‘মোর টাকা নাই পইসা নাই, জংলি কচু আন্দিয়া খাং’

কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের পশ্চিম দেবোত্তর মাঝাপাড়া গ্রামের হাজেরা বেওয়া। ছবি: এস দিলীপ রায়

কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের পশ্চিম দেবোত্তর মাঝাপাড়া গ্রামের হাজেরা বেওয়া (৬৭)। বৃহস্পতিবার সকালে সরিষাবাড়ি সড়কের দু'পাশে জন্মানো জংলি কচু তুলছিলেন তিনি। এগুলো বাড়িতে নিয়ে রান্না করে খাবেন।

রাস্তার পাশ থেকে কচু তোলার সময় দ্য ডেইলি স্টারের সংবাদদাতার সঙ্গে কথা বলেন হাজেরা বেওয়া। তিনি বলেন, 'হামরা আর কত গরিব হমো। হামরাগুলা এমনিতেই গরিব।'

সাধারণ জংলি কচু কেউ খান না। কারণ এগুলোতে গলা ধরে। তবে, হাজেরা বেওয়া কেন তুলছেন সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'মোর যদি টাকা থাকিল হয়, তাক হইলে কি আর মুই এইল্যা কচু তোলোং। মোর টাকা নাই পইসা নাই। হাট থাকি তরকারি কিনার শক্তি নাই। জংলি কচু আন্দিয়া খাং।'

রাস্তার ধারে জন্মানো জংলি কচু তুলছেন হাজেরা বেওয়া। ছবি: এস দিলীপ রায়

এক যুগ আগে স্বামী মোহাম্মদ আলীকে হারিয়েছেন এই নারী। সংসারে তার একটি সন্তান আছে। কিন্তু, দিনমজুরির আয়ে নিজের সংসার চালাতে হিমশিম অবস্থা ছেলে নবীরের। তাই, সহায় সম্বলহীন হাজেরাকে অন্যের জমিতে ঘরে তুলে থাকতে হচ্ছে। গত ৩ বছর ধরে সরকারি বয়স্ক ভাতা পাচ্ছেন তিনি।

হাজেরা বেওয়া দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তার শরীরে অসুখ। অন্যের বাড়িতে সাহায্যের জন্য বের হতে পারছেন না। বের হলেও বেশি দূর হাঁটতে পারছেন না। তাই আয়ও বন্ধ আছে তার। বাধ্য হয়েই জীবন বাঁচাতে জংলি কচু তুলতে হচ্ছে।

'জংলি কচু খায়া মোর অভ্যাস হয়া গ্যাইছে। এ্যালা আর মোর গলাত ধরে না। কতদিন থাকি মাছ আর গোশত খাং না তার কোনো হিসাব নাই। মাছ আর গোশত ক্যামন খাবার ইচ্ছা না হয়, খাবার ইচ্ছা হয় কিন্তু কোনটে কোনা পাইম, কাই মোক দিবে,' যোগ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'স্বামী বাঁচি থাইকতে হামরা মাছ গোশত খাইছং।'

হাজেরা বেওয়ার ছেলে নবীর হোসেন জানান, তিনি দিনমজুরি করে যা আয় করেন তা দিয়ে তার সংসারও ঠিকমতো চলছে না। জিনিসপত্রের দাম এতো বেশি হয়েছে তাতে তাকেও মাঝে মাঝে উপোষ থাকতে হয়। গ্রামের অন্য কেউ জংলি কচু না খেলে তারা খেয়ে আসছেন। আর এ অবস্থায় জংলি কচু খেতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।

নবীর বলেন, 'হামরাগুলা গরিব মানুষ। নিরুপায় হয়া গ্যাছি। এমনিতে হামরা গরিব আর জিনিসপাতির দাম বারি যাওয়ায় হামরা আরও করি গরীব হবান নাগছি।'

এই গ্রামের বাসিন্দা শেহের আলী বলেন, 'হাজেরাকে প্রায়ই রাস্তার ধারে জংলি কচু কাটতে দেখা যায়। এসব কচু রান্না করে খান তিনি। অভাবের কারণে হাজেরা জংলি কচু তুলে নিয়ে রান্না করে খান। তাদের অভাবের দিন চলছে। কিন্তু, কারো অভাব প্রকাশ পাচ্ছে, কারোটা প্রকাশ পাচ্ছে না।'

Comments

The Daily Star  | English

Pakistan minister denies nuclear body meeting after offensive launched on India

Pakistan's military said earlier that the prime minister had called on the authority to meet. The information minister did not respond immediately to a request for comment.

1h ago