প্রতারক চক্রের ফাঁদে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাংলাদেশিরা

অস্ট্রেলিয়া জুড়ে গত কয়েক মাস ধরে বেড়ে গেছে সাইবার ক্রাইম। এর সঙ্গে যোগ দিয়েছে বাংলাদেশি এর শিকার হচ্ছেন অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাংলাদেশিরাও।

অস্ট্রেলিয়া জুড়ে গত কয়েক মাস ধরে বেড়ে গেছে সাইবার ক্রাইম। এর সঙ্গে যোগ দিয়েছে বাংলাদেশি এর শিকার হচ্ছেন অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাংলাদেশিরাও।

অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশি সংগঠন বিডি হাবের সভাপতি আবুল সরকার সম্প্রতি তার ফেসবুকে 'প্রতারণার ফাঁদ' শিরোনামে একটি পোস্ট দেন।

সকল প্রবাসীকে সতর্ক করা ওই পোস্ট থেকে জানা যায়, তার এক বন্ধু জরুরি প্রয়োজনে অস্ট্রেলিয়া থেকে বাংলাদেশে যাওয়ার বিষয়ে তাকে ম্যাসেজে জানান। এর কিছু সময় পর তিনি আরও জানান, তার ঢাকা-চট্টগ্রাম ফ্লাইটের টিকেট বুকিং দেওয়া থাকলেও ব্যস্ততার কারণে এখনও টাকা পরিশোধ করতে পারেননি। তাকে একজন ফোন দিয়ে বলেছেন, এখনই টাকা দিতে না পারলে বুকিং বাতিল হয়ে যাবে। উড়োজাহাজে থাকায় ওই মুহূর্তে তিনি টাকা পাঠাতে পারছেন না। এ তথ্য জানিয়ে আবুল হোসেনকে তিনি অনুরোধ করেন এই টাকাটা পরিশোধ করে দিতে।

এর কিছুক্ষণের মধ্যেই জানা যায়, ওই ম্যাসেজটি পাঠিয়েছিল একটি বাংলাদেশি প্রতারক চক্র।

আবুল সরকারের ওই ফেসবুক পোস্টের কমেন্টে আসতে থাকে এভাবে প্রতারিত হওয়ার আরও অনেক গল্প। অনেকেই খুব বিশ্বাসযোগ্য ও আবেগময় ম্যাসেজ পেয়ে তাৎক্ষণিক টাকা দিয়ে পরে বুঝতে পেরেছেন যে তারা প্রতারিত হয়েছেন।

কখনও বন্ধু, কখনও ভাই কিংবা বাবা-মা সেজে ম্যাসেজ দিয়ে প্রতারক চক্র হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এই চক্রটি বিভিন্ন বাংলাদেশির ম্যাসেঞ্জার উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে 'ক্লোন' করে এই কাজ করে থাকে। তারা ম্যাসেজগুলো পাঠাচ্ছে বাংলা ভাষায়।

এ বিষয়ে ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন অনেকেই। অস্ট্রেলিয়া পুলিশের কাছে কয়েকজন বাংলাদেশি রিপোর্ট করলে পুলিশের সাইবার ক্রাইম টিম এ বিষয় নিয়ে কাজ করছে বলে জানানো হয়েছে।

সাইবার অপরাধীদের ব্যবহৃত সর্বশেষ অস্ত্র 'স্ক্যাম কল'। অস্ট্রেলিয়ান পুলিশের কাছে যেসব রিপোর্ট জমা পরেছে সেখানে বলা হয়েছে, স্ক্যাম কলগুলো অস্ট্রেলিয়ার নামী সংস্থা এমনকি তাদের পরিচিত জনদের ফোন নম্বর ব্যবহার করে করা হচ্ছে।

কিছু ক্ষেত্রে স্ক্যামাররা এমন একটি ফোন নম্বরকে ওভারস্ট্যাম্প করে, যার রিসিভারের নম্বরে একটি ভিন্ন সংখ্যা থাকে। সাইবার অপরাধীরা কল স্পুফিং ব্যবহার করে এই কলগুলোকে বৈধ এজেন্সি থেকে আসা কল হিসেবে দেখায়।

মহামারি কালে অস্ট্রেলিয়ায় 'কল স্পুফিংয়ের' হার  নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ, এখন অস্ট্রেলিয়ানরা তাদের ফোনে বেশি সময় ব্যয় করেন। নানা ধরনের সহযোগিতার জন্য সরকারি সংস্থাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগের কারণেই তাদের এই বাড়তি সময় দিতে হচ্ছে ফোনে। গত সাত মাসে ২১৪ মিলিয়ন 'স্ক্যাম কল' পেয়েছেন অস্ট্রেলিয়ানরা।

এই প্রতারক চক্রগুলো বিভিন্ন সরকারি সংস্থার নামে ভয় দেখিয়ে নগদ অর্থ আদায় করে এবং ব্যাংক ও ক্রেডিট কার্ড নম্বর নিয়ে টাকা ট্রান্সফার করে নেয়।

অস্ট্রেলিয়ান প্রতিযোগিতা ও ভোক্তা কমিশনের (এসিসিসি) স্ক্যামওয়াচ অনুসারে, সম্প্রতি মিসড কল ও ভয়েস মেইল নামে আরেকটি সাইবার কেলেঙ্কারি যুক্ত হয়েছে।

ফোন ব্যবহারকারীকে ভয়েস মেইল বার্তা শুনতে একটি অ্যাপ ডাউনলোড করতে বলা হয়। অ্যাপটি মূলত 'ফ্লুবট' নামের একটি সফটওয়্যার।

২০২১ সালের শুরু থেকে এ পর্যন্ত স্ক্যামওয়াচ ফ্লুবট প্রচেষ্টার সাড়ে পাঁচ হাজারের বেশি রিপোর্ট পেয়েছে।

স্ক্যামওয়াচ বলছে, অ্যান্ড্রয়েড ফোন ও আইফোন থেকে ফ্লুবট পাঠ্য গ্রহণ করতে পারে। যদি কেউ এ ধরনের বার্তা পান, তাহলে কোনো লিংকে চাপ না দিয়ে অবিলম্বে তা ডিলিট করে দিন।

অস্ট্রেলিয়ার সব চেয়ে বড় টেলিকমিউনিকেশন সংস্থা ট্যালেস্ট্রা জানিয়েছে, তারা এখন প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ১৩ মিলিয়ন সন্দেহভাজন স্ক্যাম কল গ্রাহকদের কাছে পৌঁছাতে বাধা দিচ্ছে। চার মাস আগে এই সংখ্যা ছিল সাড়ে ছয় মিলিয়ন।

আকিদুল ইসলাম: অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী লেখক, সাংবাদিক

Comments

The Daily Star  | English

Road Surface Melting: Bargain bitumen failing to bear extreme heat

As the country is baking in heatwave, road surfaces in several districts have melted due to what experts say is the use of bitumen that cannot withstand this extreme heat.

4h ago