হাসির রাজা দিলদার ‘আবদুল্লাহ’য় নায়ক হয়েছিলেন

দিলদার। ছবি: সংগৃহীত

হাসির রাজা দিলদারের প্রতিকৃতি আঁকা হয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়  ক্যাম্পাসে। সেখানকার চারুকলার কয়েকজন শিক্ষার্থী নিজের ইচ্ছায় বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের জন্য ব্যবহৃত ঘরের একটি দেয়ালজুড়ে দিলদারের ছবি এঁকেছেন।

দিলদারের পাশাপাশি সিনেমার আরও দুই জন কিংবদন্তি হুমায়ুন ফরীদি ও এটিএম শামসুজ্জামানের প্রতিকৃতি এঁকেছেন তারা। চলচ্চিত্রের একখণ্ড আকাশ যেন রচিত হয়েছে সেখানে। অথচ বিএফডিসিসহ চলচ্চিত্রের কোথাও নেই দিলদারের স্মৃতিচিহ্ন।

আজ এই হাসির রাজা দিলদারের প্রয়াণ দিন। ২০০৩ সালের এই দিনে ৫৮ বছর বয়সে চিরদিনের জন্য পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুর বছরেই ‘তুমি শুধু আমার’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য সেরা কৌতুক অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি।

ঢাকার চলচ্চিত্রে হাসির রাজাহীন ১৮ বছর। তবে তিনি বেঁচে আছেন অসংখ্য চরিত্র আর ভক্তদের হৃদয়ে।

দিলদার ১৯৭৫ সালে প্রথম চলচ্চিত্রে আসেন ‘কেন এমন হয়’ সিনেমার মাধ্যমে। তারপর প্রায় চার শ সিনেমায় অভিনয় করেছেন এই অভিনেতা। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমার মধ্যে রয়েছে: ‘মহানায়ক’, ‘দস্যু বনহুর’, ‘আব্দুল্লাহ অস্বীকার’, ‘অংশীদার’, ‘টক্কর’, ‘নাগ পূর্ণিমা’, ‘সোনার তরী’, ‘জনতা এক্সপ্রেস’, ‘সুখের সংসার’, ‘বিদ্রোহী’, ‘ওগো বিদেশিনী’, ‘লড়াকু’, ‘পিতা মাতা সন্তান’, ‘বেদের মেয়ে জোসনা’, ‘আনন্দ অশ্রু’, ‘জীবন সংসার’, ‘স্বপ্নের পৃথিবী’, ‘চাওয়া থেকে পাওয়া’, ‘এই ঘর এই সংসার’, ‘অন্তরে অন্তরে’ ও ‘আশা ভালোবাসা’।

এ তালিকায় আরও রয়েছে: ‘শুধু তুমি’, ‘বীরপুরুষ’, ‘দুর্জয়’, ‘নিষ্ঠুর’, ‘অজান্তে’, ‘জীবন সংসার’, ‘গরিবের রাণী’, ‘তুমি শুধু আমার’, ‘তেজী’, ‘লাল বাদশা’, ‘মেজর সাহেব’, ‘শান্ত কেন মাস্তান’, ‘চেয়ারম্যান’, ‘কুলি’, ‘বালিকা হলো বধূ’, ‘দাঙ্গা’, ধনী গরিব’, ‘আশা নিরাশা’ ইত্যাদি।

হাসির রাজা দিলদারের জনপ্রিয়তা এতোটাই আকাশচুম্বী ছিল যে তাকে নায়ক করে ১৯৯৭ সালে ‘আব্দুল্লাহ’ নামে একটি সিনেমা তৈরি করেন তোজাম্মেল হক বকুল। সেই সিনেমায় তার বিপরীতে নায়িকা ছিলেন নূতন। সেই বছরের অন্যতম ব্যবসাসফল সিনেমা ছিল এটি। ‘আব্দুল্লাহ’ প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা ব্যবসা করেছিল।

কমেডি অভিনয়শিল্পী নাসরিনের সঙ্গে জুটি হয়ে প্রায় শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন দিলদার। এই জুটির কমেডি ও গান দর্শকরা অনেক পছন্দ করতেন। এই জুটির জন্য আলাদা করে গান করা হতো সিনেমায়।

১৯৪৫ সালের ১৩ জানুয়ারি চাঁদপুরে জন্মগ্রহণ করেন দিলদার। তার স্ত্রী নাম রোকেয়া বেগম। এই দম্পতির রয়েছে দুই কন্যা সন্তান মাসুমা আক্তার ও জিনিয়া আফরোজ।

দিলদারকন্যা জিনিয়া আফরোজ আজ মঙ্গলবার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘প্রথমদিকে অনেকেই আব্বার খোঁজ-খবর রাখতেন। মিডিয়ার মানুষজন ফোন করতেন। এখন কেউ আর আমাদের সঙ্গে তেমন যোগাযোগ রাখেন না।’

‘যারা আব্বার পরিচিত ছিলেন তাদের অনেকেই এখন বেঁচে নেই। পুরনো সিনেমাগুলো টেলিভিশনে প্রচারিত হলে আরও স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ি। সেই কারণে আব্বার মৃত্যুর পর থেকে তার অভিনীত কোনো সিনেমা টেলিভিশনে দেখিনি, দেখতে গেলে কান্না চলে আসে। আমার হার্টে সমস্যা হয়।’

‘আব্বাকে চলচ্চিত্রের মানুষেরা ভুলে গেলেও দেশের মানুষের মনে তিনি বেঁচে থাকবেন দীর্ঘদিন। তার সন্তান হিসেবে আমরা গর্বিত,’ যোগ করেন জিনিয়া আফরোজ।

তিনি আরও বলেন, ‘আমার আব্বা যখন “আবদুল্লাহ” সিনেমাটা করেছিলেন শুটিং শেষ হওয়ার কিছুদিন পর থেকেই অসুস্থ হতে শুরু করেন। এই সিনেমাটা করে খুব আনন্দিত ছিলেন আমার আব্বা। তার চোখে-মুখে আনন্দ দেখতে পেতাম।’

‘আব্বা-মা খুব সাধারণ জীবন যাপন করতেন। ব্যক্তিজীবনে খুব রাগী মানুষ ছিলেন আমার আব্বা। সেই কারণে আমার মিডিয়ায় কাজ করার ইচ্ছা থাকলেও সেটা করা হয়নি।’

Comments

The Daily Star  | English

We’re now ready to hand over power to elected representatives

Chief Adviser Prof Muhammad Yunus yesterday said the interim government is prepared to transfer power to an elected administration.

1h ago