জাবির বিতর্কিত প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীনকে স্বপদে বহাল

JU

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) বিতর্কিত প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীনকে স্বপদে বহাল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট।

ক্যাম্পাসে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের লাঞ্ছিত করা, মারধর, ব্ল্যাকমেইল, চাঁদাবাজি, বেড়াতে আসা নারী দর্শনার্থীদের কটূক্তির মতো এক ডজনেরও বেশি অভিযোগ ওঠায় গত বছরের নভেম্বর থেকে সাময়িক বরখাস্ত ছিলেন সুদীপ্ত শাহীন।

জাবির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ আজ বৃহস্পতিবার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্তের পর উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের নেতৃত্বে স্ট্রাকচারাল কমিটির অধিকতর তদন্ত শেষে সুদীপ্ত শাহীনকে “সতর্ক” করা হয়েছে।’

বুধবার অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভার তারিখ থেকেই তিনি প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা পদে বহাল থাকবেন বলে জানান ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ।

তবে, এমন বিতর্কিত একজনকে প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তার পদে বহাল রাখার সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ও প্রগতিশীল ছাত্র-সংগঠনের নেতারা। তারা সুদীপ্ত শাহীনকে স্বপদে বহালের সিদ্ধান্ত প্রতিহতের কথা জানিয়েছেন।

জাবির সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি দিপঙ্কর দীপ ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘সুদীপ্ত শাহীনের বিরুদ্ধে অনেকগুলো অভিযোগের মধ্যে মাত্র তিনটি অভিযোগের লোক দেখানো তদন্ত হয়েছে। এতে তার বিরুদ্ধে অন্যান্য অভিযোগগুলো খারিজ হয়ে যায় না। তাকে উপযুক্ত শাস্তি না দিয়ে বহাল রাখার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন একজন “অপেশাদার” নিরাপত্তা কর্মকর্তার “পক্ষে” অবস্থান নিয়েছে। আমরা নিরাপত্তা অফিস ঘেরাও কর্মসূচির ডাক দেবো।’

অধিকাংশ অভিযোগ তদন্ত না করে সুদীপ্ত শাহীনকে স্বপদে বহালের সিদ্ধান্তকে প্রশাসনের ‘হঠকারী’ ও ‘স্বেচ্ছাচারিতার’ বহিঃপ্রকাশ বলেছেন জাবি ছাত্র ইউনিয়নের নেতারা।

এক বিবৃতিতে সংগঠনটি বলেছে, ‘অন্তত ৩০টির মতো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকার পরও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিয়ে, তদন্তের নামে দিনের পর দিন অভিযোগ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। মাত্র তিনটি অভিযোগ তদন্ত করে তাকে স্বপদে বহাল করার সিদ্ধান্ত তাকে একই ধরনের অপরাধ করতে উৎসাহিত করবে। এতে আসলে অন্যান্য গুরুতর অভিযোগ থেকে দায়মুক্তি দেওয়ার প্রচেষ্টা দৃশ্যমান হয়।’

গত বছরের ১৬ অক্টোবর ক্যাম্পাসের চৌরঙ্গী এলাকা থেকে রিকশাচালক নাহিদ হোসেনকে নিরাপত্তা কক্ষে ধরে নিয়ে যান সুদীপ্ত শাহীন। তিন ঘণ্টা ধরে আটকে রেখে পিটিয়ে তার পা ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে সুদীপ্ত শাহীনের বিরুদ্ধে।

এই ঘটনায় আট শতাধিক শিক্ষার্থী গুগল ফরমের মাধ্যমে অনলাইনে গণস্বাক্ষর করে সুদীপ্ত শাহিনের অপসারণসহ চার দফা দাবি জানায় জাবি প্রশাসনের কাছে। পরে গণিত বিভাগের অধ্যাপক লায়েক সাজ্জাদ এন্দেল্লাহকে প্রধান করে একটি ফ্যাক্টস-ফাইন্ডিং কমিটি গঠিত হয়। অভিযোগের সত্যতা তদন্ত করে কমিটি সুদীপ্ত শাহীনের শাস্তির সুপারিশ করে। কিন্তু, এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্তের কথা জানা যায়নি।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দেওয়া হলেও তেমন কিছুই পাননি বলে জানান প্রায় পঙ্গুত্ববরণকারী নাহিদ হোসেন।

এ ছাড়া, ২০১৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি শরীফ মিয়াকে মারধরের ঘটনায় উপাচার্যের বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীরা। জাবি প্রশাসন সেবারও একটি প্রাথমিক তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘আমরা গত বছর সুদীপ্ত শাহীনের বিষয়ে অধিকতর তদন্তের জন্যে সুপারিশ করেছিলাম। কিন্তু, এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’

এবার উপাচার্যের নেতৃত্বাধীন স্ট্রাকচারাল কমিটির তদন্ত নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সাক্ষী ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘অনলাইনে জুম প্লাটফর্ম ব্যবহার করে তদন্ত কমিটির একটি সভায় আমাকে ডাকা হয়। আমি সভায় প্রবেশ করেই অভিযুক্ত সুদীপ্ত শাহীনকে উপস্থিত দেখি। আসলে অভিযুক্তের সম্পর্কে সামনাসামনি বললে পরবর্তীতে আমার সমস্যা হতে পারত। এভাবে তদন্ত হতে পারে না। মনে হচ্ছিল যেন একপাক্ষিক তদন্ত কার্যক্রম চলছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওই কমিটি সদস্যসচিব ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ বলেন, ‘জুমে তো ওয়েটিং রাখার সুযোগ আছে। আসলে আমি তো অনলাইন সভায় এটা নিয়ন্ত্রণ করি না। আমি স্মরণ করতে পারছি না। আমি সেভাবে খেয়াল করি নাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মোট পাঁচ বার তদন্ত সভা আহ্বান করেছিলাম। সেখানে বাদী-বিবাদীকে সামনাসামনিও ডাকা হয়েছিল। তবে, সাক্ষীকে ডাকা হয়েছিল কি না, আমার স্মরণ নাই। তিনটি অভিযোগে একজন নারী সাংবাদিকের অভিযোগ খারিজ হয়েছিল। কারণ, তাকে আমরা উপস্থিতই করতে পারি নাই।’

দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে গত চার বছরে সুদীপ্ত শাহিনের বিরুদ্ধে এক ডজনেরও বেশি অভিযোগ জমা পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে। গত বছরের ১৮ নভেম্বর অনলাইনে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের বিশেষ সাধারণ সভায় সুদীপ্ত শাহীনকে সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। তিন জনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত প্রাথমিক তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী দক্ষতা ও শৃঙ্খলা অধ্যাদেশ অনুযায়ী এ ব্যবস্থা নেওয়া হয় বলে জানানো হয়েছিল। সাময়িকভাবে বরখাস্ত থাকাকালীন তিনি জীবিকা নির্বাহ ভাতা পেতেন।

এ ঘটনাকে ‘নজিরবিহীন’ বলে মন্তব্য করে জাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আমজাদ হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘বিচারহীনতার এ ঘটনাগুলোর সাময়িক কোনো প্রভাব না থাকলেও এর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব রয়েছে। যার ফল সবাইকে ভোগ করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় নানামুখী সংকটের মধ্যে পড়বে।’

‘বর্তমান সিন্ডিকেটে একজন বাদে শিক্ষকদের নির্বাচিত প্রতিনিধি নেই বললেই চলে। বর্তমান প্রশাসন যেসব কার্যক্রম (তদন্তসহ) করছে, সেগুলো মূলত তাদের “পকেট কমিটির” মাধ্যমে করছে। স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে কাজ করছে। সেখানে জবাবদিহিতার ঘাটতি রয়েছে’, বলেন তিনি। এ ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ বিচার দাবি করেন অধ্যাপক আমজাদ হোসেন।

সার্বিক বিষয়ে কথা বলতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামকে ফোন করা হলে তিনি তা রিসিভ করেননি।

Comments

The Daily Star  | English

Health sector reform: 33 proposals set for implementation

The Health Ministry has selected 33 recommendations from the Health Sector Reform Commission as it seeks to begin implementing the much-needed reform process in the country’s health system.

13h ago