‘যদি কিছু টাকা পাওয়া যায়, আরেকটা দিন খেতে পারব’
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলা পরিষদের সামনের ফুটপাতে প্রায় ২৫টি মাচাসহ একচালা ছাউনি আছে। সেখানে পোশাক বিক্রি করেন ১৮ জন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। বাকিরা মৌসুমি ফল ও বাদাম বিক্রি করেন। কিন্তু, চলমান কঠোর লকডাউনে ১৮টি একচালার পুরোটাই এখন ফাঁকা। লকডাউনের শুরুর দিন থেকে সেখানে কেউ কাপড়ের পসরা সাজিয়ে বসেনি।
সেখানের একটি মাচায় বসে শিশুদের পোশাক বিক্রি করেন ষাটোর্ধ মো. নাজিম উদ্দিন। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘প্রতিদিন পাঁচশ থেকে সাতশ টাকার কাপড় বিক্রি হত। এখন সব বন্ধ। লকডাউনের আগে পাঁচ কেজি আটা কিনেছিলাম। তিন দিনে দুই কেজি শেষ। তিন কেজি আর কতদিন চলবে? ঘরে খাবার নেই, বাজার নেই। সন্তানরা পড়াশোনা করে, তাই ওদের কাজ করতে দেই না। এখন কাপড় বিক্রি করতে বসলে পুলিশ ও প্রশাসনের লোকজন জরিমানা করবে। তাই বাধ্য হয়েই কিছু মাস্ক নিয়ে বসেছি। যদি কিছু টাকা পাওয়া যায়, তাহলে আরেকটা দিন কিছু খেতে পারব। এভাবে লকডাউন দেওয়ার আগে সরকারের পক্ষ থেকে কিছু সাহায্য-সহযোগিতা করা উচিত ছিল। তাহলে আমরা এতটা অসহায় পড়ে পড়তাম না।’
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিভিন্ন বাসস্টপেজের ফুটপাতে সারি সারি বাক্স নিয়ে বসে থাকতেন অনেকে। বাক্স যাতে রোদ পুড়ে বা বৃষ্টিতে ভিজে না যায় সেজন্য প্লাস্টিকের কাগজ দিয়ে মোড়ানো থাকত। বাসস্টপেজের গুরুত্ব ও জনসমাগম অনুযায়ী বাক্সের সংখ্যা প্রায় ২০ থেকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে সর্বোচ্চ দুইশ। খোলা আকাশের নিচে এসব বাক্সে কাপড় সংরক্ষণ করে ফুটপাতে ব্যবসা করতের নিম্ন আয়ের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। কিন্তু, কঠোর লকডাউন ঘোষণার পর থেকে তাদের আর বসতে দেখা যায়নি।
তেমন একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায় মো. নূরুজ্জামান। তার কোনো দোকান বা ঘর নেই। টিন দিয়ে বিশেষ উপায়ে তৈরি একটি বাক্সে পোশাক সাজিয়ে বিক্রি করেন। তিনি বসতেন ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মাওনা চৌরাস্তা উড়াল সেতুর পশ্চিম পাশের ফুটপাতে।
তিনি জানান, স্ত্রী-সন্তান, ভাগিনাসহ পাঁচ সদস্যের সংসার। ফুটপাতে ব্যবসা করে সংসার চলে। চাল কেনা ছাড়া প্রতিদিনের সংসার খরচ এ ব্যবসা থেকেই আসে। গত তিনদিন যাবত লকডাউনের কারণে তার ব্যবসা পুরোপুরি বন্ধ।
তিনি আরও জানান, ফুটপাতে তার মতো কমপক্ষে দেড় শতাধিক কাপড়ের ব্যবসায়ী আছেন। লকডাউন ঘোষণায় কেউ দোকানের পসরা সাজিয়ে বসেনি। কিন্তু, তার বাসায় চাল থাকলেও অন্যান্য বাজার নেই। তাই বাধ্য হয়ে আজ শনিবার বাক্সটির অর্ধেক খুলে তৈরি পোশাক বিক্রির জন্য দাঁড়িয়ে আছেন। কিন্তু, ক্রেতা নেই। পুলিশের ধাওয়া বা ভ্রাম্যমাণ আদালতের জরিমানা নিয়ে দুশ্চিন্তাও মাথায় আছে।
ক্ষুদ্র ব্যবসায় মো. নূরুজ্জামান বলেন, ‘তিনি লকডাউন মানতে বাধ্য। কিন্তু, তার আগে আমাদের মতো নিম্নবিত্ত মানুষের জন্য সরকারের আর্থিক বা খাদ্য সহায়তা নিশ্চিত করতে হত। তাহলে জীবিকা নিয়ে কিছুটা নিশ্চিন্ত থাকতে পারতাম।’
গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ী এলাকায় মহাসড়কের পাশে ফুটপাতে কাপড় বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন ইব্রাহীম খলিল। তিনি বলেন, ‘বাবা-মা ভাই-বোনসহ সাত জনের সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি আমি। যতদিন লকডাউন থাকবে ততদিন অন্তত আমাদের মতো নিম্নবিত্তের ঘরে খাবার পৌঁছে দেওয়া উচিত। না হলে লকডাউনে আমরা না খেয়ে মরব।’
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘কিছুদিন আগে পরিবহন শ্রমিকদের খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছিল। গাজীপুরে অনেকে বাইরের জেলা থেকে এসে ব্যবসা-বাণিজ্য করছে। আমরা সবাইকে সাহায্য দেব। আমাদের ভলান্টিয়ার মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে। ইতোমধ্যে কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষকদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘একাধিকবার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নিম্ন আয়ের মানুষের তালিকা করা হয়েছে। বর্তমানে তাদের কেউ কেউ অন্যত্র চলে গেছেন। সবগুলো বিষয় বিবেচনায় রেখে সবাইকে সহায়তা প্রদান করা হবে। বিশেষ করে খাদ্য সহায়তার আওতায় আসবে।’
Comments