ল্যাথামের লড়াইয়ের পরও জিতল বাংলাদেশ

শেষ ওভারে নিউজিল্যান্ডের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ২০ রান। মোস্তাফিজুর রহমানের প্রথম চার বল থেকে আসে কেবল ৭ রান। ফলে ম্যাচ টাই করতে হলেও শেষ দুই বলে কিউইদের দরকার দাঁড়ায় দুটি ছক্কার। সেসময় হাই-ফুলটস দিয়ে নো-বল করে বসেন মোস্তাফিজ। ব্যাটের আলতো ছোঁয়ায় সে বল থেকে চার আদায় করে নেন নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক টম ল্যাথাম। তাতে ছড়ায় রোমাঞ্চ, জমে যায় লড়াই। শেষ দুই বলে তখন চাহিদা ৮ রানের। তবে ৩ রানের বেশি করতে পারেনি ল্যাথাম। ফলে স্বস্তির জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ।

দ্বিতীয় সারির নিউজিল্যান্ড দলে অধিনায়ক ল্যাথাম অভিজ্ঞদের একজন। সেই তিনিই বেশ ভোগান টাইগারদের। এক প্রান্ত আগলে বুক চিতিয়ে লড়াই করেন। কিন্তু তার আপ্রাণ চেষ্টাও যথেষ্ট হয়নি সতীর্থদের ব্যর্থতায়। তাতে পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছেন মাহমুদউল্লাহরা।

শুক্রবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে নিউজিল্যান্ডকে ৪ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ওভারে ৬ উইকেটে ১৪১ রান সংগ্রহ করে স্বাগতিকরা। জবাবে ৫ উইকেটে ১৩৭ রান করে থামতে হয় কিউইদের।

মিরপুরের উইকেট বিচারে এদিন বেশ বড় লক্ষ্যই পেয়েছিল কিউইরা। তাছাড়া, আগের ম্যাচেই ৬০ রানে অলআউট হয়েছিল দলটি। এদিন লক্ষ্য তাড়ায় শুরুটা একদম ভালো হয়নি সফরকারীদের। দলীয় ১৮ রানেই দুই ওপেনার বিদায় নেন। রাচিন রবীন্দ্রকে বোল্ড করে ফেরান সাকিব আল হাসান। আর টম ব্লান্ডেলকে স্টাম্পিংয়ে ফাঁদে ফেলেন শেখ মেহেদী হাসান।

তবে তৃতীয় উইকেটে উইল ইয়াংকে সঙ্গে নিয়ে দলের হাল ধরেন অধিনায়ক ল্যাথাম। ৪৩ রানের দারুণ একটি জুটি গড়ে টাইগার শিবিরে ভীতি বাড়াচ্ছিলেন তারা। এ জুটি ভাঙেন সাকিব। শর্ট থার্ড ম্যানে দারুণ এক ক্যাচ ধরেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন।

এরপর অবশ্য নিয়মিত বিরতিতেই উইকেট হারাতে থাকে নিউজিল্যান্ড। বিপজ্জনক কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমকে ফেরান নাসুম আহমেদ। অভিজ্ঞ হেনরি নিকোলস শিকার হন শেখ মেহেদীর। ফলে ৯২ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ভীষণ চাপে তারা।

তবে এক প্রান্তে অনড় থাকেন ল্যাথাম। ছোট ছোট জুটিতে দলের শেষ ভরসা হয়ে থাকেন তিনি। পাশাপাশি রানের গতি বাড়ানোর চেষ্টাও চালিয়ে যান। কিন্তু সতীর্থরা সে অর্থে সাহায্য করতে পারেননি তাকে। তাই লক্ষ্য থেকে দূরেই থামতে হয় নিউজিল্যান্ডকে।

টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটিতে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৬৫ রান করে অপরাজিত থাকেন ল্যাথাম। ৪৯ বলে ৬টি চার ও ১টি ছক্কায় নিজের ইনিংস সাজান তিনি। এছাড়া ইয়াংয়ের ব্যাট থেকে আসে ২২ রান। শেষ দিকে ম্যাককনকির ব্যাট থেকে আসে অপরাজিত ১৫ রান। বাংলাদেশের পক্ষে ৪ ওভার বল করে মাত্র ১২ রানের খরচায় ২টি উইকেট পান শেখ মেহেদী। ২টি শিকার সাকিবেরও।

 

এর আগে দুই ওপেনার লিটন দাস ও মোহাম্মদ নাঈম বড় সংগ্রহের ভিত গড়ে দেন টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশকে। যদিও ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই ভাঙতে পারত ওপেনিং জুটি। শর্ট মিড উইকেটে সহজ ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন লিটন। সে সুযোগ লুফে নিতে পারেনি নিউজিল্যান্ড। জীবন ঠিকভাবেই কাজে লাগাতে পারেন লিটন।

মন্থর উইকেটে যেভাবে রান তোলার প্রয়োজন ছিল বাংলাদেশের, সেভাবেই তুলতে থাকেন দুই ওপেনার। ফলে পাওয়ার প্লেতে আসে ৩৬ রান। জুটির হাফসেঞ্চুরি পূরণ হয় ৮.৩ ওভারে। আট ম্যাচ পর ওপেনিং জুটিতে পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের দেখা পায় বাংলাদেশ, মিরপুরের মাঠে ছয় ম্যাচ পর। এ মাঠে জিম্বাবুয়ে বাদে অন্য কোনো দলের বিপক্ষে এটাই প্রথম পঞ্চাশোর্ধ্ব উদ্বোধনী জুটি।

দলীয় ৫৯ রানে ভাঙে ওপেনিং জুটি। হতে পারতো আরও বড়। অফ স্টাম্পের বেশ বাইরে রাখা রবীন্দ্রর বল টেনে এনে বোল্ড হয়ে যান লিটন। পরের বলে আগের ম্যাচের উইনিং শট খেলা মুশফিকুর রহিমকেও তুলে নেন রবীন্দ্র। স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে পড়েন এ উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান।

পরপর দুই বলে উইকেট হারানো বাংলাদেশকে চাপমুক্ত করতেই হয়তো উইকেটে নেমেই আগ্রাসী ঢঙে খেলার চেষ্টা করেন সাকিব। প্রথম ছয় বলে ১২ রান তুলে নেওয়া এ বাঁহাতি তারকা আউট হন ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে। যদিও তার ক্যাচ হাত থেকে প্রায় ফসকেই গিয়েছিল অভিষিক্ত বেন সিয়ার্সের। তবে দ্বিতীয় দফায় লুফে নেন এ পেসার। বাংলাদেশের রান তখন ৩ উইকেটে ৭২।

এরপর নাঈমকে নিয়ে দলের হাল ধরেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। ৩৪ রানের জুটিও গড়েন। লং অনের উপর দিয়ে শট খেলতে গিয়ে রবীন্দ্রর তৃতীয় শিকারে পরিণত হন নাঈম। এরপর খুব বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি আফিফ হোসেনও। ফলে কিছুটা চাপে পড়ে বাংলাদেশ।

আফিফের বিদায়ের পর ষষ্ঠ উইকেটে নুরুল হোসেন সোহানকে নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন মাহমুদউল্লাহ। ইনিংসের শেষ বলে উইল ইয়াংয়ের অসাধারণ এক ক্যাচে আউট হন সোহান। তবে এর আগে ৩২ রানের দারুণ এক জুটিতে দলকে লড়াকু পুঁজি এনে দেন তারা।

দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৯ রানের ইনিংস খেলেন নাঈম। ৩৯ বলে ৩টি চারের সাহায্যে এ রান করেন তিনি। অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ ৩৭ রান করে অপরাজিত থাকেন। ৩২ বলে ৫টি চারে ইনিংস সাজান তিনি। ২৯ বলে ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় ৩৩ রান আসে লিটনের ব্যাট থেকে। নিউজিল্যান্ডের পক্ষে ২২ রানের খরচায় ৩টি উইকেট নেন রবীন্দ্র।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৪১/৬ (নাঈম ৩৯, লিটন ৩৩, মুশফিক ০, সাকিব ১২, মাহমুদউল্লাহ ৩৭*, আফিফ ৩, সোহান ১৩; প্যাটেল ১/২০, ম্যাককনকি ১/২৪, বেনেট ১/৩২, ব্রেসওয়েল ০/৩০, রবীন্দ্র ৩/২২, সিয়ার্স ০/১১)

নিউজিল্যান্ড: ২০ ওভারে ১৩৭/৫ (ব্লান্ডেল ৬, রবীন্দ্র ১০, ল্যাথাম ৬৫*, ইয়াং ২২, ডি গ্র্যান্ডহোম ৮, নিকোলস ৬, ম্যাককনকি ১৫*; মেহেদী ২/১২, নাসুম ১/১৭, সাকিব ২/২৯, মোস্তাফিজ ০/৩৪, মাহমুদউল্লাহ ০/৭, সাইফ ০/৩৬)।

ফল: বাংলাদেশ ৪ রানে জয়ী।

সিরিজ: পাঁচ ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশ ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে।

ম্যাচসেরা: মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (বাংলাদেশ)।

Comments

The Daily Star  | English

We’re now ready to hand over power to elected representatives

Chief Adviser Prof Muhammad Yunus yesterday said the interim government is prepared to transfer power to an elected administration.

5h ago