টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ

অনেক প্রশ্নেও তামিমেই ভরসা নির্বাচকদের?

Tamim Iqbal & Habibul Bashar Sumon
ছবি: স্টার

তিন সংস্করণেই বাংলাদেশের ওপেনিং থাকে আতশ কাঁচের নিচে। টেস্ট-ওয়ানডেতে তামিম ইকবালের সঙ্গী কে হবেন এই প্রশ্নে আলোচনা থেমে থাকলেও টি-টোয়েন্টিতে তা ভিন্নমুখী। এখানে বরং তামিমের জায়গা নিয়েই উঠে প্রশ্ন।  টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ঘনিয়ে আসতে এই আলাপটাও নতুন করে চড়া হচ্ছে। বিব্রতকর পরিসংখ্যানের সঙ্গে লম্বা সময় ধরে এই সংস্করণে তামিমের অনুপস্থিতিও আলোচনার রসদ যোগাচ্ছে। কিন্তু নির্বাচকদের ভাবনা আবার পুরো ভিন্নরকম। তামিমের জায়গা নিয়ে তাদের মনে কোন সংশয় তো নেই-ই, এরকম প্রশ্নে বরং বিরক্তি প্রকাশ করছেন তারা।  

টি-টোয়েন্টিতে যেখানে দ্রুত রান করার চাহিদা। সেখানেও লম্বা সময় ধরে খেলেও তামিম মেটাতে পারেননি তা।  ৭৮ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে ২৪.০৮ গড় আর ১১৬.৯৬ স্ট্রাইকরেটে তামিমের রান ১ হাজার ৭৫৮।  আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে কমপক্ষে ২০ ম্যাচ খেলেছেন এমন ৫০ জন ওপেনারদের মধ্যে স্ট্রাইকরেটের বিচারে তামিমের অবস্থান সবার নিচে।

টি-টোয়েন্টির প্রশ্নবিদ্ধ পারফরম্যান্সের মাঝে লম্বা সময় ধরে এই সংস্করণে খেলাতেও নেই তামিম। গত ৩২ মাসে বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছে ২২টি, জিতেছে ১২টিতে। এই ২২ ম্যাচের মাত্র তিন ম্যাচে মাঠে ছিলেন তিনি। বিশ্বকাপের আগে টানা চার সিরিজে ব্যক্তিগত ছুটি আর চোট মিলিয়ে তামিম অনুপস্থিত। তবু ফিট থাকলে বিশ্বকাপ দলে তার বিকল্প দেখছেন না নির্বাচকরা। বিকল্প না দেখার কারণ নাকি পারফরম্যান্স। কিন্তু ৬টি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলা এই ওপেনারের পরিসংখ্যানও যে দিচ্ছে নাজুক ছবি।

চলতি বছর মার্চে নিউজিল্যান্ড সফরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ঘিরে দলের সমন্বয় তৈরি করা এবং প্রস্তুতি শুরু হয় বাংলাদেশের। পারিবারিক কারণে ওয়ানডে সিরিজের পর দেশে ফেরা তামিম খেলেননি ওই টি-টোয়েন্টি সিরিজ।

জিম্বাবুয়ে সফরেও খেলেছেন কেবল ওয়ানডে। এবার হাঁটুর চোট থেকে সেরে উঠতে টানা তিন টি-টোয়েন্টি সিরিজের জন্য ছুটিতে যান ওয়ানডে অধিনায়ক। জিম্বাবুয়ের পর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলেননি, তাকে পাওয়া যাচ্ছে না ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আসন্ন সিরিজেও। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে আর কোন খেলার সূচি আপাতত নেই বাংলাদেশের।

২০২০ সালের জানুয়ারিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে লাহোরে দুই ম্যাচ। মার্চে ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের সঙ্গে খেলেছেন এক ম্যাচ। এরপর  ১৭ মাস থেকে কোন আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলার মধ্যে নেই তামিম। এই সময়ে অবশ্য তাকে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ টি-টোয়েন্টিতে খেলতে দেখা গেছে। কিন্তু পারফরম্যান্স ছিল খুবই জড়সড়ো। রাখতে পারেননি তেমন কোন প্রভাব। ১১ ম্যাচে করেন মাত্র ১ ফিফটি, স্ট্রাইকরেটও (১১৩.৭৫) ছিল তলানির দিকে।

তামিমকে ছাড়া এই ১৭ মাসে ১২টি টি-টোয়েন্টি খেলে বাংলাদেশ জিতেছে ৭টিতে, হেরেছে ৫ ম্যাচ। সংক্ষিপ্ততম সংস্করণে তামিমের পারফরম্যান্স নিয়ে নানান সময়ে প্রশ্ন উঠলেও তার যোগ্য বিকল্পের অভাব দেখিয়ে সেই প্রশ্ন সরিয়ে আসছেন নির্বাচকরা। কিন্তু মজার কথা হলো তামিম ছাড়া সবশেষ খেলা পাঁচ সিরিজের দুটিতে বাংলাদেশের জয়ে সিরিজ সেরা ছিলেন আলাদা দুজন ওপেনার। প্রাসঙ্গিকভাবে বলা যায়, তামিম ছাড়া অন্য কোন ওপেনারেরই টানা খেলার সুযোগ ঘটেছে খুবই কম।

তামিমকে ছাড়া ১০ ম্যাচও নতুন কোন ওপেনিং জুটির উপর আস্থা রাখেনি বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট। বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি স্ট্রাইকরেট যে দুজন ব্যাটসম্যানের সেই লিটন দাস আর সৌম্য সরকার একসঙ্গে টি-টোয়েন্টিতে ওপেন করেছেন মাত্র একবার। তামিম অনুপস্থিত থাকায় সৌম্য আর নাঈম শেখ মিলে ৮ ইনিংস ওপেন করেছেন। এরমধ্যে জিম্বাবুয়ে সফরে তারা ছিলেন বেশ সফল। বাংলাদেশের ইতিহাসে ওপেনিং জুটিতে একমাত্র শতরানের জুটিও তারা করেন এই সময়ে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এই জুটির বাজে সময় কাটলেও কঠিন উইকেটের কারণে এই সিরিজে কোন ব্যাটসম্যানকে বিচার না করার আহবান করেন খোদ সাকিব আল হাসানও। 

সংযুক্ত আরব আমিরাতে অক্টোবরে শুরু হতে যাওয়া আসছে বিশ্বকাপের দল নিয়ে অনেক আলোচনা এই ওপেনিং পজিশন নিয়েই। অনেকের অনেক আলোচনা, সমালোচনা থাকলেও নির্বাচকদের মাথায় কোন দ্বিধা নেই। এখানে ভরসা তামিমই।

লম্বা সময় টি-টোয়েন্টি খেলার বাইরে থাকা একজন খেলোয়াড়কে সরাসরি বিশ্বকাপ দলে নেওয়া কতটা যুক্তিসঙ্গত জানতে চাওয়া হলে নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন দ্য ডেইলি স্টারকে কিছুটা বিরক্তির সুরে দেন উত্তর, 'আপনারা তামিমকে নিয়ে এত পড়েছেন কেন।  এটা তো অপারেশন্স চেয়ারম্যান (আকরাম খান) বলেই দিয়েছেন ফিট থাকলে সে দলে থাকবে।'

লম্বা সময় তার টি-টোয়েন্টি অনুপস্থিতির ব্যাপারে ব্যাখ্যা হাবিবুল দিলেন পাল্টা প্রশ্নে,  'তিনি কি আর কোন ম্যাচ খেলেননি? ওয়ানডে তো খেলেছেন। শেষ ওয়ানডেতেও সেঞ্চুরি করেছেন।'

কিন্তু সংস্করণটা যখন টি-টোয়েন্টি। সেখানে খেলার ধরণ ওয়ানডে থেকে অনেকটাই আলাদা। থিতু হওয়ার জন্য এখানে খুব বেশি সময় পাওয়া যায় না। দ্রুত মানিয়ে মেটাতে হয় দলের চাহিদা। ওয়ানডে খেলার প্রস্তুতি দিয়ে টি-টোয়েন্টি খেলা যায় কিনা জানতে চাইলে হাবিবুল কোন মন্তব্য করতেই রাজি হননি, 'এই ব্যাপারে আমি কোন কথা বলব না ভাই। এই ব্যাপারে কোন প্রশ্ন না করলে খুশি হবো।'

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তামিমের পারফরম্যান্স

তামিম আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খুব কম ভাগ্যবান ক্রিকেটারদের একজন যিনি কিনা এখনো পর্যন্ত সবগুলো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আসরেই খেলেছেন।

বিশ্বকাপে সর্বমোট ২৩ ম্যাচ খেলে খেলে তামিমের রান ৫১৪, গড় ২৪.৪৭। স্ট্রাইকরেট ১১৩.৪৬। মূলত ২০১৬ সালে বাছাইপর্বে সহযোগি সদস্য দেশ ওমানের বিপক্ষে ৬৩ বলে অপরাজিত ১০৩ এবং নেদারল্যান্ডের বিপক্ষে ৫৮ বলে অপরাজিত ৮৩ রানের দুই ইনিংসের উপরই দাঁড়িয়ে তার গোটা বিশ্বকাপের পারফরম্যান্স। তবু এই দুই ম্যাচ ধরলেও তার পারফরম্যান্স  খুব সাদামাটা। কিন্তু সেটা আরও নাজুক হয়ে যায় ২০১৬ ও ২০১৪  বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের ম্যাচগুলো বাদ দিয়ে দিলে।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূল পর্বে তামিম খেলেছেন ১৭ ম্যাচ। মোট ২৫৫ বল মোকাবেলা করে তিনি করতে পেরেছেন কেবল ২৩০ রান! গড় ১৩.৫৩ আর স্ট্রাইকরেট কেবলই ৯০.১৯! মারকাটারি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে যা কেবল হতশ্রীই বলা চলে।

ছয়টি বিশ্বকাপ খেলেও বিশ্বকাপের মূল পর্বে বলার মতো পারফরম্যান্স নেই। তবু টানা ১৭ মাস এবং বিশ্বকাপের আগে চারটি গুরুত্বপূর্ণ সিরিজে অনুপস্থিতিও নির্বাচকদের টেবিলে তামিমকে পিছিয়ে রাখছে না। বরং অনেকটা অটোচয়েজ হিসবেই থাকছেন অভিজ্ঞ এই ওপেনার। এই ব্যাপারে নির্বাচক হাবিবুলের পরিষ্কার কথা, তামিমকে নিয়ে কোন প্রশ্ন নয়!

পরিসংখ্যানের আলোয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূল পর্বে তামিম 

২০০৭ টি-২০ বিশ্বকাপ তামিমের পারফরম্যান্স

প্রতিপক্ষ রান
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৩ বলে ১০ রান 
দক্ষিণ আফ্রিকা ৭ বলে ৮ রান
অস্ট্রেলিয়া ৪০ বলে ৩২ রান
শ্রীলঙ্কা ১০ বলে ৩ রান
পাকিস্তান ৮ বলে ৩ রান

 

২০০৯ টি-২০ বিশ্বকাপ

প্রতিপক্ষ রান
ভারত ১০ বলে ১৫ রান 
আয়ারল্যান্ড ২৮ বলে ২২ রান 

২০১০ টি-২০ বিশ্বকাপ

প্রতিপক্ষ রান
পাকিস্তান ১৮ বলে ১৯ রান 

২০১২ টি-২০ বিশ্বকাপ

প্রতিপক্ষ রান
নিউজিল্যান্ড ৩ বলে ০ রান
পাকিস্তান ১২ বলে ২৪ রান

 

২০১৪ টি-২০ বিশ্বকাপ মূল পর্ব

প্রতিপক্ষ রান
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১০ বলে ৫ রান
ভারত ১০ বলে ৬ রান 
পাকিস্তান ১৫ বলে ১৬ রান
অস্ট্রেলিয়া ১১ বলে ০৫ রান

 

২০১৬ টি-২০ বিশ্বকাপ মূল পর্ব

প্রতিপক্ষ রান 
পাকিস্তান ২০ বলে ২৪ রান
ভারত ৩২ বলে ৩৫ রান
নিউজিল্যান্ড ৮ বলে ৩ রান

 

Comments

The Daily Star  | English

Govt decides to ban activities of AL until completion of ICT trial

Law Adviser Prof Asif Nazrul said this at a press briefing after a special meeting of the advisory council tonight

2h ago