কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দুর্নীতির পৃষ্ঠপোষকতার নামান্তর: টিআইবি

অর্থবিলে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ বহাল রাখা দুর্নীতির পৃষ্ঠপোষকতার নামান্তর উল্লেখ করে একে সততা, নৈতিকতা ও সংবিধান পরিপন্থী বলেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

বাজেট প্রস্তাবনায় না থাকার পরও অপ্রদর্শিত অর্থের মোড়কে কালো টাকা সাদা করার ঢালাও সুযোগ বহাল থাকার কথা উল্লেখ করে টিআইবি আজ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, চূড়ান্ত বিচারে এটি দুর্নীতিবাজ ও এর পৃষ্ঠপোষকদেরকে মাল্যদানসম উপহার। চালাকির আশ্রয় নিয়ে এখন এই সুযোগ রাখা হলো।

টিআইবি বলেছে, ‘বিনা প্রশ্নে দেওয়া এ সুযোগ কালোটাকার মালিকদের আরও অবৈধ অর্থ উপার্জনের আইনগত গ্যারান্টি হয়ে উঠতে যাচ্ছে। যেটি যেকোনো বিচারে নৈতিকতাবিরোধী, দুর্নীতিসহায়ক, বৈষম্যমূলক ও সংবিধান পরিপন্থী।’

বাজেট ঘোষণায় উল্লেখ না থাকার পরও কিভাবে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার সুযোগ রাখা হলো, এই প্রশ্ন তুলে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘কালোটাকা সাদা করার সুযোগ রাখা নিয়ে সরকার এবার রীতিমতো অশুভ চালাকির আশ্রয় নিয়েছে। ন্যায্যতা ও ন্যায়নিষ্ঠতার নামে অর্থমন্ত্রী যে বিষয়টি প্রথমে বিবেচনা করেননি, তা কোনো নৈতিকতার বিচারে চূড়ান্তভাবে রেখে দিলেন? এর ব্যাখ্যা তিনি অর্থবিল পাসের সময়ও দেননি। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে এ ক্ষেত্রে বিতর্ক ও সমালোচনা এড়াতেই সুযোগটি প্রাথমিকভাবে বাজেটে কোথাও রাখা হয়নি, যদিও এ বিষয়টি সরকারের সক্রিয় বিবেচনায় শুরু থেকেই ছিল। এটি শুধু বাজেট প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতাকেই প্রশ্নের মুখে ফেলেনি বরং সরকারের মাঝে জবাবদিহির সংস্কৃতি ক্রমেই বিলুপ্ত হওয়ার ইঙ্গিতও বহন করে। সরকারের এই উদ্যোগ প্রধানমন্ত্রীর দুর্নীতির বিরুদ্ধে “শূন্য সহনশীলতার” অঙ্গীকারকে পদদলিত করছে।’

পাশ হওয়া অর্থবিলে তালিকাভুক্ত শেয়ার, বন্ড, মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিটসহ পুঁজিবাজারের বিনিয়োগ, নগদ টাকা, ব্যাংক ডিপোজিটের মাধ্যমে কালোটাকা সাদা করতে ২৫ শতাংশ হারে কর এবং মোট করের ওপর পাঁচ শতাংশ জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে এই হার ছিল ১০ শতাংশ।

এছাড়া, অঞ্চলভেদে জায়গা অনুপাতে নির্দিষ্ট পরিমাণ কর ও জরিমানা দিয়ে জমি, ভবন, অ্যাপার্টমেন্ট কিনেও কালোটাকা সাদা করার সুযোগ থাকছে। এ বিষয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘কর ও জরিমানা ধার্য করে সরকার যে বার্তাই দিতে চাক না কেন, এর ফলে যে অনৈতিকতা ও দুর্বৃত্তায়নের সুযোগ বর্ধিতমাত্রায় প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করল, তার বিনিময় মূল্য কোনোভাবেই তুলনীয় হতে পারে না। এতে সাময়িকভাবে কিঞ্চিৎ বেশি কর পাবার সুযোগ তৈরি হলেও, এর বিপরীতে দুর্নীতিগ্রস্ত স্বার্থান্বেষী শক্তির কাছে সরকারের যে নৈতিক পরাজয় ঘটল, তা সত্যিই শঙ্কিত হবার মতো। সরকারের এই অবস্থান বৈষম্যমূলক, দুর্নীতিসহায়ক ও সংবিধানের ২০(২) অনুচ্ছেদের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন, যা কখনো কাম্য হতে পারে না।’

নতুন শিল্পকারখানা স্থাপনে মাত্র ১০ শতাংশ কর দিয়ে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ রাখা প্রসঙ্গে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে এমন সুযোগ আগে থেকে রাখা হলেও এর মাধ্যমে কত অর্থ বিনিয়োগ হয়েছে কিংবা আদৌও হয়েছে কী না তার কোনো হিসাব সরকার কখনো প্রকাশ করেনি। সরকার একদিকে কালোটাকার মালিকদের নতুন করে কালোটাকা তৈরির আইনি গ্যারান্টি দিচ্ছে আর অন্যদিকে সৎ নাগরিকদের প্রলোভিত করছে দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হতে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এটি বললেও অত্যুক্তি হবে না যে, দেশে দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ উচ্চতরমাত্রা পেতে যাচ্ছে, যা সত্যিই চরম হতাশার। তারপরও টিআইবি আশা করে, আর্থিক খাতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও শুদ্ধাচার নিশ্চিতে সরকার সদিচ্ছা দেখিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।‘

Comments

The Daily Star  | English

No justifiable reason to delay nat'l polls beyond Dec: Salahuddin

We have been able to make it clear that there is not even a single mentionable reason to hold the election after December, says the BNP leader

50m ago