একদিনে ৩ কথাশিল্পীর বিদায়

একদিনেই চলে গেলেন বাংলা ভাষার শক্তিমান তিন কথাশিল্পী। তিনজনই বাংলা সাহিত্যের কিংবদন্তিতুল্য ব্যক্তিত্ব। তাদের হারিয়ে সাহিত্য-সংস্কৃতি অঙ্গনে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
শেখ আবদুল হাকিম, বুলবুল চৌধুরী, আতাউর রহমান। ছবি: সংগৃহীত

একদিনেই চলে গেলেন বাংলা ভাষার শক্তিমান তিন কথাশিল্পী। তিনজনই বাংলা সাহিত্যের কিংবদন্তিতুল্য ব্যক্তিত্ব। তাদের হারিয়ে সাহিত্য-সংস্কৃতি অঙ্গনে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

দ্য ডেইলি স্টারে প্রকাশিত তথ্যমতে, শনিবার সকাল ছয়টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন বরেণ্য রম্যলেখক, ডাক বিভাগের সাবেক মহাপরিচালক ও কূটনীতিক আতাউর রহমান। সিলেটের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর।

শনিবার দুপুর ১টার দিকে রাজধানীর বাসাবোর বাসায় মারা যান প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও অনুবাদক শেখ আবদুল হাকিম। তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।

সন্ধ্যায় ৬টায় মারা যান কথাসাহিত্যিক বুলবুল চৌধুরী। তিনি দীর্ঘদিন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে বাসায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অনকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সারওয়ার আলমের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর।

শেখ আবদুল হাকিম

বাংলা ভাষার রহস্য উপন্যাসের অন্যতম লেখক ও অনুবাদক শেখ আবদুল হাকিমের জন্ম ১৯৪৬ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। তার বাবার নাম শেখ আবদুর রফিক। দেশভাগের পর তারা ঢাকায় চলে আসেন।

শেখ আবদুল হাকিম গত শতকের ষাটের দশকের মাঝামাঝি থেকে প্রকাশনা সংস্থা সেবা প্রকাশনীর সঙ্গে যুক্ত হয়ে পেশাদার লেখক হিসেবে কাজ করছিলেন। এই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের জনপ্রিয় রহস্য উপন্যাস সিরিজ 'কুয়াশা' ও 'মাসুদ রানার' অনেক বইয়ের নেপথ্য লেখক ছিলেন।

এর মধ্যে সেবা প্রকাশনী থেকে বেরিয়ে এসে শেখ আবদুল হাকিম দেশের বিভিন্ন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। নিয়মিত অনুবাদ ও মৌলিক গ্রন্থ রচনার কাজ করেছেন। পঞ্চাশ বছরের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে পেপারব্যাক সিরিজ 'মাসুদ রানা' প্রকাশিত হয়ে আসছে। ২০১৯ সাল অব্দি চারশোর বেশি বই প্রকাশিত হয়েছে। সেবা প্রকাশনীকে একসময় নিয়মিত লেখক হিসাবে লিখতেন ইফতেখার আমিন এবং শেখ আবদুল হাকিম।

গত বছর লেখক সম্মানী নিয়ে সেবা প্রকাশনীর প্রকাশক কাজী আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে শেখ আবদুল হাকিমের মতান্তর হয়। এই নিয়ে চার দশকের সম্পর্কের অবনতি হয় তাদের। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। শেখ আবদুল হাকিম 'কুয়াশা সিরিজ'–এর ৫০টি বই ও 'মাসুদ রানা সিরিজ'–এর ২৬০ বইয়ের লেখক দাবি করে কপিরাইট অফিসে অভিযোগ দায়ের করেন। গত বছর জুনে কপিরাইট অফিস তার দাবির পক্ষে রায় দিয়েছিল।

বুলবুল চৌধুরী

১৯৪৮ সালের ১৬ আগস্ট গাজীপুরে জন্মগ্রহণ করেন বুলবুল চৌধুরী । সাধারণ জীবনযাপনে অভ্যস্ত এই কথক পড়ালেখা করেছেন তখনকার জগন্নাথ কলেজে। কলেজে থাকাকালে গল্প লেখা প্রতিযোগিতায় 'জোনাকি ও সন্নিকট কেন্দ্র' গল্পের জন্য দ্বিতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন। তারপর প্রথম গল্প প্রকাশিত হয় হয় ১৯৬৭ সালে। প্রথম প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ 'টুকা কাহিনী' শুরুতেই সাড়া ফেলে। লেখালেখির বাইরে সাংবাদিকতার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। কাজ করেছেন দেশের প্রথম সারির বিভিন্ন দৈনিকে।

প্রকাশিত ছোট গল্পের বই- 'টুকা কাহিনী', 'পরমানুষ', 'মাছের রাত' ও 'চৈতার বউ গো'। উপন্যাস- 'অপরূপ বিল ঝিল নদী', 'কহকামিনী', 'তিয়াসের লেখন', 'অচিনে আঁচড়ি', 'মরম বাখানি', 'এই ঘরে লক্ষ্মী থাকে', 'ইতু বৌদির ঘর' এবং 'দখিনা বাও'। তার আত্মজৈবনিক রচনা 'জীবনের আঁকিবুঁকি' ও 'অতলের কথকতা'।

২০২০ সালেই বছর বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অবদানের জন্য একুশে পদক পেয়েছেন তিনি। এরআগে, তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার পেয়েছিলেন। এছাড়া হুমায়ুন কাদির স্মৃতি পুরস্কার, জসীমউদদীন স্মৃতি পুরস্কার এবং ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন।

আতাউর রহমান

বরেণ্য রম্যলেখক আতাউর রহমানের জন্ম ১৯৪২ সালে সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার নগর গ্রামে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ ডিগ্রি নেওয়ার পর সিলেটের মদনমোহন কলেজ ও এমসি কলেজে শিক্ষকতা করেছেন। সেখানে ইংরেজি সাহিত্য পড়াতেন।

তারপরে তৎকালীন পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সুপিরিয়র সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে পাকিস্তান পোস্টাল বিভাগে যোগ দেন। চাকরি জীবনে যুক্তরাজ্য ও সৌদি আরবে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক প্রতিনিধি ও কূটনীতিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

২০০২ সালে বাংলাদেশ ডাক বিভাগের মহাপরিচালক পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন এবং বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় সময় দেন। জনপ্রিয় বক্তা, শিক্ষক, কূটনীতিক ও লেখকের এ পর্যন্ত ২৪টি বই প্রকাশিত হয়েছে।

'দুই দুগুণে পাঁচ' শিরোনামে বাস্তবের অসঙ্গতি তুলে ধরে সংবাদপত্রে তার রম্যলেখা পাঠকপ্রিয় হয়।

Comments

The Daily Star  | English

Love road at Mirpur: A youthful street

Certain neighbourhoods in Dhaka have that one spot where people gather to just sit back and relax. For Mirpur, it’s the frequently discussed street referred to as “Love Road”.

1h ago