ত্বক ফর্সা করার আগে একটু ভাবুন

বহুকাল থেকেই অপেক্ষাকৃত গাঢ় বর্ণ বা কালো ত্বকের মানুষের মধ্যে ফর্সা হওয়ার প্রবণতা লক্ষণীয়। আধুনিক যুগের বিশ্বখ্যাত সংগীত তারকা মাইকেল জ্যাকসন ফর্সা ও সুন্দর হওয়ার প্রচেষ্টায় ধারণাতীত অর্থ-সময় নষ্ট করেছেন, যা তার মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
বাহ্যিক সৌন্দর্য বিচারে সাধারণ মানুষের মধ্যে ত্বকের রঙ নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত। গবেষণায় প্রমাণিত যে সৌন্দর্য নিয়ে হীনমন্যতায় ভুগতে থাকা সুস্থ মানুষ ফর্সা হওয়ার চেষ্টা করে থাকেন।
মজার বিষয় হলো: কালো বর্ণের মানুষের চেয়ে মিশ্র বর্ণ বা শ্যামলা বর্ণের মানুষের মধ্যে এই প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। উপমহাদেশ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মানুষ রঙ ফর্সা করার চেষ্টা করে থাকেন সবচেয়ে বেশি।
মানুষের এই দুর্বলতাকে পুঁজি করে বিশ্বব্যাপী বিপুল বাণিজ্য চলছে, যার আর্থিক মূল্য ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি।
বাজারে ত্বক ফর্সা করার প্রসাধনী ক্রিম বা সাবান যেমন রয়েছে তেমনি বিউটি পার্লার ও প্রশিক্ষিত চিকিৎসকরাও ত্বক ফর্সা করার সেবা দিয়ে থাকেন।
* কিভাবে কাজ করে
মেলানিন নামে এক ধরনের রঞ্জক ত্বকের বর্ণ নির্ধারণ করে থাকে। মেলানিনের ঘনত্ব যত বেশি ত্বক ততই গাঢ় বর্ণের হয়ে থাকে। প্রসাধনী বা ওষুধ এই মেলানিনের ঘনত্ব ও উৎপাদন কমিয়ে দেয়। ক্ষেত্র বিশেষে তা ধ্বংস করে থাকে।
* প্রসাধনী
ক্রিম বা সাবান হিসেবে ত্বক ফর্সা করার নানা ধরনের প্রসাধনী বাজারে পাওয়া যায়। বিশ্বের নামি-দামি কোম্পানি থেকে স্থানীয় অখ্যাত ভেষজ কোম্পানি নানা ধরনের ত্বক ফর্সাকারী প্রসাধনী প্রস্তুত করে থাকে।
এসব প্রসাধনীতে কজোয়িক এসিড, আলফা হাইড্রোক্সি এসিড, গ্লুটাথিয়ন, মারকারি, হাইড্রোকুইনন ইত্যাদি রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
দীর্ঘদিন এসব প্রসাধন সামগ্রী ব্যবহার ত্বক অপেক্ষাকৃত ফর্সা করতে সাহায্য করে থাকে।
* বিউটি পার্লার
প্রশিক্ষিত বিউটিসিয়ানদের ফেসিয়াল ক্লিন্সিংয়ের জন্যে পাঁচ শতাংশের কম পরিমাণে গ্লাইকোলিক বা স্যালেসাইলিক এসিড ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া হয়ে থাকে। এর চেয়ে বেশি ঘনত্বে এসিড শুধু চিকিৎসকরাই প্রয়োগ করতে পারেন।
* চিকিৎসক
ত্বকের দাগ বা রোগের কারণে সৃষ্ট গাঢ় রঙ দূর করতে সৌন্দর্য বিশেষজ্ঞরা রোগীর অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে নানা ঘনত্বের গ্লাইকোলিক বা স্যালেসাইলিক এসিড পিলিং ও লেসার চিকিৎসা দিয়ে থাকেন।
আধুনিককালে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির নামে উল্লেখিত পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করেই ত্বক ফর্সা করা হয়ে থাকে। নিয়মিত ব্যবহার করার জন্য ক্রিম, লোশন বা জেল চিকিৎসক প্রেসক্রিপশন করে থাকেন।
* জটিলতা
নানা অনাকাঙ্ক্ষিত জটিলতার কারণে দেশে দেশে এসব ত্বক ফর্সাকারী প্রসাধন সামগ্রীর ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। প্রসাধনীর গায়ে সম্ভাব্য ঝুঁকি উল্লেখ করে সতর্কবাণী দেওয়া থাকে।
প্রসাধনীতে থাকা মারকারি ত্বকের অসাড়তা থেকে উচ্চ রক্তচাপ, স্নায়ু রোগ বা কিডনি নষ্ট করার মতো নানাবিধ স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে। ত্বকের প্রদাহ বা ডারমাটাইটিস সৃষ্টি করতে পারে। আক্রান্তদের ব্রণ বাড়িয়ে দেয়, বা নতুন ব্রণ তৈরি করে থাকে। ত্বকের রঙের ভিন্নতার কারণে ছোপ ছোপ গাঢ় দাগের উদ্ভব হতে পারে।
* সাবধানতা
ত্বকের রঙ নিয়ে হীনমন্যতা দূর করুন। নিজের ত্বকের রঙ নিয়ে আত্মবিশ্বাসী হওয়ার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে সাইকোথেরাপি নিন।
ত্বক ফর্সাকারী প্রসাধনী ব্যবহারের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে জানুন। প্রসাধনী কেনার আগে গায়ে লেখা উপাদান ও সতর্কবাণী ভালো করে দেখে নিন।
ডা. এম আর করিম রেজা, ত্বক ও সৌন্দর্য বিশেষজ্ঞ
Comments