দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে বড় জয়ের আভাস 

বাংলাদেশের বড় রানের জবাবে দারুণ শুরু করা জিম্বাবুয়ে একটা সময় ছিল বেশ ভালো অবস্থায়। মেহেদী হাসান মিরাজ আর সাকিব আল হাসানের স্পিনে  আচমকা ধসে তাদের ইনিংস মুড়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশের দুই ওপেনার মিলে নির্বিঘ্নে কাটিয়ে দিয়েছেন বাকিটা সময়। মুমিনুল হকদের লিড হচ্ছে ক্রমশ বড়। ম্যাচেও দাপট হয়েছে শক্ত, বড় জয়ের আভাসও দেখা যাচ্ছে প্রবল হয়ে। 

শুক্রবার হারারে টেস্টের চতুর্থ দিন শেষ নাটাই একদমই বাংলাদেশের হাতে। জিম্বাবুয়েকে ২৭৬ রানে গুটিয়ে ১৯২ রানের লিড নেওয়ার পর বিনা উইকেটে দুই ওপেনার এনেছেন ৪৫ রান। সবগুলো উইকেট হাতে রেখে বাংলাদেশ এগিয়ে গেছে ২৩৭ রানে। ২২ রান নিয়ে সাদমান ইসলাম আর ২০ রান নিয়ে ক্রিজে আছেন সাইফ হাসান।

চতুর্থ দিনে দ্রুত আরও রান বাড়িয়ে স্বাগতিকদের দ্বিতীয় ইনিংসও মুড়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট সময় হাতে থাকছে সফরকারীদের।

চতুর্থ দিনের সকাল আর বিকেলের মধ্যে বিস্তর তফাৎ দেখেছে  জিম্বাবুয়ে। আগের দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান ব্র্যান্ডন টেইলর আর তাকুদজয়নাশে কাইটানো দিনের শুরুটা করেছিলেন দারুণ। একজনের আগ্রাসন, আরেকজনের টিকে থাকার সমন্বয়ে বাড়ছিল বাংলাদেশের হতাশা।

১১৫ রানের দারুণ জুটির পর সেঞ্চুরির পথে থাকা টেইলর ৮১ রানে মিরাজের বলে নিজের উইকেট ছুঁড়ে দিলে প্রথম সেশনে ওই একটাই ছিল বাংলাদেশের সাফল্য।

দ্বিতীয় সেশনে বদলে যায় ছবি। উইকেটে তেমন কিছু হচ্ছে না দেখে সাকিব, মিরাজ মিলে শুরু করেন রান আটকে দেওয়ার কাজ। তাসকিন আহমেদ বল করতে এসেও জারি রাখেন চাপ। সেই চাপেই কাবু হয়ে যান ডিওন মেয়ার্স। লাঞ্চের আগে চনমনে শুরু পেয়েছিলেন তিনি। পরে রান আসছে না দেখে অস্থির হয়ে খেলেন বাজে শট। সাকিবের লেগ স্টাম্পের অনেক বাইরের বলে পেটাতে গিয়ে ধরা পড়েন স্কয়ার লেগে।

টিমসেন মারুমা এসেও হাঁসফাঁস করতে থাকেন। তাকে বেশ কবার পরাস্ত করে উইকেট নেওয়ার পরিস্থিতি তৈরি করেন তাসকিন। রানের খাতা খুলতে না পারার চাপ মারুমা আর নিতে পারেননি। সাকিবের বলে অহেতুক সুইপ করতে গিয়ে হয়েছেন এলবিডব্লিউ।

খানিক পর রয় কাইয়াকে দারুণ এক ডেলিভারিতে উইকেটের পেছনে ক্যাচ বানান তাসকিন। ২ উইকেটে ২২৫ থেকে ৫ উইকেটে ২২৯ রানে পরিণত হয় জিম্বাবুয়ে।

দ্বিতীয় সেশনে মাত্র ৩৫ রান এনে তারা হারায় ৩ উইকেট। তবে ওপেন করতে নামা অভিষিক্ত কাইটানো টিকেছিলেন বলে জিম্বাবুয়ের আরও এগিয়ে যাওয়ার আশা ছিল। দেশের তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে অভিষেকেই সেঞ্চুরির কাছে ছিলেন তিনি।

শেষ সেশনে রেজিস চাকাভাকে নিয়ে ধীরলয়ে রান বাড়িয়ে যাচ্ছিলেন এই ডানহাতি। কিন্তু ৫০ ওভারের বেশি ব্যাট করার ক্লান্তি কাবু করে থাকে। মিরাজের লেগ স্টাম্পের বাইরে বেরিয়ে যাওয়া বলে আয়েশে ভঙ্গিয়ে ব্যাট ছুঁইয়ে দেন কিপারের গ্লাভসে ক্যাচ।

২৬১ রানে ৬ষ্ঠ উইকেট হারানোর পর এরপর যেন তাসের ঘর জিম্বাবুয়ে।  তৃতীয় দিনের শেষ সেশনটা দুহাত ভরিয়ে দিল মিরাজকে। পুরো টেস্টে খুবই সাদামাটা বল করা এই অফ স্পিনার হুট করে হয়ে গেলেন ভয়ংকর। প্রথম ২৪ ওভার বল করে ৭৪ রান দিয়ে তিনি পেয়েছিলেন কেবল ১ উইকেট। সেই উইকেটও এসেছিল ব্র্যান্ডন টেইলরের আত্মাহুতির কারণে। পরের ৭ ওভারে আর ৮ রান দিয়েই মিরাজের পকেটে গেল আরও ৪ উইকেট।

পুরো ধসের দায় জিম্বাবুয়ের লোয়ার মিডল অর্ডারেরই। তবে ডোনাল্ড টিরিপানো অবশ্য নিজেকে দুর্ভাগা ভাবতে পারেন।  আম্পায়ার মরিস এরামুস তাকে দিলেন ভুল আউট। মিরাজের বল ঠেকাতে গিয়ে ইনসাইড এজড হয়ে প্যাডে লেগেছিল। আম্পায়ার ঘোষণা করেন এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্ত। রিভিউ না থাকায় হতাশ হয়ে ফিরতে হয় ২ রান করা টিরিপানোকে।

এরপর টেল খোলাশা হয়ে পড়ায় জিম্বাবুয়ের দ্রুত গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়। খানিক পর ভিক্টর নিয়াউচি মিরাজের নিচু বল বুঝতে না পেরে বোল্ড। ব্লেসিং মুজারাবানিরও একই দশা। মিরাজের টার্ন করে ভেতরে ঢোকা বল বুঝতেই পারলেন না। ৫ উইকেট পেয়ে যান মিরাজ।

রিচার্ড এনগারাভাকে স্লিপে ক্যাচ বানিয়ে সাকিব মুড়ে দিলেন ইনিংস। ৩১ রানে অপরাজিত থেকে এক পাশে অসহায় চেয়ে থাকলেন চাকাভা।

প্রথম ২৪ ওভারে ৭৪ রান দিয়ে মাত্র ১ উইকেট নেওয়া মিরাজ পুরো ইনিংসে ছিলেন একদম সাদামাটা। কিন্তু পরের ৭ ওভারে আর ৮ রান দিয়ে তিনি তুলে নেন ৪ উইকেট। পেয়ে যান ক্যারিয়ারের ৮ম ৫ উইকেট। তার বোলিং ফিগার- ৩১-৫-৮২-৫। সাকিবও সমান ৮২ রান দিয়ে নিয়েছেন ৪ উইকেট।

অথচ এদিন উইকেট নেওয়ার মতো বেশি বল করতে দেখা গেছে দুই পেসার তাসকিন আর ইবাদতকে। তাসকিন ১ উইকেট পেলেও ইবাদত থাকেন উইকেট শূণ্য। বোলিং ফিগার মূলত বোঝাতে পারছেন না গোটা খেলার ছবি।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

(তৃতীয় দিন শেষে)

বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ৪৬৮

জিম্বাবুয়ে প্রথম ইনিংস: ১১১.৫ ওভারে ২৭৬ (শুম্বা ৪১, কাইটানো ৮৭, টেইলর ৮১, মেয়ার্স ২৭, মারুমা ০, কাইয়া ০, চাকাভা ৩১*, টিরিপানো ২, নিয়াউচি ০, মুজারাবানি ২, এনগারাভা ০ ; তাসকিন ১/৪৬ , ইবাদত ০/৫৮ , সাকিব ৪/৮২, মিরাজ ৫/৮২, মুমিনুল ০/৩)

বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস:  ১৭ ওভারে ৪৫/০ (সাদমান ২২*, সাইফ ২০* ; মুজারাবানি ০/৬, এনগারাভা ০/৭, টিরিপানো ০/১২, নিয়াউচি ০/১০, শুম্বা ০/৮, কাইয়া ০/২)

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

Comments

The Daily Star  | English

AL attack on NCP rally venue: Four killed as violence grips Gopalganj

At least four people were killed and dozens injured in daylong running battles between law enforcers and Awami League followers in Gopalganj yesterday.

7h ago