পাহাড় ধসে মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব

১৩ বছর পরেও কেন সুপারিশগুলোর বাস্তবায়ন হয়নি?
ছবি: আনভিল চাকমা/স্টার ফাইল

আমরা কক্সবাজারে পাহাড়ধসে পাঁচ জন রোহিঙ্গাসহ সাত জনের প্রাণহানিতে গভীর শোক প্রকাশ করছি। দুর্ঘটনায় করুণ মৃত্যুর শিকার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছে ১৪ বছর বয়সী একজন বালিকা, ৯ বছর বয়সী একজন বালক ও এক বছর বয়সী শিশু। এক্ষেত্রে আমরা একটি প্রশ্ন এড়িয়ে যেতে পারি না। এতগুলো প্রাণ ঝরে যাওয়ার ব্যাপারটি কি প্রত্যাশিতই ছিল না? অনেক বছর ধরে ভারী বৃষ্টিপাতের সময়ে নিয়মিতভাবে পাহাড় ধসের ঘটনাগুলো ঘটছে এবং এটি আমাদের দেশের জন্য খুবই সাধারণ একটি বিষয়। সমস্যাটির মূলে রয়েছে মানুষের তৈরি করা বিপর্যয়; অনিয়ন্ত্রিতভাবে পাহাড় কাটা ও প্রভাবশালীদের পাহাড় কেটে ভূমি দখল করার প্রবণতা। দখল করা ভূমিতে আবার অস্থায়ী বাড়ি নির্মাণ করে নিম্ন আয়ের মানুষদের কাছে সেগুলোকে ভাড়াও দেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে ভাড়াটেদের নিরাপত্তার কথা বিন্দুমাত্রও ভাবা হচ্ছে না। প্রায় এক লাখ মানুষ বৃহত্তর চট্টগ্রামের পাহাড় ও পাহাড়ি ঢালগুলোতে বসবাস করেন। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত আছে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবন জেলা।

আমাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জেলা প্রশাসন ইতোমধ্যে ধসের ঝুঁকিতে থাকা ৩০টি টিলা চিহ্নিত করেছে, যেখানে ১০ হাজার মানুষ বসবাস করেন। বর্ষা মৌসুমে কর্তৃপক্ষ চেষ্টা করেছিল মানুষদেরকে আশ্রয়কেন্দ্রে স্থানান্তর করার জন্য, কিন্তু সেখানে পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর হওয়ায় তারা সেখানে যেতে চাননি। কেন এই শেল্টারগুলোকে পরিষ্কার করে মানুষের বসবাসের যোগ্য করে তোলা হয়নি, যেখানে প্রায় প্রতি বছরই এগুলো ব্যবহার হওয়ার কথা?

চট্টগ্রামের মতিরঝর্ণায় ২০০৭ সালে ভয়াবহ পাহাড় ধসে ১২৭ জনের প্রাণহানির পর একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন কমিটি গঠন করা হয়েছিল, যারা ৩০টি সুপারিশ দিয়েছিলেন। সেগুলোর মধ্যে ছিল পাহাড় ধসপ্রবণ এলাকার বাসিন্দাদের পাকাপাকি ভাবে অন্য জায়গায় স্থানান্তর করা, পাহাড় ধসের প্রভাবকে প্রশমিত করে বেশি করে সেরকম গাছ লাগানো, পাহাড় কাটা বন্ধ করা ও জড়িতদের প্রতিহত করার জন্য পাহাড়ের চতুর্দিকে বেড়া দেওয়া, ইত্যাদি। ১৩ বছর পরেও কেন এই সুপারিশগুলোর বাস্তবায়ন হয়নি? ইতোমধ্যে আমাদেরকে ২০১৭ সালের জুনে চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবন জেলায় আরেকটি ভয়াবহ পাহাড় ধস দেখতে হয়েছে, যেখানে ১৭০ জনের প্রাণ চলে যায়। সরকারের অবশ্যই খুঁজে বের করতে হবে কেন এই উদ্যোগগুলো নেওয়া হয়নি। উদ্যোগগুলো নেওয়া হলে শত শত মানুষের জীবন বাঁচানো যেত। যেহেতু ভারি বৃষ্টির কারণে আরও পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা আছে, জরুরিভাবে কিছু উদ্যোগ নিতে হবে। যেসব মানুষ পাহাড় ধসপ্রবণ এলাকায় বসবাস করছে, তাদেরকে শিগগির আশ্রয় কেন্দ্রে স্থানান্তর করতে হবে।  আশ্রয়কেন্দ্রগুলোকে ঠিকমতো পরিষ্কার করে সেখানে প্রাথমিক সুবিধা এবং খাদ্য, ওষুধের মতো প্রয়োজনীয় ত্রাণ সামগ্রীর ব্যবস্থা করতে হবে। কর্তৃপক্ষের উচিত হবে ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গা শরণার্থীদেরকেও স্থানান্তরিত করা, কারণ তারাও পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকিতে আছে। দেশব্যাপী করোনাভাইরাসের উচ্চ সংক্রমণের হারকে বিবেচনায় রেখে শেল্টারগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে। কমিটির সুপারিশগুলো যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাস্তবায়নের জন্য সরকারকে চেষ্টা করতে হবে।

ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান।

Comments

The Daily Star  | English

Decision on AL’s registration after receiving govt ban order: CEC

The decision to ban was made at a special meeting of the council following three days of demonstrations demanding a ban on the party

29m ago