ফ্যাশন ও সৌন্দর্য

চোকার গয়নার ইতিকথা

আমরা তারকা ও অভিজাত সমাজের সদস্যদের এ ধরনের গয়না গর্বের সঙ্গে পরতে দেখেছি। আজকাল অভিজাত সমাজের পরিধি ছাড়িয়ে এটি সব দেশের তরুণ-তরুণীদের মধ্যে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। আমরা আরেকটু গভীরে গেলে দেখতে পাই, চোকার ব্যবহারের ধারাটি একটি ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর প্রয়োজনের তাগিদে শুরু হয়েছিল। কিন্তু এখন তা জনমানুষের পছন্দের ফ্যাশনে রূপান্তরিত হয়েছে।

আমরা তারকা ও অভিজাত সমাজের সদস্যদের এ ধরনের গয়না গর্বের সঙ্গে পরতে দেখেছি। আজকাল অভিজাত সমাজের পরিধি ছাড়িয়ে এটি সব দেশের তরুণ-তরুণীদের মধ্যে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। আমরা আরেকটু গভীরে গেলে দেখতে পাই, চোকার ব্যবহারের ধারাটি একটি ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর প্রয়োজনের তাগিদে শুরু হয়েছিল। কিন্তু এখন তা জনমানুষের পছন্দের ফ্যাশনে রূপান্তরিত হয়েছে।

ফরাসি বিপ্লবের সময় প্রথমবারের মতো চোকারের দেখা পাওয়া যায় বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে দাবি করা হয়েছে। ইতিহাস আমাদের জানায়, ফরাসি সমাজের উঁচু শ্রেণীর নারীরা 'ব্লাড রেড' বা রক্তের মতো লাল রঙের, গলায় আঁকড়ে থাকা এক ধরনের গয়না পরতেন। দেখতে আধুনিক যুগের চোকারের মতো এই গয়নাগুলো তারা গিলোটিনে প্রাণ হারানো শহীদদের স্মরণে পরে থাকতেন।

তবে কোনও কোনও গয়না বিশেষজ্ঞ এই বর্ণনার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন। অ্যান বোলেইনের মতে, রাণী এলিজাবেথের (প্রথম) মেয়ের একটি পোর্টেটে তার গলায় একটি কেতাদুরস্ত চোকার পরে থাকতে দেখা গেছে। চোকারটি মুক্তার তৈরি এবং এর সঙ্গে তিনি ইংরেজি অক্ষর 'বি'র আদলে তৈরি একটি পেনড্যান্ট পরেছেন, যেটি তার পরিবারের উপাধি 'বোলেইন'কে বোঝাচ্ছে।

ভিক্টোরিয়া যুগে চোকারের জনপ্রিয়তা ফিরে আসে। সে যুগে রাজসভার নারী সদস্যরা নাচের অনুষ্ঠান ও বিভিন্ন ধরনের মিলনমেলায় অংশ নিতেন। গলায় বিভিন্ন ডিজাইনের চোকার পরা অবস্থায় রাণী ভিক্টোরিয়া'র বেশ কিছু পোর্টেট পরবর্তিতে পাওয়া গেছে।

এরপর আসে ফ্যাশন সচেতন ওয়েলস এর রাজকন্যা আলেকজান্দ্রার যুগ। তিনি প্রায়ই এই গয়নাটি পরতেন এবং ফলশ্রুতিতে এটি যুগের একটি জনপ্রিয় ধারায় পরিণত হয়। তবে ইতিহাসবিদরা বলেন, ফ্যাশন নয়, বরং সুনির্দিষ্ট একটি কারণে আলেকজান্দ্রা সে গয়নাটি পরতেন। তাদের মতে, শৈশবে তার একটি অস্ত্রোপচার হয়েছিল, যেখান থেকে একটি ক্ষতস্থান তৈরি হয়। সেই ক্ষত ঢাকার জন্যই নাকি তিনি এই গয়নাটি পরতেন। তারপরেও, রাজকন্যা আলেকজান্দ্রা চোকারকে এতটাই জনপ্রিয় করে তোলেন যে এটি সবার জন্য একটা আরাধ্য বস্তু হয়ে যায়, বিশেষ করে ভিক্টোরিয়ান সমাজের বিত্তবান নারীদের মধ্যে। বেশ কিছু চোকার গয়নার সঙ্গে দামী ধাতু ও পাথর সংযুক্ত করা থাকতো।

চোকার পরার ধারাটি ১৮শ শতাব্দী পেরিয়ে ১৯ শতকেও পৌঁছে যায়। লেখকরাও তাদের চরিত্রগুলোকে আরও আকর্ষণীয়রূপে উপস্থাপন করার জন্য এই গয়নাকে ব্যবহার করেছেন, যেমন গ্রেট গ্যাটসবি'র ডেইজি বুকানান চরিত্রটি।

৪০ ও ৫০ এর দশকের শেষের দিকে চোকারের পুনরাগমন ঘটে সম্পূর্ণ নতুন ভাবে। এবার সেটি পোষা কুকুরের 'কলারের' আকার ধারণ করে! এই সময়ে চোকার তৈরির উপকরণ হিসেবে লেইস, রিবন, মুক্তা, এমনকি হিরেও ব্যবহৃত হতে শুরু করে।

কিছুদিনের জন্য এই ফ্যাশনটি হারিয়ে গেলেও ৯০ এর দশকের শেষের দিকে আবারও চোকার আলোচনায় আসে। তারকারা বিভিন্ন ধরণের চোকার পরতে শুরু করেন, যার মধ্যে কুখ্যাত ট্যাটু চোকার অন্যতম।

যেহেতু ২০২০-২১ এ এসে আবারও ৯০ এর দশকের বিখ্যাত ধারাগুলো ফিরে আসছে, এ বছরও চারপাশে চোকারের বহুল ব্যবহার দেখা যাচ্ছে। আজকের দিনে চোকার খুবই চমকপ্রদ একটি গয়না, যাতে একই সঙ্গে উপকরণ, রঙ ও বিভিন্ন প্রকাশভঙ্গীর সমন্বয় ঘটেছে। এ চোকারগুলো সাধারণ নেকলেসের সঙ্গে পরা হচ্ছে। এমন কী কেউ কেউ প্রথাগত বড় আকারের গয়নার সঙ্গেও চোকার পরছেন।

ফ্যাশনপণ্যগুলো অনেক ক্ষেত্রেই বিভিন্ন সময়কালে আমাদের মাঝে ফিরে আস। কোনো কোনো পণ্য আবার কালের আবর্তে হারিয়ে যায় এবং অন্যগুলো আমাদের সবার সঙ্গে নতুন যুগে প্রবেশ করে। চোকারের একটি রাজসিক ইতিহাস রয়েছে এবং এটি প্রায় ৬০০ থেকে ৭০০ বছর ধরে টিকে আছে, যা আবারও প্রমাণ করেছে এটি একটি স্থায়ী ফ্যাশন পণ্য এবং সংগ্রহে রাখার মতো গয়না।

 

ছবি: সাজ্জাদ ইবনে সাঈদ

মডেল: অন্তরা

স্টাইলিং: সোনিয়া ইয়াসমিন ইশা

মেকআপ: সুমন

Comments

The Daily Star  | English

Army now has public trust as it stands by the people: PM

Prime Minister Sheikh Hasina today said the country's army has earned public trust and confidence by standing beside the people

38m ago