তৃতীয় ঢেউ মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারত

ভারতের হাসপাতালগুলোতে করোনা রোগীর সংখ্যা এখন অনেকটাই কম। ছবি: রয়টার্স

চলতি বছরের এপ্রিল-মে'তে ভারতে কোভিড-১৯ সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার ব্যাপক হারে বেড়ে যায়। ফলে রাজধানী দিল্লির বিখ্যাত স্যার গঙ্গা রাম হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্থানে অক্সিজেন সংকট দেখা দেয়। এতে বহু রোগীকে শ্বাসকষ্টে ভুগতে হয়।
 
গত শুক্রবার সংবাদমাধ্যম রয়টার্স প্রতিনিধি যখন ওই হাসপাতালটি পরিদর্শনে যান, তখন দেখেন কোভিড-১৯ থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন সেখানকার সর্বশেষ রোগীটি।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রাকৃতিকভাবে সংক্রমিত হওয়া ও টিকা দেওয়ার ফলে ব্যাপকভাবে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যাওয়ায় এমন উল্লেখযোগ্যভাবে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হয়েছে।

তবে, করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় তিক্ত অভিজ্ঞতা লাভ করেছে সে দেশের হাসপাতালগুলো। দিনরাত অবিরাম জ্বলেছে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার চিতা। অনেকে কম্বলে জড়িয়ে মৃতদেহগুলো গঙ্গার জলে ভাসিয়ে দিয়েছিল।
আসছে সেপ্টেম্বর-নভেম্বরে উৎসবের মৌসুমে আবারও একটি ঢেউ আসতে পারে বলে শঙ্কা করা হচ্ছে।

ভারতজুড়ে কোভিড-১৯ চিকিৎসার জন্যে হাসপাতালগুলোতে সংযুক্ত করা হয়েছে অতিরিক্ত শয্যা এবং সেগুলোতে পর্যাপ্ত অক্সিজেনের সরবরাহ নিশ্চিত করতে কাজ চলছে।

গঙ্গা রাম হাসপাতালে অক্সিজেনের মজুদ বাড়ানো হয়েছে ৫০ শতাংশ। এক কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইনের মাধ্যমে সরাসরি কোভিড আইসিইউতে অক্সিজেন সরবরাহ এবং অক্সিজেনের প্রবাহ বাড়াতে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হয়েছে।

মেডিকেল ডিরেক্টর সতেন্দ্র কাটোচ হাসপাতালটির অভ্যন্তরীণ সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে অডিটের সময় সহকর্মীদের বলেন, 'উচ্চ সংক্রমণযোগ্যতা ও কম প্রতিরোধক্ষম হওয়ায় করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্টগুলোর উত্থানের সম্ভাবনার পরিপ্রেক্ষিতে হাসপাতালটি সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।'

হাসপাতালের চিকিৎসক বরুণ প্রকাশ জানান, বেসরকারি হাসপাতালটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সেখানে আর শয্যা সংখ্যা বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ যখন শীর্ষে ছিল, গঙ্গারাম হাসপাতালে প্রায় ৫০ শতাংশ শয্যা বৃদ্ধি করে ছয় শতে উন্নীত করা হয়েছিল। তার পরও সে সময় প্রতিদিনি প্রায় পাঁচ শতাধিক রোগীকে ভর্তি হওয়ার জন্যে অপেক্ষা করতে হতো।

গত কয়েক মাসে ভারত হাসপাতালগুলোতে জাতীয় পর্যায়ে শয্যা সংখ্যা অনেক বাড়িয়েছে এবং ১০০টির মতো অক্সিজেন ক্যারিয়ার আমদানি করে তা মোট সাড়ে ১২ শ'তে উন্নীত করা হয়েছে। লিন্ডডটএনএস, এলআইএন.এন-এর মতো কোম্পানিগুলো সার্বিকভাবে অক্সিজেনের উৎপাদন দিনে ৫০ শতাংশ থেকে ১৫ হাজার টনে উন্নীত করার পরিকল্পনা করছে।

লিন্ডে রয়টার্সকে জানিয়েছে, তারা ৮০টির মধ্য থেকে ৬০টি ক্রিওজেনিক কন্টেইনার মজুদ রেখেছে। যার অর্থ সেখানে সুপার কোল্ড অক্সিজেন রাখা আছে। আবারও যদি অক্সিজেনের সংকট দেখা দেয়, এই আশঙ্কায় বিদেশ থেকে সেগুলো আনা হয়েছিল।

লিন্ডের দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান মলয় ব্যানার্জি বলেন, 'দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় অক্সিজেন সরবরাহের অবকাঠামোগত উপাদান ও যন্ত্রপাতি অনেক কম ছিল।'

কেন্দ্রীয় সরকার ইতোমধ্যে হাসপাতালগুলোতে এক হাজার ৬০০ অক্সিজেন জেনারেশন প্ল্যান্ট নির্মাণের অনুমতি দিয়েছে। তবে, সেগুলো স্থাপনে সময় লাগার কারণে গত মাসের প্রথম দিকে পর্যন্ত ৩০০-এর কম স্থাপন করা হয়েছে। 

অ্যান্টিবডির পরিমাণ বেড়েছে

টিকা না নেওয়া শিশুরা ভাইরাসের নতুন মিউটেশন দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে, কয়েকজন বিশেষজ্ঞের দেওয়া এরকম সতর্ক বার্তার পর ভারতের প্রায় সবগুলো রাজ্যে শিশুদের জন্যে ওয়ার্ড তৈরি করা হচ্ছে। মধ্যপ্রদেশসহ অন্যান্য রাজ্যগুলো রেমডেসিভির মতো অ্যান্টি-ভাইরাল ওষুধের মজুদ করছে।

তবে, একটি সরকারি জরিপে অনুমান করা হয়েছে যে, দুই-তৃতীয়াংশ ভারতীয় ইতোমধ্যেই প্রাকৃতিক সংক্রমণের মাধ্যমে কোভিডপ্রতিরোধী অ্যান্টিবডি এবং ৫৭ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্করা অন্তত এক ডোজ ভ্যাকসিন নিয়েছেন। অনেক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মনে করেন, যেকোনো নতুন সংক্রমণের প্রাদুর্ভাব দ্বিতীয় ঢেউয়ের চেয়ে কম ধ্বংসাত্মক হতে পারে।

পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন অব ইন্ডিয়ার সভাপতি মহামারি ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ কে শ্রীকান্ত রেড্ডি বলেন, 'অনেক মানুষ আগে থেকে আক্রান্ত ও টিকা নেওয়ার কারণে এবার আক্রান্তের সংখ্যা অনেক কম হবে।'

'এমনকি যদি আবারও সংক্রমণ বা ব্যাপক হারে সংক্রমণ শুরু হয়, সেগুলো সম্ভবত হালকা এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাড়িতে থেকেই চিকিৎসা নেওয়া যাবে। সেক্ষেত্রে দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময়ের মতো স্বস্থ্যসেবা প্রদানে ধারাবাহিক গ্যাপ দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা কম।'

কেরালায় ইতোমধ্যেই এমন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। দক্ষিণাঞ্চলীয় এ রাজ্যটিতে বর্তমানে সর্বাধিক সংখ্যক সংক্রমণ ঘটছে, যার মধ্যে বহু মানুষের টিকা দেওয়া বা আংশিকভাবে টিকা দেওয়াও রয়েছে। তবে, সেখানে মৃত্যুহার জাতীয় মৃত্যুহারের চেয়ে কম।

যুক্তরাষ্ট্রের পরে ভারতে সর্বোচ্চ ৩৩ দশমিক এক মিলিয়ন মানুষ করোনা সংক্রমণের রেকর্ড করা হয়েছে। যাদের মধ্যে চার লাখ ৪১ হাজার ৪২ জন মারা গেছেন। এ ছাড়া, দেশটি ৬৯৮ দশমিক চার মিলিয়ন ডোজ টিকা দিয়েছে। দেশটির ৯৪৪ মিলিয়ন প্রাপ্ত বয়স্ক জনসংখ্যার ৫৭ শতাংশ মানুষ অন্তত এক ডোজ করে টিকা নিয়েছেন এবং ১৭ শতাংশ প্রাপ্ত বয়স্ক নাগরিক দুই ডোজ টিকা নিয়েছেন।

Comments

The Daily Star  | English

Decision on AL’s registration after receiving govt ban order: CEC

The decision to ban was made at a special meeting of the council following three days of demonstrations demanding a ban on the party

1h ago