দেশে মডার্নার টিকা আসছে ৩ জুলাইয়ের মধ্যে
দুই মাসেরও বেশি সময় পর দেশব্যাপী করোনাভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচি আবার শুরু হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আগামী ২ বা ৩ জুলাই মডার্নার ২৫ লাখ টিকার চালান দেশে আসতে পারে।
একইসময় চীনের সিনোফার্মের করোনা টিকার প্রথম চালানটিও ঢাকায় আসবে, তবে কোন তারিখে সেটি এখনো নিশ্চিত নয় বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
মঙ্গলবার দ্য ডেইলি স্টারকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মডার্নার টিকা কবে আসবে, সেটি কোভ্যাক্স থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে গণ-টিকাদান কর্মসূচি স্থগিত আছে। নতুন টিকা আসলে আবার টিকাদান ও নিবন্ধন শুরু হবে।’
এদিকে, মঙ্গলবার রাতে দেশে অষ্টম টিকা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের মডার্নার টিকার জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সঙ্গে যৌথভাবে এই টিকা তৈরি করা হয়েছে।
ট্রায়ালে মডার্নার টিকার কার্যকারিতা দেখা গেছে ৯৪ শতাংশেরও বেশি। ফাইজারের টিকার মতোই মডার্নার এই টিকা ম-আরএনএ প্রযুক্তিতে তৈরি।
মডার্নার টিকা মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়। তবে, এটিকে ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এক মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়।
দুই ডোজ মডার্নার টিকার প্রথম ডোজ নেওয়ার ২৮ দিন পর দ্বিতীয় ডোজ টিকা নেওয়া যাবে বলে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এএফপি’র প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, মঙ্গলবার মডার্নার টিকার ২৫ লাখ ডোজ বাংলাদেশে পাঠানো শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশে ৫০ লাখ মডার্নার টিকা সংরক্ষণের সক্ষমতা আছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নেতৃত্বে গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশনস বা গ্যাভি এবং কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস ইনোভেশনসের গড়া প্ল্যাটফর্ম হল কোভ্যাক্স।
বিশ্বের সব মানুষের সংক্রামক রোগের প্রতিষেধক পাওয়া নিশ্চিত করতে এটি গঠিত হয়।
কোভ্যাক্স সুবিধার আওতায় এ বছর বাংলাদেশকে ৬ কোটি ৮ লাখ ডোজ টিকা দেওয়ার কথা ছিল। এর ফলে বাংলাদেশের ২০ শতাংশ মানুষকে টিকাদান সম্ভব। কিন্তু, এখন পর্যন্ত মাত্র ১ লাখ ৬০০ ডোজ ফাইজারের টিকা পাওয়া গেছে।
মে’র মধ্যে বাংলাদেশকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার ১ কোটি ৯ লাখ ডোজ সরবরাহ করা হবে বলে গত ২ মার্চ দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে কোভ্যাক্স।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক আজ বলেছেন, ‘চীন থেকে বেশ ভালো পরিমাণ সিনোফার্মের টিকা পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।’
বেইজিং ইনস্টিটিউট অব বায়োলজিক্যাল প্রোডাক্ট কোম্পানি লিমিটেড থেকে টিকা কেনার জন্য স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের প্রস্তাব অনুসারে অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে অর্থ বিভাগ।
দেড় কোটি ডোজ সিনোফার্মের টিকা কেনার পরিকল্পনা আছে, যা তিনটি চালানে দেশে আসবে।
এর আগে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, চীন থেকে টিকা আনার জন্য পরিবহনের ব্যবস্থা করতে হবে বাংলাদেশকে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আগামী বৃহস্পতিবার থেকে ঢাকার সাতটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সৌদি আরব ও কুয়েত যেতে ইচ্ছুক অভিবাসী কর্মীদের টিকাদান শুরু হবে।’
দেশে এখন পর্যন্ত মোট জনসংখ্যার ৩ শতাংশেরও কম মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে টিকা সরবরাহ স্থগিত হয়ে যাওয়ায় গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া দেশব্যাপী টিকাদান কর্মসূচি মুখ থুবড়ে পড়ে। এরমধ্যেই দেশে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর ঘটনা বেড়েছে।
সেরামের সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তি ছিল যে, জানুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে পর্যায়ক্রমে তারা অক্সফোর্ড টিকার ৩ কোটি ডোজ বাংলাদেশে পাঠাবে।
চুক্তি অনুযায়ী জানুয়ারিতে প্রথম ৫০ লাখ ডোজ টিকা পাঠিয়েছিল সেরাম। কিন্তু, এরপর ফেব্রুয়ারিতে তারা মাত্র ২০ লাখ ডোজ টিকা পাঠায়। এরপর থেকে আর কোনো চালান আসেনি বাংলাদেশে। তবে, বাংলাদেশকে উপহার হিসেবে ৩৩ লাখ ডোজ অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দিয়েছে ভারত।
টিকার পর্যাপ্ত মজুত না থাকায় বাংলাদেশ গত ২৬ এপ্রিল প্রথম ডোজের টিকাদান বন্ধ করে দেয়। টিকার জন্য নিবন্ধন প্রক্রিয়াটিও ৫ মে থেকে স্থগিত করে দেওয়া হয়।
চীন থেকে উপহার হিসেবে পাওয়া ১১ লাখ ডোজ সিনোফার্মের টিকার মাধ্যমে ১৯ জুন থেকে আবারো সীমিত আকারে সরকার প্রথম ডোজের টিকাদান শুরু করে।
আরও পড়ুন:
Comments