করোনায় মৃত্যু ও শনাক্তের তথ্যে অসঙ্গতি, বিভ্রান্তিতে সিলেটবাসী

মহামারি শুরুর পর থেকে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সিলেট বিভাগে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৮২৫ জন মারা গেছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তবে সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য কার্যালয়ের মতে মারা গেছেন ৭৬১ জন।
sylhet_corona_7aug21.jpg

মহামারি শুরুর পর থেকে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সিলেট বিভাগে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৮২৫ জন মারা গেছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তবে সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য কার্যালয়ের মতে মারা গেছেন ৭৬১ জন।

শুধুমাত্র মৃত্যুর তথ্য নিয়ে অসঙ্গতি নয়। মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা, জেলাভিত্তিক মৃত্যু ও শনাক্তের হিসেব, দৈনিক মৃত্যু, এমনকি ডেডিকেটেড কোভিড-১৯ হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা নিয়ে সরকারের এই প্রতিষ্ঠান ভিন্ন ভিন্ন তথ্য জানাচ্ছে।

সম্প্রতি প্রকাশিত প্রতিটি দৈনিক প্রতিবেদনেই এ অসঙ্গতি লক্ষ করা গেছে। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য কার্যালয়ের কর্মকর্তারা তথ্যগত এ অসঙ্গতির কারণ জানাতে পারেননি।

গত বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, সেদিন সকাল ৮টা পর্যন্ত সিলেট জেলায় মোট ৫১৭ জন, সুনামগঞ্জে ১০৬ জন, হবিগঞ্জে ৮০ জন এবং মৌলভীবাজারে ১২২ জন মারা গেছেন। কিন্তু সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সিলেট জেলায় ৫৭৪ জন, সুনামগঞ্জে ৫৫, হবিগঞ্জে ৩৬, মৌলভীবাজারে ৬১ এবং সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩৫ জন মারা গেছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত মোট ৪২ হাজার ৯৭৫ জন করোনা রোগীকে শনাক্ত করা হয়েছে। বিভাগীয় স্বাস্থ্য কার্যালয় বলছে ৪৩ হাজার ৪৬১ জন।

অধিদপ্তর আরও জানাচ্ছে, সিলেট জেলায় ২৬ হাজার ৭২৯ জন, সুনামগঞ্জে পাঁচ হাজার তিন জন, হবিগঞ্জে পাঁচ হাজার ২২৬ এবং মৌলভীবাজারে ছয় হাজার ১৭ জন আক্রান্ত রোগীকে শনাক্ত করা হয়েছে। স্বাস্থ্য কার্যালয়ের তথ্য বলছে, সিলেট জেলায় ২৩ হাজার ৫৪৪ জন, সুনামগঞ্জে পাঁচ হাজার ৬২, হবিগঞ্জে পাঁচ হাজার ২২৯, মৌলভীবাজারে ছয় হাজার ৩০ এবং সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিন হাজার ৫৭৬ জন আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন।

মোট গণনার পাশাপাশি দৈনিক মৃত্যুর তথ্যেও অসঙ্গতি পাওয়া গেছে। গত বৃহস্পতিবার বিভাগীয় স্বাস্থ্য কার্যালয়ের প্রতিবেদনে দেখা যায়, সেদিন সকাল ৮টা পর্যন্ত তার আগের ২৪ ঘণ্টায় বিভাগে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মারা গেছেন ২৩ জন।

তার আগের দিন বিভাগীয় স্বাস্থ্য কার্যালয়ের ২০ জনের মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছিল। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে মারা গেছেন মাত্র পাঁচ জন।

এ ছাড়া, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত ও সংক্রমণের উপসর্গ নিয়ে ভর্তি রোগীদের চিকিৎসা কার্যক্রম চললেও সে তথ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে অনুপস্থিত।

সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য কার্যালয়ের গত বৃহস্পতিবারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেদিন সকালে হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন ইউনিটে ২৮৯ জন ভর্তি ছিলেন। এদের মধ্যে সাধারণ শয্যায় ১১২ জন করোনায় আক্রান্ত, আইসিইউতে আট জন এবং সাধারণ শয্যায় সংক্রমণের উপসর্গ নিয়ে ১৬৯ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন ইউনিটে মোট ৩২৫টি সাধারণ এবং ১৮টি আইসিইউ শয্যা রয়েছে।

অথচ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে এই হাসপাতালের শয্যা সংক্রান্ত কোনো তথ্যই নেই।

সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য কার্যালয়ের পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সম্প্রতি এই কার্যালয়ে পরিচালক হিসেবে যোগ দেওয়ার পরে আমি আমাদের দেওয়া তথ্যের সাথে অধিদপ্তরের তথ্যের এই অসঙ্গটিতে দেখতে পেয়েছি। এটি মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে।'

তিনি আরও বলেন, 'ঠিক কী কারণে এ অসঙ্গতি তা নিশ্চিত বলতে পারছি না, তবে বিষয়টি দ্রুত সমাধানের জন্য আমি ইতোমধ্যে অধিদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি।'

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (এমআইএস) অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিভাগীয় অফিসগুলো থেকে যে তথ্য পাঠানো হয়, সেটা সংকলন করে অধিদপ্তর দৈনিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। জ্ঞানত এতে কোনো অসঙ্গতি নেই বা তথ্য বিভ্রাট ঘটারও সুযোগ নেই।'

তথ্যের অসঙ্গতির বিষয়টি জানালে তিনি বলেন, 'যদি তা হয় তাহলে আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখবো এবং দ্রুতই এর সমাধান করবো।'

Comments

The Daily Star  | English

Asphalt melting due to heat, bargain bitumen

Amid the persisting heatwave, road surface in several districts has melted due to what experts say is the use of bitumen not strong enough to withstand extreme heat.

2h ago