ম্যাচ রিপোর্ট

সৌম্যের অলরাউন্ডার নৈপুণ্যে সিরিজ জিতল বাংলাদেশ

রোববার হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে সিরিজ নির্ধারনী শেষ ম্যাচ ছিল রান বন্যায় ভরা। জিম্বাবুয়ের ১৯৩ রান বল আগে টপকে বাংলাদেশ জিতেছে ৬ উইকেটে। টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতে নিয়েছে ২-১ ব্যবধানে।
নিউজিল্যান্ড সফরে বাংলাদেশের দল ঘোষণা
ছবি: এএফপি

নিয়মিত বোলারদের বেদম মার খাওয়ার মাঝে এসে রান আটকে দেওয়ার পাশাপাশি ২ উইকেট নিয়ে দলকে খেলায় আনেন সৌম্য সরকার। পরে ওপেন করতে নেমে বিশাল রান তাড়ায় খেললেন ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস। শেষ দিকে ঝড় তুলে কাজটা সারলেন শামীম হোসেন পাটোয়ারি। বাংলাদেশ পেল রোমাঞ্চকর জয়। 

রোববার হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে সিরিজ নির্ধারণী শেষ ম্যাচ ছিল রান বন্যায় ভরা। জিম্বাবুয়ের ১৯৩ রান ৪ বল আগে টপকে বাংলাদেশ জিতেছে ৬ উইকেটে। টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতে নিয়েছে ২-১ ব্যবধানে।

দলের হয়ে ৪৯ বলে সর্বোচ্চ ৬৮ রান করেছেন সৌম্য। সেইসঙ্গে বল হাতে ১৯ রানে ২ উইকেট নিয়ে তিনিই দলের ম্যাচ জেতার মূল নায়ক।

১৩ বলে ২৫ করে অবদান সাকিব আল হাসানের, ২৮ বলে ৩৪ করেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। তবে তাদের ছাপিয়ে গেছেন শামীম। মাত্র ১৫ বলে ৩১ করে খেলা শেষ করেছেন এই তরুণ।

বিশাল লক্ষ্য নেমে প্রথম ওভারেই এক ছয়-এক চারে ভালো শুরু আনেন সৌম্য সরকার। নাঈম শেখ অবশ্য ছিলেন জড়সড়। তাল মেলাতে না পারে ৭ বলে ৩ করে তিনি ক্যাচ দেন ব্লেসিং মুজারাবানির বলে।

সৌম্য এরপর আরও বাউন্ডারি বের করার চেষ্টায় থাকলেও টাইমিং হচ্ছিল না। পাওয়ার প্লের ৬ ওভার থেকে ৫০ রানের বেশি নিতে দেয়নি জিম্বাবুয়ে। ৬ ওভারের ৩ ওভার করা টেন্ডাই চাতারা দেন কেবল ১৫ রান।

পাওয়ার প্লের পর লুক জঙ্গুইকে দুই ছক্কায় উড়ান সাকিব। ওই ওভারেরই শেষ ডেকে আনে সাকিবের। জঙ্গুইকে সোজা আরেকটি মারতে গিয়ে ধরা পড়েন লং অফে। ১৩ বলে ২৫ বলে শেষ হয় বাংলাদেশের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের ইনিংস। দ্বিতীয় উইকেটে থামেন ৩২ বলে সাকিব-সৌম্যের ৫০ রানের জুটি।

সৌম্য বাউন্ডারি বের করতে এরপরও ভুগছিলেন। চাতারার মতো ডিওন মেয়ার্স এসেও গতি কমানো বলে আটকে দিয়েছিলেন রান। সেটা সামলে অবশ্য পরে ৪০ বলে সিরিজে দ্বিতীয় ফিফটিতে পৌঁছান সৌম্য। এরপর কাটতে থাকে জড়তা। টানা বাউন্ডারিতে দ্রুত আরও কিছু রান বাড়িয়ে নেন তিনি।

তার সঙ্গে জমে উঠে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর জুটি। বাড়তে থাকে বাংলাদেশের জেতার আশাও। ১৪তম ওভারে গিয়ে অবশ্য বিপদ ডেকে আনেন সৌম্য। আবার আঘাত হানেন জঙ্গুই। তার বলে উড়াতে গিয়ে টাইমিং হয়নি। ক্যাচ উঠে লং অফে। ৪৯ বলে থামে সৌম্যের ৬৮ রানের ইনিংস। থামে ৩৫ বলে ৬৩ রানের জুটি।

এরপরও সমীকরণ ছিল নাগালের মধ্যেই। শেষ ৬ ওভারে করতে হতো ওভার প্রতি দশ রানের কম। থিতু মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে যোগ দিয়ে প্রথম বলেই ছক্কায় উড়ান আফিফ হোসেন।

১৫তম ওভারে দারুণ বল করেন মুজারাবানি। মাহমুদউল্লাহকে পর পর চার ডট করিয়ে মাত্র ২ রান দেন তিনি। চাপ কিছুটা বাড়ে বাংলাদেশের। ওয়েলিংটন মাসাকাদজার পরের ওভারে আরও এক ছক্কা মেরে ৪ বলে ১৪ করে  বোল্ড হয়ে যান আফিফ।

ছয় নম্বরে নেমে দলের চাহিদা মেটান শামীম। জিম্বাবুয়ের বোলারদের গতি বৈচিত্র্যে ভুগছিলেন তিনিও। তবে সামলে নিয়ে পরে পেয়ে যান গুরুত্বপূর্ণ কিছু বাউন্ডারি। ১৮তম ওভারে তার তিন বাউন্ডারিতে ম্যাচ চলে আসে বাংলাদেশের দিকে।

মাহমুদউল্লাহ জেতার কাজটা করার আগে আউট হয়ে গেলেও শামীম ক্রিজে থাকায় আর কোন সমস্যা হয়নি।

 

টস জিতে এদিনও ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল জিম্বাবুয়ে। তাতে দারুণ ফলও পায় তারা। দুই ওপেনার টাডিওয়ানশে মারুমানি আর ওয়েসলি মাধভেরে  আনেন উড়ন্ত সূচনা।

পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে ৬৩ আসে তাদের বোর্ডে। এরপর রেজিস চাকাভা নেমে চালান তাণ্ডব। একের পর এক ছক্কায় এলোমেলো করে দেন বাংলাদেশের বোলিং। একটা সময় মনে হচ্ছিল দুইশো ছাড়িয়ে যাবে জিম্বাবুয়ের পুঁজি। ৬ ছক্কায় ২২ বলে ৪৮ করা চাকাভাকে ফিরিয়ে ব্রেক থ্রো আনেন সৌম্য।

সৌম্যের বলে বাউন্ডারি লাইনে চাকাভার মারা শট নাঈম শেখে দারুণ দক্ষতায় ধরে রাখেন বৃত্তের ভেতর। কাছে থাকা শামীম পাটোয়ারি ধরেন ক্যাচ।  ওই ওভারেই আসে আরেক সাফল্য। জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক সিকান্দার রাজাকেও বোল্ড করে দেন সৌম্য।

তখনই খেলায় ফিরে বাংলাদেশ। অবশ্য টিকে থেকে  মাধেভেরে ৩১ বলে তুলে নেন ফিফটি। নিজের শেষ ওভারে এসে মাধভেরেকে ফেরান সাকিব। 

প্রথম দিকে রানের যে স্রোত ছিল, শেষ দিকে তা অনেকটাই তখন নেমে আসে। দারুণ বল করে রাশ টেনে ধরেন শরিফুল। তবে সাইফুদ্দিনের ওভার থেকে ঠিকই বেরিয়ে যায় রান। ১৭তম ওভার থেকে আবার চলে আসে ১৯ রান।  কিছুটা সময় নিয়ে থিতু হওয়া ডিওন মেয়ার্সকে ১৯তম ওভারে ফেরান শরিফুল।

ওই ওভারে লুক জঙ্গুইকে বেধে রেখে মাত্র ১  রান দেন শরিফুল।  কিন্তু শেষ ওভারে আবার খরুচে সাইফুদ্দিন। তার কাছ থেকে বেরিয়ে যায় ১৪ রান। জিম্বাবুয়ে চলে যায় দুইশোর কিনারে।  তবে দারুণ বুদ্ধিদীপ্ত রান তাড়ায় সেই পুঁজিও পেরিয়ে জিতেছে বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ে সফরে গিয়ে টেস্ট, ওয়ানডের পর টি-টোয়েন্টি সিরিজেও ধরে রেখেছে সাফল্য। 

 

সংক্ষিপ্ত স্কোর

জিম্বাবুয়ে: ২০ ওভারে ১৯৩/৫   (মারুমানি , মাধভেরে ৫৪, চাকাভা ৪৮ , রাজা ০, মেয়ার্স ২৩ , বার্ল ৩১* , জঙ্গুই ১*  ; তাসকিন ০/২৮, সাইফুদ্দিন ১/৫০, শরিফুল ১/২৭, সাকিব ১/২৪ , নাসুম ০/৩৭,  সৌম্য ২/১৯)

বাংলাদেশ: ১৯.২ ওভারে ১৯৪/৪  (নাঈম ৩,  সৌম্য ৬৮ , সাকিব ২৫, মাহমুদউল্লাহ ৩৪  , আফিফ ১৪, শামীম ৩১*, সোহান ১* ; রাজা ০/১৩, চাতারা ০/২৭, মুজারাবানি ২/২৭, মেয়ার্স ০/৪২, জঙ্গুই ৩/৪২, ওয়েলিংটন ১/৩৬  )

ফল: বাংলাদেশ ৫ উইকেটে জয়ী।

ম্যান অব দ্য  ম্যাচ: সৌম্য সরকার।

সিরিজ: বাংলাদেশ ২-১ ব্যবধানে জয়ী।

Comments

The Daily Star  | English

Will there be any respite from inflation?

To many, especially salaried and fixed-income individuals, this means they will have no option but to find ways to cut expenditures to bear increased electricity bills.

7h ago