আমাদের দরজায়ও কড়া নাড়ছে করোনা
অবশেষে আমাদের ঘরের দরোজায় এসেও কড়া নাড়ছে মহামারি করোনা। আমি যে কাউন্সিল এলাকায় থাকি সেটাকে 'হটস্পট' ঘোষণা করা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ায় করোনা আঘাত করার পর এই প্রথমবারের মতো আমাদের ব্লাকটাউন কাউন্সিল এলো হটস্পটের তালিকায়।
নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের সর্ববৃহৎ কাউন্সিল এখন পরিণত হয়েছে একটি কারাগারে। কাউন্সিলের রাস্তা-ঘাট একেবারে জনশূন্য। তিন লাখ ৯৫ হাজার মানুষ এখন ঘরবন্দি।
নিউ সাউথ ওয়েলসের ১২৮টি কাউন্সিলে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা শনাক্তের সংখ্যা ১৪১। এর মধ্যে আমরা যে পশ্চিমাঞ্চলে বাস করি সেখানেই শনাক্ত হয়েছেন ৪৬ জন। গত দেড় বছরের মধ্যে এটাই সর্বোচ্চ সংখ্যক শনাক্ত।
আমাদের পশ্চিমাঞ্চল নিয়ে রাজ্য সরকারও খুব চিন্তিত।
নিউ সাউথ ওয়েলসের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ব্র্যাড হাজজার্ড বলেছেন, 'দুর্ভাগ্যক্রমে সংক্রমণ বাড়ছে। আমাদের পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিম সিডনিতে ক্রমাগত এবং ক্রমবর্ধমান সমস্যা রয়েছে।'
লকডাউনের বিধিনিষেধের পাশাপাশি এই কাউন্সিলে আরও কিছু কঠোর বিধান আরোপ করা হয়েছে।
স্বাস্থ্যসেবা কর্মী ছাড়া এই কাউন্সিলের কোনো অধিবাসী কাজে যেতে পারবেন না। জরুরি প্রয়োজনেও এই এলাকার কেউ অন্য এলাকায় যেতে পারবেন না এবং অন্য এলাকার কেউ আসতে পারবেন না এই এলাকায়।
গত শুক্রবার নিউ সাউথ ওয়েলসের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. কেরি চ্যান্ট 'ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি' বা 'জাতীয় দুর্যোগ' ঘোষণা করেছেন রাজ্য জুড়ে।
কোভিড-১৯ এর প্রথম ঢেউ যখন গোটা অস্ট্রেলিয়াকে কাঁপিয়ে তুলেছিল তখনও নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্য ছিল সব থেকে নিরাপদ। পৃথিবীর প্রায় সব বড় শহর যখন এই মহামারির আঘাতে হচ্ছিল তছনছ, তখনও সিডনি ছিল বিপদমুক্ত শহর। করোনা শনাক্ত ছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এসে সেই রাজ্য আর নগরীকে নিয়ে গেছে বিপদসীমার প্রান্তে। গত ১৬ জুন সিডনিতে মাত্র একজনের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছিল। দ্রুত গতিতে তা বৃদ্ধি পেলে ৮ জুলাই। দুই সপ্তাহের জন্য বৃহত্তর সিডনিতে লকডাউন ঘোষণা করা হয়। লকডাউনের মধ্যেও শনাক্তের সংখ্যা যখন বাড়তেই থাকে তখন লকডাউনের সময়সীমা বাড়িয়ে দেওয়া হয় আরও তিন সপ্তাহ। সেইসঙ্গে আরোপ করা হয় কঠোর আইন। এরপরও নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় এই মরণব্যাধি।
রাজ্য সরকার করোনা মোকাবিলায় এতোটাই কঠোর অবস্থান নিয়েছেন যে, ব্যাংক্সটাউন হাসপাতালের দুই শিক্ষার্থী নার্স কোভিড-১৯ সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার পর হাসপাতালের ১৩০ জন কর্মী এবং রোগীকে বাধ্যতামূলকভাবে আইসোলেশনে পাঠানো হয়েছে।
আকিদুল ইসলাম: অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী লেখক, সাংবাদিক
Comments