রোচের বীরত্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রোমাঞ্চকর জয়

ম্যাচটা দুলছিল পেন্ডুলামের মতো। কখনো হেলছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের দিকে, কখনো নাটাই নিজেদের দিকে টেনে নিচ্ছিল পাকিস্তান। শেষ পর্যন্ত রোমাঞ্চ ছড়িয়ে হাসি চওড়া হয়েছে ক্যারিবিয়ানদেরই। কেমার রোচের বীরত্বে ম্যাচ জিতেছে তারা। তার আগে অবশ্য জেতার ক্ষেত্রটা তৈরি করে দেন তরুণ পেসার জেডন সিলস। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে সবচেয়ে কম বয়েসী হিসেবে ৫ উইকেট নেওয়ার নজির গড়েন।
রোববার কিংসটনের স্যাবাইনা পার্কে সিরিজের প্রথম টেস্টে পাকিস্তানকে ১ উইকেটে হারিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজে এগিয়ে গেছে ১-০ ব্যবধানে।
পাকিস্তানের দেওয়া ১৬৮ রানের লক্ষ্যে নেমে এক পর্যায়ে ১১৪ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে হারের পথে ছিল স্বাগতিকরা। দলের ১৪২ রানে শেষ স্বীকৃত ব্যাটসম্যান জশুয়া দা সিলভাও ফিরে যান। এরপর বাকি সবটা একা হাতে করে ফেলেন রোচ।
বল হাতে দুই ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়া এই পেসার ব্যাট হাতেই করেন আসল কাজ। দলকে জিতিয়ে তিনি অপরাজিত ছিলেন ৫২ বলে ৩০ রানে।
১৬৮ রানের লক্ষ্য পেরুতে গিয়ে চরম বিপর্যয়ে শুরু ক্যারিবিয়ানদের। কিরন পাওয়েল, ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট, এনক্রুমা বোনারকে একে একে তুলে নিয়ে ১৬ রানে ৩ উইকেট ফেলে দেন শাহীন শাহ আফ্রিদি।
পাঁচে নামা জার্মেইন ব্ল্যাকউড পালটা আক্রমণ চালিয়ে দলকে রাখেন পথে। রোস্টন চেজকে নিয়ে যোগ করেন ৬৮ রান। আশা বাড়ে উইন্ডিজের। ২২ রান করে ফাহিম আশরাফের শিকার হন চেজ। এরপর কাইল মেয়ার্সও কাটা পড়েন ফাহিমের বলে।
ফিফটি করা ব্ল্যাকউডকে হাসান আলি তুলে নিলে ম্যাচ হেলে যায় পাকিস্তানের দিকে। তিন বাউন্ডারিতে আশা দেখানো জেসন হোল্ডারও শিকার হন হাসানের। পাকিস্তানের জয় তখন দোয়ারে।
একমাত্র আশা জশুয়া ১৬ রান করে শাহীনের বলে উইকেটের পেছনে ধরা দিলে পাকিস্তানের জেতার পাল্লা হয় অনেক ভারি। জোমেল ওয়ারিকন আর জেডন সিলসকে নিয়ে বাকি কাজটা করার দায় কাঁধে নেন রোচ।
নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে ওয়ারিকন যখন আউট হন জয় থেকে তখনো ১৭ রান দূরে পাকিস্তান। সিলসকে এক পাশে রেখে বাকিটা তুলে উল্লাসে মাতেন রোচ।
এর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের নায়ক ১৯ পেরুনো তরুণ পেসার সিলস। ৭১ বছর আগের আলফ ভেলেন্টাইনের রেকর্ড ভেঙ্গে সবচেয়ে কম বয়েসী হিসেবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ৫ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড গড়েন তিনি।
তার ঝলকে দ্বিতীয় ইনিংসে পাকিস্তান আটকে যায় ২০৩ রানে। তবে জ্যামাইকার কিংসটনে কঠিন হতে থাকা উইকেটে লক্ষ্যটা তবু চ্যালেঞ্জিং ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের। রোমাঞ্চ ছড়িয়ে শেষ পর্যন্ত সেই ঠিকানায় পৌঁছাতে পারে তারা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
পাকিস্তান প্রথম ইনিংস: ২১৭
ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম ইনিংস: ২৫৩
পাকিস্তান দ্বিতীয় ইনিংস: ৮৩.৪ ওভারে ২০৩ (আগের দিনের ১৬০/৫) (ইমরান ০, আবিদ ৩৪, আজহার ২৩, বাবর ৫৫, ফাওয়াদ ০, রিজওয়ান ৩০, ফাহিম ২০, ইয়াসির ৪, হাসান ২৮, শাহীন ০, আব্বাস ১* ; রোচ ৩/৩০, সিলস ৫/৫৫, মেয়ার্স ১/৩৩, হোল্ডার ১/৩৬, ওয়ারিকন ০/২৮, চেজ ০/১২, ব্র্যাথওয়েট ০/৩)
৫৬.৫ ওভাড়ে ১৬৮/৯ (ব্র্যাথওয়েট ২, পাওয়েল ৪, বোনার ৫, চেজ ২২, ব্ল্যাকউড ৫৫, মেয়ার্স ০, হোল্ডার ১৬, জশুয়া ১৩, রোচ ৩০*, ওয়ারিকন ৬, সিলস ২* ; আব্বাস ০/২৭, শাহীন ৪/৫০, হাসান ৩/৩৭, ফাহিম ২/২৯, ইয়াসির ০/১৩)
ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: জেডন সিলস।
সিরিজ: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১-০ তে এগিয়ে (২ ম্যাচ সিরিজ)
Comments