লিটনের সেঞ্চুরির পর সাকিবের ৫ উইকেট, পাত্তাই পেল না জিম্বাবুয়ে

শুক্রবার হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে জিম্বাবুয়েকে ১৫৫  রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছে বাংলাদেশ।
ছবি: জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট

সকালই অনেক সময় আভাস দেয় পুরো দিনের। এবার হলো ব্যতিক্রম। সকালে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়া বাংলাদেশ পরে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়াল লিটন দাসের সেঞ্চুরিতে। বড় পুঁজি পাওয়ার পর তালগোল পাকানো রান তাড়ায় ডুবল স্বাগতিক জিম্বাবুয়ে। পেসারদের উইকেটে সাকিব আল হাসান পেয়ে গেলেন ৫ উইকেট।

শুক্রবার হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে জিম্বাবুয়েকে ১৫৫  রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের করা ২৭৬ রানের জবাবে ২১ ওভারের বেশি বাকি থাকতে জিম্বাবুয়ে থেমে গেল ১২১ রানে। বড় জয়ে  তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজেও তামিম ইকবালের দল  এগিয়ে গেছে ১-০ ব্যবধানে।

দলের জয়ে ১০২ রান করে ব্যাটিংয়ে নায়ক লিটন। বোলিংয়ে ৩০ রানে ৫ উইকেট নিয়ে কাজের কাজটা করলেন সাকিব। 

২৭৭ রানের লক্ষ্যে নেমে শুরুতেই উইকেট হারায় জিম্বাবুয়ে। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে অভিষিক্ত ওপেনার তাদিওয়ানশে মারুমানিকে তুলে নেন মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন। সাইফুদ্দিনের ভেতরে ঢোকা বলে ইনসাইড এজে বোল্ড হয়ে ০ দিয়ে দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু তার।

পঞ্চম ওভারে ওয়েসলি মাধভেরেকে দারুণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড করে দেন তাসকিন আহমেদ। ১৩ রানে ২ উইকেট হারানো দল দিশা পাচ্ছিল ব্র্যান্ডন টেইলর- ডিওন মায়ার্সের ব্যাটে। তবে এই জুটি থিতু হতেই চলে উইকেট বিলিয়ে দেওয়ার মিছিল।

সাবলীল ব্যাট করতে থাকা মায়ার্স অকারণে ঝুঁকি নিয়ে ডুবান দলকে। শরিফুল ইসলামকে টেনে পুল করতে গিয়ে তুলে দেন সহজ ক্যাচ। অধিনায়ক টেইলর সহজেই বের করতে পারছিলেন রান। রানরেটের চাপও ছিল না। অহেতুক ঝুঁকি নিয়ে তিনিও ফেরেন বাজেভাবে। ৩১ বলে ২৪ করে শিকার হন  সাকিবের।

রেজিস চাকাভা নেমে একপাশে রান বাড়াচ্ছিলেন। তার সঙ্গে জুটি গড়তে পারেননি রায়ান বার্লও। সাকিবের লে স্লগ সুইপ করে তিনিও দিয়েছেন ক্যাচ।

টিমাইসেন মারুমা ফিল্ডিং করতে গিয়ে আহত হয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন। আর ফিরতে পারেননি। একজন ব্যাটসম্যান এমনিতেই কমে যায়  জিম্বাবুয়ের।

এরমধ্যে লুক জঙ্গুই হয়ে যান রান আউট। ব্লেসিং মুজারাবানি সাকিবের বলে শিকার হন আম্পায়ারের বাজে সিদ্ধান্তের। ১০৫ থেকে ১০৭ রানে যেতেই ৩ উইকেট খুইয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় স্বাগতিকরা।

শেষ ভরসা চাকাভাও থামেন ফিফটির পর। অনায়াসে খেলতে থাকা এই কিপার-ব্যাটসম্যান ৪৭ বলেই তুলেছিলেন ফিফটি। ৫০ বলে ৫৪ করে তিনিও আত্মাহুতি দেন। সাকিবের বলে পুল করে সীমানা পার করতে পারেননি। ধরা পড়েন মিরাজের হাতে।

রিচার্ড এনগারাভাকে আউট করে শেষটাও মুড়েছেন সাকিবই।

এর আগে সকালের মুভমেন্ট, বাউন্সের কন্ডিশনে ব্যাট করতে গিয়েই বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। মাহমুদউল্লাহ আর আফিফ হোসেনকে নিয়ে সেই বিপদ থেকে দলকে রক্ষা করার ত্রাতা লিটন।

তৃতীয় ওভারেই মুজারাবানির শিকার হন তামিম। তার লাফিয়ে উঠা বলে ব্যাট ছুঁইয়ে উইকেটের পেছনে ধরা দেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।

তিনে নেমেই ব্যাটে বল লাগিয়েছিলেন সাকিব। কিন্তু ভালো টাচে শুরুটা কাজে লাগল না। অস্থির হয়ে গেলেন দ্রুতই। বেশ কয়েকবার পরাস্ত হয়ে অস্বস্তিতে পড়া এই ব্যাটসম্যান মুজারাবানির বলে সহজ ক্যাচ দেন পয়েন্টে।

মোহাম্মদ মিঠুন নেমেছিলেন মুশফিকুর রহিমের জায়গায়। কিন্তু সুযোগটা বিফলে হারান তিনি। ১৯ বলে ১৯ করা মিঠুন টেন্ডাই চাতারার অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল তাড়া করে উইকেটের পেছনে দেন ক্যাচ।

লিটন পরে সঙ্গী হিসেবে পেয়েছিলেন মোসাদ্দেক হোসেনকে । তবে এই জুটির অবদানও কেবল ১৭। এনগারাভার অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বলে মোসাদ্দেকও ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে। ৭৪ রানেই ৪ উইকেট খুইয়ে বসে বাংলাদেশ।

এরপর লিটনের সঙ্গে প্রতিরোধ গড়েন মাহমুদউল্লাহ। শুরুতে সময় নিয়ে থিতু হওয়া লিটন পরিস্থিতির দাবি মেটচ্ছিলেন ঠান্ডা মাথায়। শটের সংখ্যা কমিয়ে টিকে থাকার দিকে মন দেন তিনি।

৭৮ বলে মাত্র ৩ বাউন্ডারিতে ক্যারিয়ারের সবচেয়ে মন্থর ফিফটি স্পর্শ করেন তিনি। মাহমুদউল্লাহও সময় নিয়ে থিতু হয়ে রান বাড়াতে থাকেন। পঞ্চম উইকেটে বড় জুটির পর শেষটাও রাঙানোর আভাস ছিল তার। তবে ১০৩ বলে ৯৩ রানের জুটির পর বিদায় মাহমুদউল্লাহর। ৫২ বলে ৩৩ করা মাহমুদউল্লাহ লুক জঙ্গুইর স্লোয়ার বাউন্সার মারতে গিয়ে পুরো ব্যাটে লাগাতে পারেননি। সহজ ক্যাচ যায় উইকেটের পেছনে।

শুরুতে সময় নিয়ে থিতু হওয়া লিটন ফিফটির পর ছিলেন অনেকটা সাবলীল। বাউন্ডারির উপর জোর না দিয়ে দারুণ বিচক্ষণাভাবে সিঙ্গেল-ডাবলসের উপর ভর দিয়ে এগিয়ে নেন ইনিংস। রান-বলের ব্যবধানও ক্রমশ কমে আসে।

১০০ বলে ৮ বাউন্ডারিতে ক্যারিয়ারে চতুর্থবারের মতো তিন অঙ্ক স্পর্শ করেন এই ডানহাতি ওপেনার। সেঞ্চুরির পর মেরে খেলে রান বাড়ানোর দায় ছিল তার উপরই বেশি। সেই চেষ্টাতে গিয়েই হয়ে যায় গড়বড়। রিচার্ড এনগারাভাকে পুলে উড়াতে গিয়ে ভাল টাইমিং হয়নি, ক্যাচ যায় ফাইন লেগে। ১১৪ বলে ১০২ রানে থামেন লিটন।

পরে আফিফ হোসেন দাঁড়িয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ পথ হারায়নি। মেহেদী হাসান মিরাজকে নিয়ে সপ্তম উইকেটে আরও ৫৮ রান যোগ করেন তিনি।

৪৯তম ওভারে মিরাজ ২৫ বলে ২৬ করে ক্যাচ দেওয়ার পরের বলেই স্কুপ করতে গিয়ে বোল্ড হন আফিফ। ৩৫ বলে দলের চাহিদা মেটানো ৪৫ এসেছে তার ব্যাটে। তাতে দল পেয়েছে চ্যালেঞ্জিং পুঁজি।

রান তাড়ায় অদ্ভুত অ্যাপ্রোচ নেওয়ায় জিম্বাবুয়ের কাছে ওই রানই হয়ে যায় পাহাড়সম।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৭৬/৯   ( তামিম ০, লিটন ১০২, সাকিব ১৯, মিঠুন ১৯, মোসাদ্দেক ৫ , মাহমুদউল্লাহ ৩৩, আফিফ ৪৫ , মিরাজ ২৬, সাইফুদ্দিন ৮* , তাসকিন ১, শরিফুল ০* ; মুজারাবানি ২/৪৭ , চাতারা ১/৪৯, এনগারাভা ২/৬১, জঙ্গুই ৩/৫১ , বার্ল ০/৩১, মাধভেরে ০/৩৭ ) 

জিম্বাবুয়ে : ২৮.৫ ওভারে ১২১  (মাধভেরে ৯, মারুমানি ০, টেইলর ২৪, মায়ার্স ১৮, চাকাভা ৫৪, বার্ল ৬, জঙ্গুই ০, মুজারাবানি ২, চাতারা ২*,  এনগারাভা ০ , মারুমা (আহত থাকায় ব্যাট করতে পারেননি)  ; তাসকিন ১/২২ , সাইফুদ্দিন ১/২৩, সাকিব ৫/৩০, শরিফুল ১/২৮, মিরাজ ০/১৫, মোসাদ্দেক ০/১)

ফল: বাংলাদেশ ১৫৫ রানে জয়ী।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: লিটন দাস।

সিরিজ: তিন ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশ ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে।

Comments

The Daily Star  | English
pharmaceutical industry of Bangladesh

Starting from nowhere, pharma sector becomes a lifesaver

The year 1982 was a watershed in the history of the pharmaceutical industry of Bangladesh as the government stepped in to lay the foundation for its stellar growth in the subsequent decades.

18h ago