করোনা আতঙ্ক নেই কোরবানির পশুর হাটে

ছবি: শাহীন মোল্লা/স্টার

স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার শর্তে ঈদুল আযহা উপলক্ষে গবাদি পশুর হাট বসানোর অনুমতি দিয়েছিল সরকার। কিন্তু, এ শর্ত মানছে না কেউ।

কোরবানির পশুর হাটে সরকার যেসব ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছে তার একটি হচ্ছে প্রবেশপথে সবার তাপমাত্রা পরীক্ষা করা। এ ছাড়া, প্রবেশপথে জীবাণুনাশক চেম্বার ও হাত ধোয়ার জায়গা রাখারও নির্দেশনা আছে।

গত মঙ্গলবার দেওয়া তথ্য অধিদপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, হাটজুড়ে ক্রেতাদের একমুখী চলাচল নিশ্চিত করতে ও ভিড় এড়াতে পশুর হাটগুলোতে প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়ার জন্য অবশ্যই আলাদা আলাদা পয়েন্ট রাখতে হবে।

তবে, দ্য ডেইলি স্টারের প্রতিবেদকরা রাজধানীর গাবতলী, কচুক্ষেত, ধুপখোলা, সাদেক হোসেন খোকা খেলার মাঠ, পোস্তগোলা ও মোহাম্মদপুরের পশুর হাটগুলো ঘুরে দেখেছেন, এসব নির্দেশনার কোনোটিই মানা হচ্ছে না। এসব হাটে না আছে আলাদা প্রবেশ ও বের হওয়ার পথ, না আছে প্রবেশ মুখে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা। মাপা হচ্ছে না শরীরের তাপমাত্রাও। 

বয়স্ক ব্যক্তি ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি করোনা ঝুঁকিতে থাকায়, তাদের হাটের ভেতরে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু, সব বয়সের ক্রেতাদেরই এসব হাটে স্বাভাবিকভাবে ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে। সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয় হচ্ছে, হাটগুলোতে হাতে গোনা কিছু মানুষকে শুধু মাস্ক পরতে দেখা গেছে।

বাংলাদেশ বর্তমানে দৈনিক সংক্রমণের দিক থেকে শীর্ষে থাকা ১৪টি দেশের একটি। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সরকারকে ১ জলাই থেকে শুরু হওয়া বিধি-নিষেধ আরও দুই সপ্তাহের জন্য বাড়াতে বললেও, সরকার ঈদের কারণে এক সপ্তাহের জন্য বিধি-নিষেধ শিথিল করেছে।

কোরবানির পশুর হাটগুলোর পরিবেশ দেখে মনে হয়নি যে করোনা আক্রান্ত হওয়া নিয়ে কারো কোনো মাথাব্যথা আছে। আশেপাশের চায়ের দোকানগুলোতেও লোকজনের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।

দেশের বিভিন্ন জেলা ও বিভিন্ন এলাকা থেকে এসব হাটে আসা ব্যবসায়ীদের প্রায় সবাইকেই মাস্ক ছাড়া দেখা গেছে। চুয়াডাঙ্গা থেকে পাঁচটি গরু নিয়ে ধুপখোলা হাটে আসা আল-আমিনও তাদের একজন। মাস্ক কোথায় জানতে চাইলে ব্যাগ থেকে একটি মাস্ক বের করে দেখান তিনি।

গাবতলী হাটের আরেক গরু ব্যবসায়ী মোখলেসুর রহমান জানান, মাস্ক পরতে তার অস্বস্তি লাগে।

‘মাস্ক পরে কাস্টমারদের সঙ্গে কথা বলা কঠিন’, তিনি বলেন।

এ ছাড়া, মাস্ক পরা ও স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো দৃশ্যমান তৎপরতাও দেখা যায়নি পশুর হাটগুলোতে।

স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে মিরপুরের টোলারবাগের বাসিন্দা আমির আলি গিয়েছিলেন গাবতলির হাটে। তাদের একজনের মুখেও মাস্ক ছিলো না। মাস্কের কথা জানতে চাইলে পকেট থেকে মাস্ক বের করেন আমির।

গাবতলী গরুর হাটের ইজারাদার রাকিব ইমরান জানান, তারা বারবারই লাউড স্পিকারে মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বলছেন।

সাদেক হোসেন খোকা হাটের তাপমাত্রা মাপার যন্ত্র নষ্ট হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন হাটটির উপদেষ্টা ও ঢাকা দক্ষিণের ৪৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি জাকির হোসেন।

হাত ধোয়ার ব্যবস্থা না থাকার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা হাত ধোয়ার বেসিনের ব্যবস্থা করব।’

কচুক্ষেত গবাদী পশুর হাটের ব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম বাচ্চুর কাছে এসব প্রশ্ন করা হলে, তিনিও একই ধরনের জবাব দেন।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা অনিয়মের বিষয়টি খতিয়ে দেখব।’

‘নিজেদের ভালোর জন্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে আমাদের। সরকার যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ের জন্য জনগণকেও তাদের ভূমিকা পালন করতে হবে’, উল্লেখ করেন তিনি।

কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি উপদেষ্টা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেছেন, কোরবানির পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধির ব্যাপক লঙ্ঘন যে সংক্রমণ আরও বাড়িয়ে দিবে, তা আঁচ করার জন্য বিশেষজ্ঞ হওয়ার দরকার নেই।

তিনি বলেন, ‘হাসপাতালগুলো প্রায় ভর্তি। রোগীর সংখ্যা বাড়লে অনেকে চিকিৎসা নাও পেতে পারেন।’ 

ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন জারীন তাসনিম

Comments

The Daily Star  | English

No price too high for mass deportations

US President-elect Donald Trump has doubled down on his campaign promise of the mass deportation of illegal immigrants, saying the cost of doing so will not be a deterrent.

7h ago