ৩-১ গোলে এগিয়ে থাকার পর জিততে না পারা। শেষ দিকে দুই গোল খাওয়া আসলে আমাদের হৃদয় ভেঙ্গে দিয়েছে।’
Comments