লাভের আশায় কুমড়া সংরক্ষণ করে বিপাকে চাষি

কুমড়ার আশানুরূপ দাম না পেয়ে হতাশ তিস্তা পাড়ের নজের আলী। ছবি: এস দিলীপ রায়

ভালো দাম ও লাভের আশায় উৎপাদিত কুমড়া সংরক্ষণ করে বিপাকে পড়েছেন লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের চরের চাষিরা। ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার নদ-নদীর চরাঞ্চলে দুই শতাধিক চাষির এখন কুমড়া বিক্রি করে উৎপাদন খরচ তোলা কঠিন হয়ে পড়েছে।

এদিকে, কুমড়া পচনশীল হওয়ায় বেশি দিন ঘরে রাখতে না পেরে বাধ্য হয়ে কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এ বছর লালমনিরহাটে এক হাজার ৮০০ হেক্টর ও কুড়িগ্রামে তিন হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে ৯৭ হাজার মেট্রিক টন কুমড়া উৎপাদিত হয়েছে। উৎপাদিত এসব কুমড়ার অধিকাংশই চাষ হয়েছে চরাঞ্চলে।

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার তিস্তা পাড় চর শোলমারী এলাকার চাষি নজের আলী (৬৫) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি ৪০ হাজার টাকা খরচ করে তিস্তার চরে এক একর জমিতে কুমড়া চাষ করে উৎপাদন পেয়েছি সাত হাজার ৪০০ কেজি। তিন মাস আগে ৮ টাকা দরে চার হাজার কেজি কুমড়া বিক্রি করেছি। অবশিষ্ট তিন হাজার ৪০০ কেজি কুমড়া বাড়িতে সংরক্ষণ করি। ভালো দাম পাওয়ার আশায় কুমড়া সংরক্ষণ করে এখন অর্ধেক দামে বিক্রি করছি।'

লকডাউনের কারণে বাইরে থেকে পাইকার না আসায় তারা কম দামে কুমড়া বিক্রি করছেন। কিন্তু গেল বছর এই সময়ে প্রতি কেজি কুমড়া ১১ থেকে ১২ টাকা দরে বিক্রি করেছিলেন বলে জানান তিনি।

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার তিস্তা পাড় চর গোবর্ধানের কৃষক ফজলার রহমান (৫৮) ডেইলি স্টারকে জানান, গেল বছর উৎপাদিত কুমড়া বাড়িতে সংরক্ষণ করে লাভবান হয়েছিলেন। সেই আশায় এ বছর তিনি পাঁচ হাজার কেজি কুমড়া সংরক্ষণ করে এখন বিপাকে পড়েছেন। টাকার প্রয়োজন হওয়ায় বাধ্য হয়েই উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে কুমড়া বিক্রি করতে হচ্ছে। প্রতি কেজি কুমড়া উৎপাদন করতে পাঁচ থেকে ছয় টাকা খরচ হয় আর তা বিক্রি করতে হচ্ছে চার টাকা দরে।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার চর যাত্রাপুর এলাকার কৃষক দেলোয়ার হোসেন (৬০) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তিন মাস আগে কুমড়ার দাম আশানুরূপ না থাকায় আট হাজার কেজি কুমড়া বিক্রি না করে বাড়িতে সংরক্ষণ করেছিলাম। কিন্তু, এখন এসব কুমড়া নিয়ে বিপদে পড়েছি। বাজারে কুমড়ার দাম নেই আর লকডাউনের কারণে বাইরে থেকে পাইকারও আসছে না। এবছর কুমড়া চাষ করে লোকসানের ঘানি টানতে হচ্ছে।'

কুড়িগ্রামের সবজি পাইকার নবিউল ইসলাম (৫০) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এবছর কুমড়ার ফলন ভালো হওয়ায় বাজারে প্রচুর সরবরাহ। বাইরে থেকে পাইকার নেই তাই স্থানীয় বাজারে কম দামে কুমড়া বিক্রি করেতে হচ্ছে। এছাড়া কুমড়ার ক্রেতাও খুব কম। কুমড়া পচনশীল হওয়ায় । অনেকে এটি সংরক্ষণ করতে বেশি আগ্রহী নন।'

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামিম আশরাফ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তিনমাস আগে যে সকল চাষি উৎপাদিত কুমড়া বিক্রি করেছেন তারা লাভবান হয়েছেন। বেশি লাভের আশায় যারা কুমড়া সংরক্ষণ করেছেন তারা এখন বিপদে পড়েছেন। চরের চাষিরা কুমড়া চাষ করে বরাবরই লাভবান হয়ে আসছেন কিন্তু এবছর লকডাউনের কারণে তারা আশানুরূপ লাভবান হতে পারছেন না।'

Comments

The Daily Star  | English

July uprising: The wounds that are yet to heal, one year on

This week marks one year since 15-year-old Md Shahin Alam’s life was forever changed -- not by illness or accident, but by a bullet that tore through his left leg during a rally on August 5, 2024.

15h ago