আফগানিস্তানে তালেবানদের প্রধান নেতা কারা

আফগান সরকারের বিরুদ্ধে ২০০১ সাল থেকে লড়ছে তালেবান বাহিনী। তাদের এই লড়াইয়ে মূল ভূমিকা রেখেছেন ছয় জন গুরুত্বপূর্ণ নেতা।
সম্প্রতি আফগানিস্তানের বেশিরভাগ অংশের দখল নেওয়া এবং কাবুলকে পতনের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে আসার পেছনেও এই ছয় নেতার রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

হাইবাতুল্লাহ আখুনজাদা
'বিশ্বাসীদের নেতা' নামে পরিচিত ইসলাম ধর্ম বিশেষজ্ঞ হাইবাতুল্লাহ আখুনজাদা তালেবানদের প্রধান বা আমীর। তিনি দলটির সকল রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সামরিক সিদ্ধান্তের ব্যাপারে সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী।
তার পূর্বসূরি আখতার মানসুর মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত হওয়ার পর, ২০১৬ সালে তিনি আমীরের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
তার ছাত্র ও সহযোগীদের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, ১৫ বছর ধরে তিনি পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের কুচলাক শহরের একটি মসজিদে কাজ করেছেন। ২০১৬ সালের মে মাসে হঠাৎ করে তিনি উধাও হয়ে যান। ধারণা করা হয় তার বয়স ৬০ এর কাছাকাছি। আখুনজাদার বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

মোল্লা মোহাম্মদ ইয়াকুব
তালেবানদের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের ছেলে মোল্লা মোহাম্মদ ইয়াকুব দলটির সামরিক কার্যক্রমের দায়িত্বে রয়েছেন। স্থানীয় সংবাদ সংস্থাগুলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ধারণা করা হয় তিনি আফগানিস্তানেই অবস্থান করছেন।
আখতার মানসুরের মৃত্যুর পর দলটির পরবর্তী নেতা হিসেবে তার নাম প্রস্তাব করা হলেও তিনি ২০১৬ সালে নিজের পরিবর্তে আখুনজাদার নাম প্রস্তাব করেন। মানসুরের উত্তরসূরি নির্বাচন সংক্রান্ত একটি বৈঠকে ইয়াকুব নিজের স্বল্প পরিমাণ সামরিক অভিজ্ঞতা ও কম বয়সের কথা উল্লেখ করে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেন বলে জানিয়েছেন একজন তালেবান কমান্ডার।
ইয়াকুবের বয়স ৩০ এর কাছাকাছি বলে ধারণা করা হয়।

সিরাজউদ্দীন হাক্কানী
প্রখ্যাত মুজাহিদীন কমান্ডার জালালউদ্দীন হাক্কানীর ছেলে সিরাজউদ্দীন হাক্কানী 'হাক্কানী' নেটওয়ার্কের দায়িত্বে আছেন। এই উপ-দলটি পাকিস্তান-আফগানিস্তানের সীমান্ত জুড়ে অবস্থিত তালেবানদের সকল আর্থিক ও সামরিক সম্পদের দেখাশোনা করে।
ধারণা করা হয়, হাক্কানীরা আফগানিস্তানে আত্মঘাতী বোমা হামলার প্রচলন করে এবং তারা দেশটিতে বেশ বড় আকারের কয়েকটি আত্মঘাতী হামলা চালায়। এর মধ্যে রয়েছে সাবেক রাষ্ট্রপতি হামিদ কারজাইকে হত্যা প্রচেষ্টা, একটি বড় হোটেল ও ভারতের দূতাবাসে হামলা ইত্যাদি।
ধারণা করা হয় সিরাজউদ্দীনের বয়স ৪০ থেকে ৫০ বছরের এর মধ্যে। তার বর্তমান অবস্থান অজানা।

মোল্লা আবদুল গনি বারাদার
তালেবানদের অন্যতম সহ-প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা আবদুল গনি বারাদার দলটির রাজনৈতিক দপ্তরের প্রধান হিসেবে কাজ করছেন। আফগানিস্তানে টেকসই শান্তি ও অস্ত্র বিরতি নিয়ে দোহার আলোচনা দলটির একজন সদস্য তিনি।
মোল্লা ওমরের সবচেয়ে বিশ্বস্ত কমান্ডারদের একজন হিসেবে পরিচিত বারাদারকে পাকিস্তানের দক্ষিণ করাচিতে ২০১০ এ গ্রেপ্তার করা হলেও ২০১৮ সালে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

শের মোহাম্মদ আব্বাস স্টানিকজাই
তালেবান সরকারের সাবেক প্রতিমন্ত্রী স্টানিকজাই প্রায় এক দশক দোহায় বসবাস করেছেন। তিনি দলটির রাজনৈতিক দপ্তরের প্রধান হিসেবে ২০১৫ সালে নিযুক্ত হন।
তিনি আফগান সরকারের সঙ্গে একাধিক আলোচনায় অংশ নিয়েছেন এবং বিভিন্ন দেশে কূটনৈতিক সফরে তালেবানদের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
আব্দুল হাকিম হাক্কানী
আব্দুল হাকিম হাক্কানী তালেবানদের আলোচনা দলের প্রধান। তালেবানদের সাবেক 'ছায়া' প্রধান বিচারপতি হাকিম দলটির ধর্মীয় বিশেষজ্ঞদের কাউন্সিল প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন। ধারণা করা হয়, তিনি আখুনজাদার বিশেষ আস্থাভাজন।
Comments