টাইব্রেকারে ইংল্যান্ডের স্বপ্ন ভেঙে চ্যাম্পিয়ন ইতালি

italy_trophy_1
ছবি: রয়টার্স

লুক শয়ের গোলে শুরুতেই এগিয়ে গেল ইংল্যান্ড। তাদের জমাট রক্ষণ ভেঙে দ্বিতীয়ার্ধের মাঝামাঝি সময়ে লিওনার্দো বোনুচ্চির লক্ষ্যভেদে সমতা ফিরল ম্যাচে। বাকি সময়ে বারবার চেষ্টা চালিয়েও ইতালি গোল না পাওয়ায় ম্যাচ গড়াল টাইব্রেকারে। সেখানে গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি দোন্নারুমার বীরত্বে ইংলিশদের স্বপ্ন ভেঙে ৫৩ বছর পর ইউরোর শিরোপা জিতল আজ্জুরিরা।

রবিবার রাতে ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে আসরের ফাইনালে পেনাল্টি শ্যুটআউটে ৩-২ ব্যবধানে জিতেছে রবার্তো মানচিনির দল। তিন বছর আগে বিশ্বকাপে উঠতে ব্যর্থ হওয়া দলটি ইউরোপের সেরা ফুটবল আসরে হয়েছে চ্যাম্পিয়ন। নির্ধারিত ৯০ মিনিটের পর অতিরিক্ত ৩০ মিনিটের খেলাও শেষ হয়েছিল ১-১ সমতায়।

টাইব্রেকারে ইতালির পক্ষে প্রথম শট নিয়ে জালে পাঠান দমেনিকো বেরার্দি। ইংল্যান্ডের হয়েও সফল কিক নেন হ্যারি কেইন। এরপর আন্দ্রেয়া বেলোত্তির শট ফিরিয়ে দেন গোলরক্ষক জর্ডান পিকফোর্ড। হ্যারি ম্যাগুইয়ার দ্বিতীয় শটেও গোল করলে এগিয়ে যায় ইংলিশরা। কিন্তু এই সুবিধা ধরে রাখতে পারেনি তারা।

ইতালির বোনুচ্চি ও ফেদেরিকো বার্নারদেস্কি নিজ নিজ শটে নিশানা ভেদ করেন। এরপর জর্জিনহোর নেওয়া শেষ শটও আটকে দেন পিকফোর্ড। তবে তার দুটি সেভও ইংল্যান্ডকে জেতাতে পারেনি। কারণ, শেষ তিনটি স্পট-কিকেই গোল করতে ব্যর্থ হন তার সতীর্থরা।

ছবি: টুইটার

পেনাল্টি নিতেই নামা মার্কাস র‍্যাশফোর্ডের শট দুর্ভাগ্যজনকভাবে পোস্টে লাগার পর দোন্নারুমা প্রথমে রক্ষা করেন একই কারণে মাঠে নামা জ্যাডন স্যাঞ্চোর শট। সবশেষে বুকায়ো সাকার শটও তিনি ঠেকিয়ে দিলে উল্লাসে মাতে ইতালিয়ানরা।

ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে ইতালির এটি দ্বিতীয় শিরোপা। শেষবার তারা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ১৯৬৮ সালে। মাঝে ২০০০ ও ২০১২ সালে ফাইনাল খেললেও রানার্সআপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল তাদের।

অন্যদিকে, প্রথমবারের মতো আসরের ফাইনালে উঠেছিল ইংল্যান্ড। তবে ঘরের মাঠে (লন্ডনের ওয়েম্বলি) গ্যালারি ভর্তি দর্শকদের সামনে শেষ হাসি হাসতে পারেনি গ্যারেথ সাউথগেটের শিষ্যরা।

ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটেই এগিয়ে যায় ইংল্যান্ড। শুরুটা হয়তো এর চেয়ে ভালো হতে পারত না তাদের। পাল্টা আক্রমণে ডান প্রান্ত থেকে কিয়েরান ট্রিপিয়ার ক্রস ফেলেন ডি-বক্সের বামদিকে। ফাঁকায় থাকা আরেক ফুলব্যাক শ বল জালে জড়ান জোরালো শটে। ইউরোর ইতিহাসে ফাইনালের দ্রুততম গোল এটি (এক মিনিট ৫৭ সেকেন্ড)।

পিছিয়ে পড়ে গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় থাকা ইতালি অষ্টম মিনিটে ভালো জায়গায় ফ্রি-কিক পায়। তবে ফরোয়ার্ড লরেঞ্জো ইনসিনিয়ে পরীক্ষায় ফেলতে পারেনি পিকফোর্ডকে। ২৮তম মিনিটে তার আরেকটি শট লক্ষ্য থাকেনি।

৩৫তম মিনিটে ডেকলান রাইসের চাপ এড়িয়ে একক নৈপুণ্যে আক্রমণে ওঠেন ইতালির ফেদেরিকো কিয়েসা। প্রতিপক্ষের আরেকটি চ্যালেঞ্জ সামলে ডি-বক্সের বাইরে থেকে তিনি যে শট নেন, তা অল্পের জন্য জালে পৌঁছায়নি।

প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে চিরো ইম্মোবিলের শট আটকে দেন ইংল্যান্ডের সেন্টার-ব্যাক জন স্টোনস। মার্কো ভেরাত্তির ফিরতি শট অনায়াসে লুফে নেন পিকফোর্ড।

রক্ষণাত্মক কৌশল বেছে নেওয়া ইংল্যান্ড বিরতির পরও একই ধাঁচে খেলতে থাকে। ধার বাড়ানো ইতালির একের পর এক আক্রমণ রুখে দিতে থাকে তারা। তবে দ্বিতীয়ার্ধে স্কোরলাইনে ঠিকই সমতা ফেরে।

৫১তম মিনিটে ইনসিনিয়ে আরেকটি বিপজ্জনক ফ্রি-কিক কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন। ছয় মিনিট পর দুরূহ কোণ থেকে তার নেওয়ার শট ফিরিয়ে দেন ইংলিশ গোলরক্ষক।

অসাধারণ খেলতে থাকা কিয়েসা বারবারই ভীতি ছড়াচ্ছিলেন। ৬২তম মিনিটে তার বাঁকানো গড়ানো শট ঝাঁপিয়ে রক্ষা করেন পিকফোর্ড। দুই মিনিট পর ম্যাচে প্রথমবার সামর্থ্যের ছাপ রাখতে হয় দোন্নারুমাকে। তিনি স্টোনসের হেড প্রতিহত করেন।

৬৭তম মিনিটে বোনুচ্চি শোধ করে দেন গোল। কর্নারে ভেরাত্তির হেড পিকফোর্ড পুরোপুরি বিপদমুক্ত করতে পারেননি। বল পোস্টে লেগে ফিরে আসার সময় গোলমুখ থেকে জালে জড়িয়ে ইতিহাসে ঠাঁই নেন বোনুচ্চি। ইউরোর ফাইনালে সবচেয়ে বেশি বয়সী গোলদাতা তিনি (৩৪ বছর ৭১ দিন)।

নির্ধারিত সময়ের বাকি অংশে এবং অতিরিক্ত সময়ে ইতালি আক্রমণে এগিয়ে থাকলেও গোল আর করতে পারেনি। ইংল্যান্ড খোলস ছেড়ে পাল্টা আক্রমণে উঠলেও বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করতে ব্যর্থ হয়। দুই দল একাধিক খেলোয়াড় বদল করলেও তাই স্কোরলাইনে পরিবর্তন আসেনি। পরে টাইব্রেকারে নায়ক বনে যান দোন্নারুমা।

Comments

The Daily Star  | English
Mirza Fakhrul on polls

Efforts on to make polls questionable and delayed: Fakhrul

Says Chief Adviser Yunus has assured BNP that the election will be held in February 2026

8h ago